একটি বড় ধরণের ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার গল্প।
"হ্যালো বন্ধুরা"
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সকল সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?পরম করুণাময় ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি।
আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি পোস্টের ভিন্নতা আনার।তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নতুন একটি পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করছি আশাকরি আমার আজকের পোস্ট টি আপনাদের ভালো লাগবে!
একটি দুর্ঘটনা আপনার জীবন থেকে কেড়ে নিবে আপনার পরিবার, আপনার ধনসম্পদ এবং সবকিছু।
হয়তো পরম করুনাময় ঈশ্বর আমাদের সহায় ছিল তাই অনেক বড় একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে আমরা বেঁচে গেছিলাম।সেদিনের ঘটনাটি মনে পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।এটা ভাবতেই ভয় লাগে সেদিন অনেক কিছু ঘটে যেতে পারতো!কি থেকে কি হত বা কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হতাম তার কোনো ঠিক ছিলো না।
অনেক কাপড় পুড়ে গেছিলো সবগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এগুলোই একটু আস্ত ছিলো।😭
আমার একমাত্র ননদের মেয়ে পিংকি।সে আমাকে খুবই ভালোবাসে এবং আমার বাসায় ঘুরতে আসতে খুব বেশি পছন্দ করে।তাই বছরে ১ বার হলেও সে তার স্বামী সন্তানকে নিয়ে আমার বাসায় ঘুরতে আসে।এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।রমজান মাসে ওর হাজবেন্ডের স্কুল ছুটি হওয়ার কারণে ওরা তিনজন মিলে আমাদের বাসায় ঘুরতে আসে,ঈদের কয়েকদিন আমার এখানে থাকবে বলে।আমরাও শুনে খুশি হলাম কারণ ওরা আসলে আমাদের বেশ ভালো লাগে।ঈদের দুই দিন আগে আমার বাসায় আসলো তারপরে আমরা বেশ ঘোড়াঘুরি ভালো ভালো খাবার দাবার।নতুন নতুন জায়গায় ঘোরা আর বাকি সময় বাসায় আড্ডা দিয়েই সময় গুলো বেশ উপভোগ্য ছিলো।
সকালের খাবার খেয়ে আমরা সবাই মিলে ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছিলাম।এরমধ্যে পিংকির ছেলে ওর নাম কর্ণ বয়স পাঁচ বছর।হঠাৎ করেই কর্ণ আমাদের ওখান থেকে উঠে রান্নাঘর থেকে মোমবাতি ও ম্যাচ নিয়ে ভিতরের রুমে চলে আসে।এই বিষয়টা আমরা কেউ খেয়াল করিনি মেয়েরা গান গাচ্ছিলো আর আমরা সবাই বসে গল্প করছিলাম।আমাদের কারো হুঁশ ছিলো না যে কর্ণ কোথায়?অনেকক্ষণ ওর কোনো সাড়াশব্দ ছিলো না আমরা এদিকে গল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।হঠাৎ করে আমার বড় মেয়ে আমার বেডরুমে আসে এসে কি যেনো নিচ্ছিল আর বলছিলো কোথায় থেকে যেনো বারুদের গন্ধ আসছে!আমরা বিষয়টাকে খুব একটা আমলে নেইনি,তার কারণ তখন পর্যন্ত আমাদের নাকে কোনো বারুদ বা আগুনের গন্ধ আসছিলো না।
বড় মেয়ে বিছানায় বসে ফোন দেখছিলো।কিছুক্ষণ পর ওর নাকে যখন খুব কড়াভাবে আগুনের গন্ধ আসে তখন ও বিষয়টিকে গুরুতর ভাবে নেয় এবং চারদিকে খুঁজতে থাকে কোথায় থেকে আগুনের গন্ধ আসছে?খুঁজতে খুঁজতে ও ওদের বেডরুমে চলে যায় গিয়ে রুমেও কিছু দেখতে পায় না কিন্তু প্রচন্ড আগুনের গন্ধ পাচ্ছিলো।বেলকনির দরজাটা চাপানো ছিলো ও হাত দিয়ে সরাতেই ওর চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে ওঠে!বেলকনিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিলো কিন্তু ওখানে কর্ণবাবু ছিলো না।ও আগুন ধরিয়ে দিয়ে চুপচাপ বেলকনির দরজা চাপিয়ে দিয়ে আমাদের আড্ডার মাঝে এসে বসে পড়েছিলো।আগুন দেখেই তো বড় মেয়ে চিৎকার শুরু করে দিয়েছে!ওর চিৎকার শুনে আমরা সকলে দৌড়ে রুমের ভিতরে গিয়ে দেখি পুরো বেলকনির কাপড় আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।সবাই যে যার মতো করে বালতি মগে করে জল নিয়ে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলাম।বেশ কিছুক্ষণ পর আমরা আগুন নেভাতে সক্ষম হই।
