দাবানল এবং ... শিরোনামে শুরু করলাম গল্প। প্রথমবার। পর্ব -3
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
[সোর্স](Meta AI)


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
দাবানল এবং ...
কিভাবে যেন দু'দিন কেটে গেছে। ঘরটা যেন আগের চেয়ে বেশি নিস্তব্ধ। খেয়ালীর মাথা আজ আর ভারী লাগছে না, শুধু ভেতরে ভেতরে একটা থমথমে খালি জায়গা।
প্রতিদিনের মতোই সকালে ছেলেমেয়েরা মায়ের কাছে পড়তে এসেছে৷ গাছে ফুল ফুটেছে, ঝুমাদি ঘর মোছার অছিলায় কি যেন দেখতেই থাকে। খেয়ালী জানালার ধারে দাঁড়িয়ে গাছের পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। পাতা নড়ছে, বাতাস বইছে, কিন্তু তার নিজস্ব সময় যেন থেমে আছে । কি করবে? এতোদিন ধরে সকালের ব্যস্ততা হঠাৎ থিতিয়ে গেছে। আলমারি খুলে শাড়ি বের করার নেই, কিংবা স্নানের তাড়া নেই।
হঠাৎ করে একটা পুরোনো খাতা খেয়ালীর চোখে পড়ে। কলেজ জীবনের সময়ের—যেখানে স্বপ্নের মতো করে লেখা ছিল কবিতা, প্রবন্ধ, দু–একটা অসমাপ্ত নাটকের স্ক্রিপ্ট। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ থমকে যায় সে। একটা লেখা—
"আমরা কেউ হারি না, কেউ জিতে যাই না, শুধু সময়ে এক একটা মোড় নেই—যেখানে পুরনো আমি’কে ফেলে রেখে এগিয়ে যাই।"
এক মুহূর্তের জন্য চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সেই মেয়েটাকে মনে পড়ে—যে নীলচে শাড়িতে ডিবেট প্রতিযোগিতায় উঠেছিল, যে ঘরে ফিরে মাকে বলেছিল, "আজ আমি সেরা বক্তা হলাম মা!" বাপী খুশি হয়ে বলেছিল "আয় এক সাথে চা খাই, তোর যুক্তিতর্কের খানিকটা আমিও শুনি"—সে কোথায়?
উফফফ বাপী আজ তোমায় বড় দরকার। — মনের ভেতর হাজার কথার আনাগোনা ঘটতে থাকে। এমন সময়
দরজার ঘণ্টা বাজে। সমীরণ এলো! দৌড়ে দরজা খুলতে যায়, নাহ, খবরের কাগজ দিয়ে গেল।
জমায়েত আছে। ধর্ণা বসবে। অনেকের ফোন আসছে, আন্দোলনে যোগ দিলে হয়তো কিছু হবে। কিন্তু খেয়ালীর মন মানে না৷ ডাইরির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে চোখে পড়ে প্রফেসর বোসের লিখে দেওয়া কয়েকটা কথা।
প্রফেসর বোস খেয়ালীকে খুব পছন্দ করতেন৷ পছন্দ করার মতোই ছিল সে। তবে অন্য কোন ইঙ্গিত না দিয়ে পড়াশুনোতেই বেশি জোর দিতে বলতেন৷ সমীরণের সাথে সম্পর্কটা সকলেই জানত, তবুও প্রফেসর বোস পড়াশুনো এগিয়ে নিয়ে যেতে বলতেন। ইউনিভার্সিটির শেষ দিন এই ডাইরিতে লিখে দিয়েছিলেন—
"লড়াই করো খেয়ালী, কারণ তুমি পারো। থেমে যেতে নেই৷ থেমে যাওয়া সহজ। তুমি তো বাকিদের মতো নয়—তোমার মধ্যে যে আগুনটা আছে, সেটা হেলায় নেভালে আমি তোমায় কোনোদিন ক্ষমা করব না। সমীরণ, ভালোবাসা, প্রত্যাশা সবই থাকবে। কিন্তু তুমি থেমে যেও না..."
