রিলস আসক্তি

আমি @arpita007 বাংলাদেশ থেকে। কেমন আছেন সকল বাংলাদেশী এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু -বান্ধবীগণ? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজকে ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে আবার নতুন একটি ব্লগ নিয়ে ।

সোর্স

বর্তমান ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব আমাদের জীবনের প্রায় সব দিকেই বিস্তৃত হয়েছে। প্রযুক্তির এই উন্নতির ফলে মানুষের তথ্য গ্রহণ ও বিনোদনের ধরন বদলে গেছে। বিশেষ করে "রিলস" নামক স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও কনটেন্ট এখন কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই বিনোদনের মাধ্যমটি ধীরে ধীরে অনেকের জন্য এক ধরনের আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে, যা ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং মানসিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

রিলস হলো এমন একটি ভিডিও কনটেন্ট যা সাধারণত ১৫ থেকে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টিকটক ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়। ছোট ছোট আকর্ষণীয় ভিডিও সহজেই মানুষের মনোযোগ কেড়ে নেয়। মানুষ একবার একটি রিল দেখলে আরেকটি দেখার জন্য প্রলুব্ধ হয় এবং এইভাবেই একটার পর একটা ভিডিও দেখে সময় কাটিয়ে দেয়। এই আচরণটি ধীরে ধীরে নেশায় পরিণত হয়, যাকে রিলস আসক্তি বলা হয়।

এই আসক্তির কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। পড়াশোনা, কাজ কিংবা দৈনন্দিন কার্যক্রমের ফাঁকে কয়েক মিনিটের রিলস দেখার উদ্দেশ্যে মোবাইল হাতে নিলেও অনেক সময় তা ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যায়। একপর্যায়ে এটি অভ্যাসে পরিণত হয়, যার ফলে মনোযোগ হ্রাস, একাগ্রতার অভাব, ঘুমের ব্যাঘাত, এবং মানসিক উদ্বেগের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

রিলস আসক্তির আরেকটি বড় নেতিবাচক দিক হলো বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্নতা। অনেক তরুণ-তরুণী দিনের অধিকাংশ সময় মোবাইল স্ক্রিনে ডুবে থাকে, ফলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো বিষয়গুলো থেকে তারা বঞ্চিত হয়। এমনকি কেউ কেউ বাস্তব জীবনের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতে নিজেদের বেশি মানিয়ে নিতে শুরু করে, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক সম্পর্কের অবক্ষয় ঘটায়।

রিলসের মধ্যে অনেক সময় গ্ল্যামারাইজড জীবনযাত্রা, অবাস্তব সৌন্দর্যের মানদণ্ড ও আর্থিক সফলতার প্রদর্শনী থাকে। এসব দেখে অনেকেই নিজেদের জীবন নিয়ে হতাশ বোধ করে। তুলনামূলক মনোভাব জন্ম নেয়, আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। অনেক সময় এই ধরনের ভিডিওতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও নেতিবাচক বার্তা থাকে, যা কিশোর-কিশোরীদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করে।

তবে বিষয়টি একেবারে নেতিবাচকও নয়। সঠিকভাবে রিলস ব্যবহার করলে তা একটি সৃজনশীল মাধ্যম হিসেবেও কাজ করতে পারে। অনেক মানুষ তাদের প্রতিভা, জ্ঞান কিংবা ব্যবসার প্রচারের জন্য রিলস ব্যবহার করছে এবং সফলও হচ্ছে। মূল সমস্যা দেখা দেয় যখন এই মাধ্যমটির ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়ে এবং তা মানুষের বাস্তব জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়।

রিলস আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। নিজের সময়ের সঠিক ব্যবহার, একটি নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা, বিকল্প বিনোদনের উৎস যেমন পড়াশোনা, খেলাধুলা, বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক এবং সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে এই আসক্তি থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য।

রিলস বিনোদনের একটি আধুনিক মাধ্যম হলেও তার প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা বা আসক্তি মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই সময় থাকতে এর অপব্যবহার রোধ করতে হবে এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনে মনোযোগী হতে হবে। শুধুমাত্র সচেতন ব্যবহারই পারে এই আসক্তি থেকে মুক্তি এনে দিতে এবং প্রযুক্তিকে একটি ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে।

আমি অর্পিতা নওশিন তিশা। আমি বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার শখের মধ্যে রান্না করতে ভালোবাসি এবং গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসি । তাছাড়া অবসর সময়ে ছবি আঁকতে,গান শুনতে এবং বিভিন্ন ধরনের কমেডি, থ্রিলার, হরর মুভি দেখতে পছন্দ করি। এছাড়াও হিন্দি ডাবিং করা নাটকগুলো দেখতে পছন্দ করি।