বেলকনিতে মোটামুটি বেশ ভালো কাপড় ছিলো সবগুলো কাপড় পুড়ে যায়।এটাতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু আমরা খুব বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছি।আমার ইন্টারনেটের অনেকগুলো তার ডিশের তার সবগুলো বেলকুনিতে রাখা ছিলো।তার পাশেই রুমের ভিতেরে মেয়ের পড়ার টেবিলে ইন্টারনেটের সবকিছু রাখা ছিলো।কয়েকদিন আগেই আমি ভাবলাম পড়ার টেবিলে এগুলো রাখা ঠিক না। তাই ইন্টারনেটের লোকদেরকে ডেকে এনে লাইনটা ঘুরিয়ে আমি ডাইনিং রুমে ওয়াল ছিদ্র করে রাউটার ওয়ালের সাথে সেট করে নেই। এতে করে আমার ২০০০ টাকা খরচ করতে হয়েছিলো।শুধুমাত্র মেয়েদের মঙ্গলের জন্য এই কাজটা আমি করেছিলাম।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিলো মেয়েদের পড়ার টেবিলে এগুলো রাখাতে মেয়েদের শরীরের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে।আর এই ভাবনাটাই আমাদেরকে অনেক বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিলো।আমি প্রায় সময় নিজের ভাবনা গুলোকে যদি প্রাধান্য দেই তাহলে পরে দেখি অনেক বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাই এটা আমি অনেক ক্ষেত্রেই প্রমাণিত।
এতো বেশি ইন্টারনেট ও ডিশের তার কেনা হয়েছিলো যা সবগুলো গুছিয়ে বেলকনিতে উপরের দিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে রাখা হয়েছিলো।সেদিনের কাপড়ের আগুন যদি সেই তারে লাগতো তাহলে হয়তো বা অনেক বড় ক্ষতিগ্রস্ত হতাম!আর সে ক্ষতি কতোটা বেশি ভয়াবহ হতো তা ভাবলেও এখন আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।পিংকির ছেলেটা মাঝে মাঝে এরকম কিছু দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে যা খুবই ভয়াবহ।এইতো কদিন আগেই ওর ঠাঁকুমাকে ফেলে দিয়ে আহত করে। এতোটাই বেশি আহত হয় যে ওনার পায়ে অপারেশন করতে হয় ছয় মাস যাবত বিছানায় শুয়ে কাটাতে হয়।সেই সাথে ওর বাবাকে প্রায় লাখ তিনেক টাকার মতো খরচ করতে হয়!কিছু কিছু বাচ্চা আছে দেখতে খুব ভদ্র শান্ত অথচ এমন এমন কাজ করে ফেলে যা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।কর্ণ কে দেখলে কেউ বুঝবে না যে ও এতোটা দুষ্টু প্রকৃতির বাচ্চা!সব সময় চুপচাপ শান্তশিষ্ট হয়ে থাকবে কিন্তু চোখের আড়াল হলেই অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে যা সামলানো অনেক বেশি মুশকিল হয়ে পড়ে।
ঈশ্বরের অশেষ কৃপা ছিলো তাই হয়তোবা আমরা সবাই ঐদিন অনেক বড় ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছিলাম।ওর নিজের যে কোনে ক্ষতি হয়নি ওর গায়ে আগুন লেগে গিয়ে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো আসলে আমি ভেবে পাচ্ছিনা কি কি ঘটতে পারতো।ভাবতেই ভয় লাগে!ঈশ্বর সহায় ছিলো তাই অল্পের উপর দিয়ে বেঁচে গেছিলাম।এজন্যই মানুষ বলে একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।এই ধরনের দুর্ঘটনাগুলো এড়ানোর একটাই মাত্র উপায় হচ্ছে যতোদিন এই বাচ্চা গুলো বড় না হয় ততোদিন এই বাচ্চা গুলোকে খুবই সতর্কতার সহিত চোখে চোখে রাখতে হবে।যাতে করে এক নিমেষেই কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে না ফেলে।
"ধন্যবাদ"
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার এই পোস্টটি পড়ার পর সত্যি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। এত বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে আপনি ও আপনার পরিবার যে অল্পের উপর দিয়ে বেঁচে গেলেন, সেটা যেন এক অলৌকিক রক্ষা। ঈশ্বরের কৃপা সত্যিই আপনার উপর ছিল। শিশুরা যে কতটা কৌতূহলী ও ঝুঁকিপূর্ণ কিছু করে ফেলতে পারে, এই ঘটনাটা তার জ্যান্ত প্রমাণ। আপনি যেভাবে নিজের সতর্কতা এবং পূর্ব প্রস্তুতির কথা বললেন, সেটা আমাদের সবার জন্য শিক্ষণীয়। বিশেষ করে, ইন্টারনেটের তার সরিয়ে নেওয়ার যে সিদ্ধান্তটা আপনি আগে নিয়েছিলেন, সেটা কতটা কার্যকর হয়েছে তা এখন বোঝা গেলো। ধন্যবাদ দিদি এমন বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।