ডুয়েট এডমিশন যুদ্ধ!
11-08-2025
২৭ শ্রাবণ , ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন। তো বর্তমান সময়ে ভালো থাকাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি ভালো না থাকলে আপনার কোনো কাজই করতে পারবেন না। তাই সবার আগে নিজের ভালো থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ এ কয়েকদিনে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে বুঝতে পেরেছি আসলে সুস্থ্যতা আল্লাহ তায়ালার কত বড় নেয়ামত। হসপিটালের বেডে কত রকমের রোগী শুয়ে আছে। একেকজনের শরীরে একেক রকমের রোগ! হসপিটালে না গেলে হয়তো বুঝতেও পারতাম না! এজন্যই গুণী ব্যক্তিরা বলে গেছেন আপনি যদি এক সপ্তাহের মর্ম বুঝতে চান তাহলে হসপিটালে যান! সেজন্য নিজের খেয়াল রাখাটা জরুরি। আমার বাবা অসুস্থ থাকার কারণে হসপিটালে কয়েকদিন খুব দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। মেসে থেকে ডিরেক্ট চলে গিয়েছিলাম ঢাকা। এরই মাঝে ছোটভাইদের ভর্তি পরীক্ষা। কয়েকজন ছোট ভাইকে পড়াতাম। তারা আমাকে আগেই বলে দিয়েছিল পরীক্ষায় যেন তাদেরকে নিয়ে যায়। কিছুটা সাহস পাবে।
যাদের স্নপ্ন পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার তারা কিন্তু সেটা আগে থেকেই স্থির রাখতে হয়। লক্ষ্য স্থির না করে পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া অসম্ভব। অনেক মেধাবী স্টুডেন্টরাও এ জায়গাটায় এসে হার মেনে যায়। তবে যাদের মাঝে পরিশ্রম করার স্পৃহা আছে তারাই কেবল এডমিশন যুদ্ধে সফল হয়। ঠিক এক বছর আগে আমিও একজন এডমিশন যোদ্ধা ছিলাম। এডমিশনের সময়টা আসলে বেশ ইন্টারেস্টিং! আমার মনে হয় জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। কারণ পড়া ছাড়া আপনার মাথায় কোনো চিন্তা থাকে না। আর যদি থাকে তাহলে আপনার দ্বারা এডমিশন যুদ্ধে সফল হওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে সুখের সাথে কিন্তু দুঃখেরও বটে! মনের ভিতরে একটা চিন্তা সবসময় কাজ করে। যদি চান্স না পায়! আর তখনই ঘুম থেকে উঠি পরি। আবার পড়া শুরু! এডমিশন যোদ্ধাদের সময়গুলো এভাবেই কাটে। কতো রাত কেটে যায় বইয়ের পাতায়, চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে কোমড় ব্যথা হয়ে যায়। তবে লক্ষ্য একটাই এডমিশন যুদ্ধে সফল হতে হবে।
ডুয়েট (ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর) যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে থাকে। ডুয়েট স্পেশালি ডিপ্লোমা স্টুডেন্টদের জন্য। যারা টেকনিক্যাল থেকে পড়াশোনা করে আসে শুধু তারাই এখানে পরীক্ষা দিয়ে থাকে। সেদিক দিয়ে ডুয়েট অন্যান্য পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে আলাদা। বাংলাদেশের অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিগুলাতে সাধারণ এইস এস সি বা সমমান শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। সেখানে নরমলামি নন ডিপার্টমেন্ট রিলেটেড প্রশ্নের উপর পরীক্ষা হয়ে থাকে। তবে ডুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রসেসটা টোটালি ভিন্ন। এখানে আপনাকে নন-ডিপার্টমেন্ট এর পাশাপাশি ডিপার্টমেন্ট এর সাবজেক্ট এর উপরও প্রশ্ন হয়ে থাকে। যেমন ধরেন আপনি সিএসই( কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) এ পরীক্ষা দিবেন ; তাহলে আপনাকে এ সাবজেক্ট এর উপর ডিপার্টমেন্ট প্রশ্নও থাকবে। পাশাপাশি নন-ডিপার্টমেন্ট (ফিজিক্স,ম্যাথ,কেমিস্ট্রি) এইস এস সি লেভেলের সেখান থেকেও প্রশ্ন থাকবে।
প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আমি ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন ছাত্র। আমি যাদেরকে পড়িয়েছি তারাও এই আন্ডাগ্র্যাডুয়েট প্রোগ্রামের উপর পরীক্ষা দিবে। তো ইইই এর পরীক্ষা ছিল ইভেনিং শিফটে মানে বিকালে! আমি ঢাকা থেকে আসতে আসতে প্রায় দেড়টা বেজে যায়। ছোটভাইদের পরীক্ষা ছিল বিকাল দুইটায়! তখন ওরা হলের ভিতরে! পরীক্ষা হবে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট! ইইই তে এবার আবেদন করেছিল ১৭৫৩ জন প্রায়! যা আমাদের সময় আরও বেশি ছিল। তবে তাদের জন্য সিট বরাদ্দ ১২০ টা। তার মানে একটা সিটের জন্য ১৪ জন লড়াই করবে! ভার্সিটির বাহিরে অনেক কোচিং তাদের প্রচারণা করছিল। আমি যেহেতু আর পি আর কোচিং এ পড়াশোনা করেছিলাম তাই সেখানে কিছুক্ষণ বসে কথা বললাম!। বিকাল ৪ টা ৩০ বাজতেই ভিতরে চলে গেলাম। তখনই ক্যাম্পাসের ভিতরের পরিবেশটা অন্যরকম হয়ে পরে। কেউ হেসে হেসে বের হয় আবার কেউবা কেঁদে কেঁদে! অনেকের কান্নার কারণটা হয় সুখের! কারণ পরীক্ষা হয়তো ভালো ভালো হয়েছে। আবার অনেকের কান্নার কারণটা হয় দুঃখের! তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।
তবে একটা পরীক্ষা দিয়ে জীবনটাকে ডিফাইন করা যায় না। জীবনটা ছোট। প্রতি পদে পদে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। ডুয়েটে যারা ব্যর্থ হয় তাদের জীবন কি থেমে থাকবে! কখনোই না। হয়তো তারাও জীবনে অনেক বড় হবে। সৃষ্টিকর্তা তাদের জন্যও যে উত্তম প্রতিদান লিখে রেখেছিলেন। এজন্য একটা পরীক্ষার মাধ্যমে জীবনের ফলাফলটা নির্ধারণ করা যায়। যারা জয়ী হয় তারা শুধুমাত্র জীবনের একটি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। তবে তাদেরকেও কিন্তু পরিশ্রম করে যেতে হয়। নয়তো জীবনের পথচলাটা সহজ হয় না, অনেকটা কণ্টকাকীর্ণ হয়ে পরে।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | DUET, Gazipur |
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি করছি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় (ডুয়েট) থেকে । পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত চার বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
জীবন মানে প্রতিনিয়ত পরীক্ষার যুদ্ধ। একটা পরীক্ষা দিয়ে পাস করা কারো ভাগ্যে ভালো আবার কারো অনেকবার দিতে হয়।
এভাবে এগিয়ে যান আশা করি একদিন না একদিন সফল হবেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।