ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও তাঁর নারীশিক্ষার ব্রত। বাঙালির স্বর্ণযুগ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও তাঁর নারীশিক্ষার ব্রত
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন হাজার অশান্তির মধ্যেই বিধবা বিবাহ নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন তিনি। রীতিমতো চোখে চোখ রেখে লড়াই করছেন শোভাবাজারের রাজাবাহাদুর রাধাকান্ত দেব ও তাঁর দলবলের সঙ্গে। শাস্ত্রে নাকি বিধবা বিবাহ নিষিদ্ধ। কিন্তু সাগরকে বাঁধবে সাধ্য কার? রাধাকান্ত স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে বেশ অগ্রণী ভূমিকা নিলেও বিধবার বিয়ে বলে কথা। তা মানতে কোথাও যেন বাধো বাধো ঠেকছে বৈকি। রক্ষণশীল শোভাবাজার রাজবাড়ী তখন উত্তাল। অনেক শাস্ত্র ঘেঁটে শেষে উপায় মিললো বটে। মিললো শাস্ত্রের ব্যাখ্যাও। পরাশর সংহীতা। কিন্তু মানছে কে? অথচ স্পষ্ট উল্লেখ বের করলেন ঈশ্বর৷ বিধবার পুনর্বিবাহের সংকেত। আর ঠেকায় কে! ১৮৫৪ সালে অক্ষয়কুমার দত্ত সম্পাদিত তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় লিখেই ফেললেন বিধবা বিবাহ নিয়ে 'বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা’ শীর্ষকে। একদিকে ঈশ্বর আর অন্যদিকে রাজার তোষামোদীর দল। অতঃপর শুরু হল সই সংগ্রহ। গণসাক্ষর। রাজাবাহাদুর তিনশ সই জোগাড় করলে পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার, বেথুন সাহেব ও সর্বোপরি বিদ্যাসাগরা করেন চারশো সই। ও, কথায় কথায় বলে রাখি, এই মদনমোহন তর্কালঙ্কারেরই দুই কন্যারত্ন ভুবনমালা ও কুন্দমালা ছিল দেশবরেণ্য বেথুন সাহেবের প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের স্কুলের (এখন বেথুন স্কুল) প্রথম ছাত্রী।
যাই হোক, বিধবা বিবাহের জন্য একেবারে উঠেপড়ে লাগলেন মেদিনীপুরের ঈশ্বর। তাঁর কাগজে প্রথম সই করলেন উত্তরপাড়ার জমিদার শ্রী জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। এরপর একে একে নবদ্বীপের মহারাজা শ্রীশচন্দ্র, বিখ্যাত বাগ্মী রামগোপাল ঘোষ ও আরও বহু সংস্কারমুক্ত চিন্তাশীল মানুষ। সুতরাং বাংলার গণ্যমান্য মানুষদের আবেদনে অতঃপর নড়েচড়ে বসলো ব্রিটিশ সরকার বাহাদুরও। আবেদনে সাড়া দিয়ে লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৬ সালে পাশ করলেন হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহের আইন। ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন বা বেথুন সাহেবের সঙ্গে যৌথভাবে নারীশিক্ষামন্দির তৈরি করবার পর ১৮৫৭ সালে তিনি বর্ধমানেও তৈরি করলেন একটি মেয়েদের স্কুল। ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দেই বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ টিতে। ১৮৬৪ সালে এই সংখ্যাটি হয় ২৮৮। সৌজন্যে সেই ঈশ্বরই। নিজে ধার করে স্কুলগুলিতে ফান্ডিং করে মেয়েদের হাতে তুলে দিতেন পড়ার বই। বেথুন সাহেবের সাহচর্যে তাঁর প্রায় একক ইচ্ছেতে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটতে থাকলে বাধাও কম আসেনি বড় একটা। সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদক কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছড়া বেঁধে লিখলেন -
আগে মেয়েগুলো ছিল ভালো ব্রত ধর্ম কোর্তো সবে
একা বেথুন এসে শেষ করেছে আর কি তাদের তেমন পাবে
যত ছুঁড়িগুলো তুড়ী মেরে কেতাব হাতে নিচ্ছে যবে
এ বি শিখে, বিবি সেজে বিলাতী বোল কবেই কবে
এখন আর কি তারা সাজী নিয়ে সাঁজ সেঁজোতির ব্রত গাবে
সব কাঁটাচামচে ধোরবে শেষে পিঁড়ি পেতে আর কি খাবে
আর কিছুদিন থাকলে বেঁচে পাবেই পাবেই দেখতে পাবে
এরা আপন হাতে হাঁকিয়ে বগী, গড়ের মাঠে হাওয়া খাবে।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily tasks-
https://x.com/KausikChak1234/status/1879007929480978683?t=O08-5VGOmrsHvn8okYQiZQ&s=19
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য। বিশেষ করে ১৯৫৬ সালে বিধবা বিবাহ চালু করণটা ছিল বাঙালি নারী সমাজের জন্য একটি যুগান্তকারী সফলতম অধ্যায়। যাহোক অনেক সুন্দর লিখেছেন আপনি। খুবই ভালো লাগলো আপনার লেখাগুলো পড়ে।
বিদ্যাসাগর মহাশয় ছিলেন বলে আজ নারী শিক্ষার এত অগ্রগতি। আপনার এই মন্তব্য আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিল। ধন্যবাদ পাশে থাকলেন বলে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কৃতিত্ব অপরিসীম। বিধবা বিবাহ থেকে শুরু করে বাংলা গদ্য সংস্কার সমাজ সংস্কার অনেক কিছুতে তার অবদান। আপনি তার বিষয়ে অনেক সুন্দর পোস্ট উপস্থাপন করেছেন তাই অনেক কিছু জানার আরো সুযোগ পেলাম।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে আপনি যে কথাগুলি বললেন তা একদম যথাযথ এবং যুক্তিসঙ্গত ভাই। তিনি ছিলেন বলে বাঙালি আজ অনেকটা এগিয়ে যেতে পেরেছে। ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্য করবার জন্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন ইতিহাসের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর সংগ্রাম এবং সমাজে পরিবর্তন আনার প্রয়াস সত্যিই প্রশংসনীয়। শাস্ত্রীয় সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে, তিনি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন। এর মাধ্যমে নারীশিক্ষার প্রসারও সম্ভব হয়েছিল।আজকে আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন দাদা।শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যে লড়াইটা করেছিলেন তার সুফল আজ বাঙালি ভোগ করছে। আপনি দারুণ সুন্দর করে মন্তব্য করলেন। এমনভাবে আমার পাশে থাকবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।