বোর্ড পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ন করবার অভিজ্ঞতা।
ক্লাস টেন বোর্ডের কপি চেকিং এর অভিজ্ঞতা
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা একজন শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই হয় এবং তাদের শেখার অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সম্প্রতি আমি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ক্লাস টেনের বোর্ড খাতা মূল্যায়নের কাজে অংশ নিয়েছি, যেখানে আমাদের আটজনের একটি দল প্রতিদিন গড়ে ২৫টি করে খাতা চেক করছি। এই অভিজ্ঞতা ছিল ক্লান্তিকর, তবে শিক্ষণীয় ও চিন্তার খোরাক জোগানোর মতো।
প্রথম দিন থেকেই আমাদের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়েছে। প্রতিটি খাতার নম্বর নির্ধারণের জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলতে হয়েছে, যাতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায়। প্রশ্নের উত্তরগুলোর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বুঝলাম, শিক্ষার্থীদের অনেকেই মৌলিক ধারণাগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করেছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে তাদের উত্তর একঘেয়ে বা বইয়ের ভাষায় বাঁধা। এটি আমাকে ভাবিয়েছে যে, ভবিষ্যতে পাঠদানের পদ্ধতিতে আরও উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগ করা দরকার, যাতে তারা উত্তর লেখার সময় নিজেদের ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারে।
খাতা মূল্যায়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। আমরা যেহেতু একটি দল হিসেবে কাজ করছিলাম, তাই আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল কিভাবে নম্বর দেওয়া উচিত। কেউ খুব কড়াভাবে খাতা চেক করছিল, আবার কেউ নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করছিল। তবে, সবার উদ্দেশ্য একটাই—ন্যায্য মূল্যায়ন নিশ্চিত করা। আমাদের প্রতিটি শিক্ষকই চেয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে, যাতে কেউ বঞ্চিত না হয় এবং কারও প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতি দেখানো না হয়।
খাতা মূল্যায়নের এই কাজ শুধু শিক্ষার্থীদের শেখার মান বোঝার জন্য নয়, বরং আমাদের নিজেদের জন্যও একটি শিক্ষা। অনেক খাতায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করেছে, যা প্রশংসনীয়। আবার কিছু খাতায় অপ্রাসঙ্গিক বা অস্পষ্ট উত্তর ছিল, যা আমাদের ভাবিয়েছে যে, কোথায় তাদের আরও দিকনির্দেশনা দেওয়া দরকার।
প্রতিদিন ২৫টি খাতা মূল্যায়ন করা সহজ কাজ নয়। এটি ধৈর্য, মনোযোগ ও নিরপেক্ষ বিচারশক্তির দাবি রাখে। মাঝে মাঝে একঘেয়েমি কাজ করছিল, তবে সহকর্মীদের সাথে কাজ করার ফলে পরিবেশ কিছুটা হালকা ছিল। একসাথে কাজ করায় দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া সম্ভব হয়েছে এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগও পাওয়া গেছে। দীর্ঘসময় এক জায়গায় বসে খাতা দেখা কখনো কখনো কষ্টকর হয়ে উঠছিল, তবে শিক্ষার্থীদের উত্তর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নতুন নতুন বিষয় শেখার সুযোগ তৈরি হচ্ছিল।
এই ব্যস্ত সময়ের মাঝে আমাদের আরেকটি আনন্দের জায়গা ছিল প্রতিদিনের খাবারদাবার। দীর্ঘ সময় কাজের পর ভালো খাবার সত্যিই এক বিশ্রামের মুহূর্ত এনে দিত। আমরা সবাই মিলে দুপুরে মজার খাবার খেতাম, কখনো বাঙালি খাবারের স্বাদ উপভোগ করতাম, আবার কখনো বিশেষ কোনও রান্নার আয়োজন থাকত। সুস্বাদু খাবার শুধু আমাদের ক্লান্তি দূর করতো না, বরং আমাদের কাজের উদ্যমও বাড়িয়ে দিত।
এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে, শুধু পাঠদানই নয়, শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফল বিশ্লেষণ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ভবিষ্যতে, পাঠদানের সময় তাদেরকে উত্তর লেখার ক্ষেত্রে আরও গঠনমূলক নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করবো, যাতে তারা শুধুমাত্র মুখস্থ নয়, বরং বোঝার উপর ভিত্তি করে উত্তর লিখতে পারে। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি উত্তরের মধ্যে তাদের চিন্তাভাবনার প্রতিফলন থাকা উচিত, যা তাদের লেখার দক্ষতা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াবে।
খাতা মূল্যায়নের আরেকটি দিক হলো মানসিক ধৈর্য ও দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা। দীর্ঘসময় খাতা দেখা একপ্রকার ধৈর্যের খেলা। অনেক সময় একই ধরনের উত্তর বারবার পড়তে হয়, যা একঘেয়ে মনে হতে পারে। তবে শিক্ষার্থীদের চিন্তার বিভিন্নতা বোঝার চেষ্টা করলে একঘেয়েমি কেটে যায়।
সব মিলিয়ে, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে খাতা মূল্যায়নের এই অভিজ্ঞতা ক্লান্তিকর হলেও শিক্ষণীয় ছিল। এটি আমাকে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক—উভয়ের দৃষ্টিকোণ থেকেই নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। ভবিষ্যতে আমি এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের গাইড করতে পারব এবং তাদের শেখার অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে পারব।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1908212969822900447?t=1PsJ1oFxn1VxI2xGR2a9og&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/KausikChak1234/status/1908213357460820036?t=FJdCFDRkcTFHoOSwBuMxyw&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1908214005455335499?t=I8_6iqtUFpwsWGsqIaCv6g&s=19