সে কি চাই সে নিজেও জানে না।
আজ- ২৮ ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বগুলোর একটি হলো নিজের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে না পারা। অনেক সময় আমরা এমন এক অবস্থায় থাকি যেখানে বুঝতেই পারি না আসলে আমরা কী চাই। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় আমাদের লক্ষ্য ঠিক আছে, আমরা সব জানি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করে। সেই অস্থিরতাই অনেক সময় আমাদের প্রশ্ন করতে বাধ্য করে—সে কি চাই সে নিজেও জানে না।
প্রথমে আসি জীবনের স্বপ্ন বা লক্ষ্য নিয়ে। ছোটবেলায় যখন কেউ জিজ্ঞেস করে—তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও? তখন আমরা খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে উত্তর দিই—ডাক্তার হবো, ইঞ্জিনিয়ার হবো, শিক্ষক হবো কিংবা অন্য কিছু। তখন মনে হয় আমরা সবকিছুই জানি। কিন্তু সময় যত এগোয়, বাস্তবতা যত কঠিন হয়, ততই আমরা বিভ্রান্ত হই। একসময় মনে হয়, আমি যা চাই তা কি সত্যিই আমার জন্য? নাকি অন্যরা আমাকে শিখিয়েছে যে এটিই আমার চাওয়া হওয়া উচিত?
অনেক মানুষ জীবনের এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে যায় যখন সে বুঝতেই পারে না আসলে তার ইচ্ছা কোন দিকে। কখনো পরিবার, কখনো সমাজ, আবার কখনো নিজের ভেতরের ভয় তাকে এমন অবস্থায় ফেলে দেয়। তখন মনে হয়—সে কি চাই সে নিজেও জানে না।
এখানে একটা বড় কারণ হলো মানুষের অস্থিরতা। আমরা সবসময় চাই আরও ভালো কিছু, আরও বড় কিছু। হাতে যা আছে তা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। আজ যদি কোনো স্বপ্ন পূর্ণ হয়, কাল আবার নতুন স্বপ্ন জাগে। এই অনন্ত চাওয়ার ভিড়ে কখনো কখনো আমরা হারিয়ে ফেলি আসল চাওয়াটা। তখন মনে হয়—আমরা কী চাই তা আমরাই জানি না।
ভালোবাসার ক্ষেত্রেও এরকম হয়। কেউ কাউকে ভালোবাসে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে বুঝতে পারে না আসলে সে সেই মানুষটার সঙ্গেই সুখী হবে কি না। আবার কেউ কারও প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু মনে হয় এই সম্পর্ক কি সত্যিই আমার জন্য? ফলাফল হলো দ্বন্দ্ব। সে জানে না আসলে সে কাকে চাইছে বা কী চাইছে।
চাকরি কিংবা ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। একজন ছাত্র হয়তো ভেবেছিল পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হবে। কিন্তু পড়াশোনা করতে করতে হঠাৎ বুঝল তার আগ্রহ অন্য জায়গায়। আবার কেউ চাকরিতে যোগ দিল, কিন্তু কিছুদিন পর বুঝল এই কাজ তার মনমতো নয়। তখন মনে হয়—সে কি চাই সে নিজেও জানে না।
এর পেছনে একটা মানসিক দিকও আছে। মানুষের মন কখনো স্থির থাকে না। আজ যে জিনিসে ভালো লাগে, কাল সেটিই বিরক্তিকর মনে হতে পারে। আবেগের ওঠানামা, ভয়ের প্রভাব, দায়িত্বের চাপ—সব মিলে মানুষ নিজের চাওয়ার ব্যাপারেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
তবে এর মানে এই নয় যে সে দুর্বল। বরং এটাই প্রমাণ করে যে মানুষ পরিবর্তনশীল। চাওয়া-পাওয়া সবসময় একই থাকে না। সময়ের সাথে সাথে তা বদলায়। কিন্তু সমস্যা তখনই হয় যখন আমরা নিজের ভেতরের কণ্ঠকে শুনতে চাই না। যখন শুধু বাইরের চাপ মেনে চলি, তখনই মনে হয় আমরা কিছুই চাই না, কিংবা কী চাই তা জানি না।
এই বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হলো আত্ম-অন্বেষণ। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে—আমি আসলে কী চাই? আমি যদি কোনো কাজ করি, সেটি কি আমাকে শান্তি দেয়? আমি যদি কারও সঙ্গে থাকি, সেটি কি আমাকে সুখী করে? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে সেটিই আসল চাওয়া। আর যদি উত্তর না হয়, তবে আমাদের নতুন করে পথ খুঁজতে হবে।
জীবনের প্রতিটি মানুষকেই কোনো না কোনো সময়ে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। কেউ দ্রুত উত্তর পায়, কেউ দেরিতে। কিন্তু যে মানুষ নিজের ভেতরের কণ্ঠস্বরকে শোনে, সে একসময় বুঝতে পারে আসলেই কী চায়। আর যে মানুষ শুধু অন্যের চাওয়া মেনে চলে, তার ভেতরে চিরকাল একটা শূন্যতা থেকে যায়।
শেষমেশ বলা যায়, “সে কি চাই সে নিজেও জানে না”—এটি শুধু একটি বাক্য নয়, এটি জীবনের এক বাস্তব সত্য। আমরা অনেক সময় নিজের চাওয়া সম্পর্কে দ্বিধায় থাকি। কিন্তু যদি সাহস করে ভেতরের কথা শুনি, তবে আমরা অবশ্যই জানতে পারব আমরা আসলে কী চাই। তখন আর এই বাক্যটি আমাদের প্রযোজ্য হবে না।
সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।


250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR