ছোটবেলার মজার মজার কার্টুন।

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago (edited)

আজ- ২৯ ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল |center>
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।

1000081700.png


ছোটবেলার দিনগুলো ছিল একেবারে আলাদা। তখন না ছিল স্মার্টফোন, না ছিল ইউটিউব, না ছিল এত ব্যস্ততা। আমাদের আনন্দ মানেই ছিল টেলিভিশনের সামনে বসে কার্টুন দেখা। বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে বা ছুটির সকালে চা আর বিস্কুট হাতে টিভির সামনে বসে যেতাম—শুরু হতো আমাদের কল্পনার জগতে দারুণ সব অভিযান।

সবচেয়ে প্রিয় কার্টুনগুলোর মধ্যে ছিল টম অ্যান্ড জেরি। এই বিড়াল আর ইঁদুরের লড়াই কখনো শেষ হতো না, কিন্তু প্রতিবারই আমাদের মুখে হাসি এনে দিত। জেরির বুদ্ধি আর টমের ব্যর্থতা যেন প্রতিদিনই নতুন করে আনন্দ দিত। কোনো ডায়ালগ ছাড়াই এই কার্টুন এত মজার ছিল যে, এখনো কেউ দেখলে হাসি থামাতে পারে না।

তারপর ছিল ডোরেমন—যার পকেট যেন জাদুর ভাণ্ডার। ছোট্ট নোবিতা তার সাহায্যে যা চায় তাই পেত। আমাদের মনে হতো—ইশ, যদি আমার কাছেও এমন এক ডোরেমন থাকত! পরীক্ষায় পাস করতে, স্কুলে না যেতে, বা কোনো দুষ্ট ছেলেকে হারাতে কত রকম কল্পনা করতাম আমরা। ডোরেমনের গ্যাজেটগুলো যেন ছোটবেলার স্বপ্নের জগতকে বাস্তবে এনে দিত।

শিনচ্যান ছিল এক ভিন্ন চরিত্র। তার দুষ্টুমি, মজার কথা আর অদ্ভুত ব্যবহার আমাদের হাসির খোরাক দিত। মা-বাবার বকুনি খাওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হতো—এই তো আমরাও ঠিক এমন! শিনচ্যান যেন আমাদেরই এক অংশ, যে স্কুলে যায়, বন্ধুদের নিয়ে মজা করে, আবার মাঝে মাঝে মায়ের রাগের কারণ হয়।

আর ছিল চোটা ভীম। ছোট্ট সেই ছেলেটা যেভাবে দুষ্ট লোকদের শাস্তি দিত, তাতে আমরা শিখতাম সাহস আর ন্যায়ের শিক্ষা। তার বন্ধু চুটকি, রাজু, আর কালিয়া—সবাই মিলে যেন একদল ছোট্ট নায়ক। ভীমের লাড্ডু খাওয়ার দৃশ্য দেখে কার না খিদে পেত!

মোগলি-ও ছিল ছোটবেলার প্রিয় কার্টুন। জঙ্গলের ভেতরে প্রাণীদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব, বাঘ শেরখানের সঙ্গে লড়াই—সবই আমাদের মনে গেঁথে গেছে। মোগলি আমাদের শিখিয়েছিল, মানুষ একা নয়, প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশেই টিকে থাকে।

তারপর এল বেন টেন, যার ঘড়িতে ছিল ভিনগ্রহের শক্তি। সে একেকবার একেক রকম রূপ নিয়ে খারাপ লোকদের হারাত। তার অভিযানগুলো ছিল উত্তেজনাপূর্ণ, আর তার সাহসী মনোভাব আমাদের অনুপ্রাণিত করত।

এছাড়া পোকেমন-এর আশ আর পিকাচু, ড্রাগন বল জেড-এর গোকু, সিন্ডারেলা, স্পাইডারম্যান—সবাই ছিল আমাদের ছোটবেলার বন্ধু। সেই সময় একেকটি কার্টুন শুধু বিনোদন দিত না, শেখাত ভালো-মন্দের পার্থক্য, সাহস, বন্ধুত্ব, আর পরিশ্রমের মূল্য।

টেলিভিশনের সামনে পরিবার একসঙ্গে বসে কার্টুন দেখা এখন বিরল। তখন ছিল একসাথে হাসির, আনন্দের, আর গল্পের সময়। মা রান্নাঘর থেকে বলতেন—“চোখে ব্যথা করবে এত কাছে বসে দেখিস না।” তবুও আমরা নড়তাম না। কারণ কার্টুন মানেই ছিল আনন্দের অন্যরকম এক দুনিয়া।

এখন বড় হয়েছি, সময় বদলেছে, কিন্তু সেই ছোটবেলার কার্টুনগুলো আজও হৃদয়ের গভীরে জায়গা করে আছে। মাঝে মাঝে টম অ্যান্ড জেরির কোনো পুরনো পর্ব চোখে পড়লে মনে হয়, আমি যেন আবার ছোট হয়ে গেছি। তখন মনটা হালকা হয়ে যায়, হাসি চলে আসে, চোখের কোণে জমে যায় এক ফোঁটা স্মৃতি।

সত্যি বলতে, আজকের এই কোলাহলপূর্ণ জীবনে যদি একটু সময়ের জন্যও সেই দিনগুলোয় ফেরা যেত, তবে হয়তো পৃথিবীটা আরও সুন্দর লাগত।

সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।

1000038736.webp


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 yesterday 

ছোটবেলায় তো টিভির সামনে থেকে উঠতেই ইচ্ছে করতো না। সারাক্ষণ কার্টুন দেখতে ইচ্ছে করতো। মোগলি আমারও প্রিয় কার্টুন ছিলো। যাইহোক আপনার পোস্টটি পড়ে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গিয়েছে। এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।