কোন্নগরের শকুন্তলা কালীপুজোর মেলায় একটি মনভরা সন্ধ্যা
কোন্নগরের শকুন্তলা কালীপুজোর মেলায় একটি মনভরা সন্ধ্যা
এবছর কোন্নগরে অনুষ্ঠিত শকুন্তলা কালীপুজোর মেলার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূরদূরান্তে। সেই টানেই এক বিকেলে আমিও ছুটে গেলাম সেখানে, মেলার প্রাণস্পন্দন নিজের মধ্যে ধারণ করার আশায়।
মেলায় ঢুকতেই চোখে পড়ল রঙিন আলোকসজ্জা আর উৎসাহী মানুষের ভিড়। মাটির রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতেই কানে এলো মাইকে ভেসে আসা কীর্তনের সুমধুর সুর। চারপাশে অসংখ্য দোকানপাট — কোনোটি হাতের কাজের অলংকার নিয়ে বসেছে, কোনোটি মাটির বাসনপত্র, আবার কোথাও ছোট ছোট শিশুদের জন্য কাঠের খেলনা সাজানো। চোখ আটকে গেল এক দোকানে যেখানে বাহারি পটচিত্র বিক্রি হচ্ছিল, প্রত্যেকটি ছবিতে যেন ফুটে উঠেছিল বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য।
খাবারের স্টলের দিকে এগোতেই নাকে এল গরম ফুচকা আর ভাজার গন্ধ। একপাশে জিলিপির দোকানে লালচে রঙের জিলিপি পাক খেয়ে তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে মোয়া আর নারকেলের নাড়ুর সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর এক কাপ গরম চা হাতে নিয়ে দাঁড়ালাম। সামনে শিশুদের জন্য বসানো নাগরদোলা আর ছোট ছোট বিভিন্ন রাইড, যেখানে খুদেরা চিৎকার করে হাসছে আর আনন্দে লাফাচ্ছে। মেলার প্রাণ যেন ওদের মাঝেই ছড়িয়ে রয়েছে।
এই আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্যেই হঠাৎ দেখি আকাশের রঙ পাল্টাতে শুরু করেছে। পশ্চিমের দিগন্তে জমাট বাঁধতে শুরু করেছে ঘন কালো মেঘ। হালকা হাওয়ার দোলা তখনো মন ভালো করে দিচ্ছিল, কিন্তু বুঝতে পারলাম ঝড় আসতে বেশি দেরি নেই। মেলার আকাশের রঙ আর স্টলগুলির আলোর ছায়াপথ এক অদ্ভুত রহস্যময়তা সৃষ্টি করছিল। কিছু দোকানদার তখনই তাদের মালপত্র ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।
কিছুটা সময় পেয়েছিলাম দোকানঘুরে কিছু কেনাকাটার। হাতে তৈরি একটি পুঁতির মালা আর একটি ছোট পটচিত্র কিনে ফেললাম স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে। এরপরে বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা পড়তেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। মানুষ ছাতা খুলছে, কেউবা দোকানের ছাউনির নিচে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আমিও বাধ্য হয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসার পথ ধরলাম। মনে হল যেন আনন্দের এই রঙিন দুনিয়া হঠাৎ করে কোনো জাদুর স্পর্শে মিলিয়ে যেতে বসেছে।
ফিরে আসার সময় কানে ভাসছিল দূরের ঢাকের আওয়াজ, আর মনের মধ্যে রয়ে গেল সেই মেলার রঙিন ছবি। অল্প সময়ের জন্য হলেও যা দেখলাম, তা হৃদয়ে অমলিন থেকে যাবে। শকুন্তলা কালীপুজোর মেলা শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, এটি মানুষের আন্তরিকতা, বন্ধুত্ব আর মিলনের এক অপরূপ আবাস।
পরের বছর নতুন আশায় আর ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আবার ফিরব এই মেলায়, যেন পুরোটা সময় ধরে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারি।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.