লেখাগুলোয় হাত বোলাতে বোলাতে বুক ভারী হয়ে আসে৷ একবার ফোন করবে? বহু বছর হয়ে গেল। উনি চিনতে পারবেন? সেই দিনগুলোতে ওনার কথা শুনে যদি পি এইচ ডি র জন্য এগিয়ে যেতাম। বিদেশ না হোক এখানেই কোথাও, আজ এই দিনটা... আজ আর এতো কিছু মনে করতে চায় না৷ সময় যেন সত্যিই বড় কঠিন।
হঠাৎই ফোনটা আবার বাজে। দিদি।
— খেয়াল, অনেকদিন পর মন খুলে কথা বলবি তো একটু?
— হ্যাঁ দিদি, বল।
— আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি সবাই। তোদের ব্যাচের সোমাও এসেছে আজ। তুই আসবি?
খেয়ালী চুপ করে থাকে।
— তোর না সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে গলা তোলার জেদ ছিল? এখন কেমন চুপচাপ হয়ে গেছিস রে!
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে খেয়ালী বলে,
— জানি না দিদি। সব যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। নিজের জায়গাটাও বুঝতে পারছি না এখন।
— তাহলে খুঁজে বের কর। ভেতরে ভেতরে তুই যতই ভেঙে পড়িস, তোকে তো কেউ ছাড় দেবে না রে। নিজের জন্যই দাঁড়াতে হবে, তুইই তো আমায় বোঝাতিস খেয়াল। নিজে এভাবে গুটিয়ে গেলে কি করে চলবে বল?
— দিদি তোর অফিসে কোন কাজ খালি আছে?
— বোনি, এতো ভাবিস না। তুই কি নতুন একটা চাকরি পাবি না ভাবছিস? নিজের মার্ক শিটগুলো খুলে দেখ তো।
কিছু বলে না আর, ফোনটা রেখে দেয়। বাম হাতের তালুটা মুঠো করে। মনে পড়ে সেই পুরোনো দিনের কথা—প্রথম বিতর্ক প্রতিযোগিতার দিন, হাত কাঁপছিল, কিন্তু চোখে ছিল জেদ। আজও সেই জেদটাই কি খুঁজে পাওয়া যায় না?
সকাল ফুরিয়ে যায়, খিদেও পায় শরীরের নিয়ম মেনে তারপর ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসে। বাতাসে গন্ধ আছে—অজানা কিন্তু খুব চেনা। হয়তো গাছের, হয়তো মাটির। হয়তো...
ডাইনিং টেবিলের ওপরে রাখা চিঠিটার দিকে তাকায় সে—চাকরিচ্যুতির আনুষ্ঠানিক চিঠি। খেয়ালী এবার সেটার পাশে একটা সাদা কাগজ রাখে। কলম তোলে।
লিখতে শুরু করে— "প্রিয় অধ্যাপক বোস,
আপনার কথাগুলো কি আজও সত্যি? আমি জানি না। কিন্তু একটা নতুন খোঁজে নামতে চাই। আপনি যদি থাকতেন…"
কাগজের গায়ে আঁচড় কাটতে কাটতে খেয়ালীর চোখে এবার জল আসে না। কোথা থেকে যেন সাহস জোগাড় হচ্ছে।
মুখ ফিরিয়ে মা’কে বলে,
— মা, কাল একটা জায়গায় যাব। এক পুরনো বন্ধু ডেকেছে, লেখালিখির কিছু প্রজেক্ট আছে। দেখি কেমন হয়।
মা তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর বলে,
— যা রে খেয়াল। আবার শুরু কর। তোর ভেতরের আলোটা কেউ নিভিয়ে দিতে পারবে না।

পোস্টের ধরণ | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
https://x.com/neelamsama92551/status/1915012281542303973?t=EksPnkCwqaaCmc6AfPiSYw&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1915013090229313638?t=s-wDMFa-kLxw2P4e4Rm8nA&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1915013825515974944?t=xkYSe_1VEldtlbj6QVyosg&s=19
https://x.com/neelamsama92551/status/1915014436521148480?t=67Y90fexIL6BsWKifgHWIQ&s=19