আমার বাংলা ব্লগ।। বাংলা সাহিত্যের সূচনালগ্ন- পর্ব:১ ।। [১০% বেনিফিশিয়ারিস @shy-fox এর জন্য
কালের বিবর্তনে বাংলা ভাষায় শব্দ ভান্ডার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিক তেমনি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা সাহিত্য। সেই প্রাচীন বা আদিযুগ থেকে অল্প অল্প করে বিস্তার লাভ করেছে বাংলা সাহিত্য। সাহিত্য ভান্ডারে যুক্ত হয়েছে কবিতা, গল্প, ছোট গল্প ,উপন্যাস ,ভ্রমণ কাহিনী ,কাব্যগ্রন্থ, উপাখ্যান, মহাকাব্য, প্রবন্ধ, নাটক ইত্যাদি।
ধারণা করা হয় যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীনতম শাখা হলো কাব্য। ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলা সাহিত্য পথচলার শুরু করে। সেই সময়ে সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা এবং ধর্ম যেখানে ছিল গৌণ।
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে চর্যাপদ কে। বাংলা ভাষার প্রথম কাব্য সংকলন হলো এই চর্যাপদ। আর এই চর্যাপদকেই বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ডক্টর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাচর্যবিনিশ্চয় নামক একটি পুঁথি আবিষ্কার করেন। সেখান থেকে ডাকার্নব ও দোহাকোষ নামে আরো দুইটি বই তিনি আবিষ্কার করেন। এই সবগুলো বইকে একসাথে করে ডক্টর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ১৯১৬ সালে হাজার বছরের পুরানো বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা নামে একটি বই প্রকাশ করেন।
সেখানে বলা হয়েছে চর্যাপদের কবিতাগুলো গাওয়া হতো তাই এগুলো একসাথে গান ও কবিতা। সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে চর্যাপদ গুলো রচিত হয়েছে। সেই সময় বাংলার পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। আর এই পাল রাজাদের আমলে চর্যাগীতি গুলোর বিকাশ ঘটেছিল। আর এজন্য চর্যাপদ সহজিয়া বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সাহিত্য বলে বিবেচিত।
পাল বংশের পরে ক্ষমতায় আসে সেন বংশ। আর সেন বংশ হিন্দু ধর্ম এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কার রাজধর্ম হিসেবে গ্রহণ করলে বৌদ্ধরা এদেশ থেকে বিতাড়িত হয় এবং তারা নেপালে আশ্রয় গ্রহণ করে। সেই জন্য বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন এই চর্যাপদ বাংলাদেশের বাইরে নেপালে পাওয়া যায়।
চর্যাপদের ভাষাকে বলা হয় সন্ধ্যাভাষা বা সান্ধ্য ভাষা। তবে চর্যাপদের ভাষা নিয়ে সামান্য মতভেদ রয়েছে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে পদ সংকলনটি আদি বাংলা ভাষায় রচিত। আবার ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন চর্যাপদের ভাষা বঙ্গকামরূপী।
চর্যাপদ এর সর্বমোট সাড়ে ছয়চল্লিশ টি পদ পাওয়া গেছে । ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের পদ সংখ্যা ৫০ টি। আবার সুকুমার সেনের মতে এই পদ সংখ্যা ৫১ টি । চর্যাপদের পদকর্তা ২৪ জন। ডক্টর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সহ অধিকাংশের মতে চর্যাপদের আদি কবি লুইপা। আর চর্যাপদ এর সব থেকে বেশি পদ রচনা করেছেন কাহ্নপা।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত চর্যাপদ কে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পদগুলো রচিত। এই পদগুলোতে নিপুন কবিত্বশক্তি প্রকাশের পাশাপাশি তৎকালীন সমাজ চিত্র ফুটে উঠেছে খুবই স্পষ্ট ভাবে।
চর্যাপদ নিয়ে এই ছিল আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আশা করছি খুব সংক্ষিপ্তভাবে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন সম্পর্কে একটু হলেও ধারনা দিতে পেরেছি। বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্য কে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধারণ করা এবং সে বিষয়ে জানার গুরুত্ব অপরিসীম।
উল্লেখিত আলোচনার উৎস হিসাবে আমি জর্জ এর বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বই এবং ড: সৌমিত্র শেখর এর বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা বই দুটির সহায়তা নিয়েছি।
সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
সমৃদ্ধ হোক আমার বাংলা ভাষা
এগিয়ে যাক আমার বাংলা ব্লগ।
আপনার পোষ্ট-টা খুবই চমৎকার হয়েছে,আপনি আমারদের বাংলা ভাষার প্রাচীন সাহিত্য তুলে ধরেছেন,এর মাধ্যমে সবাই বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে ভালো একটা ধারনা লাভ করতে পারবে।
খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, ভাইয়া
আসলে প্রাচীন এই ঐতিহ্যগুলো নিয়ে আমরা খুব একটা ঘাটাঘাটি করি না। তাই সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে যাতে সবাইকে প্রাচীন বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে অবহিত করতে পারি তারই এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করেছি মাত্র। ধন্যবাদ
সত্যি আধুনিক সভ্যতায় মানুষ এত বেশি যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়ছে। সাহিত্য পাঠ করছে না। মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। একটা বেতিক্রম বিষয় তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
তবুও সাহিত্যপ্রেমী মানুষের সংখ্যাটাও কিন্তু একেবারে কম নয়। কিন্তু সমস্যাটা হলো আমাদের শিকড় সম্পর্কে আমরা অতটা অবগত নই। ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।
আপনার লেখাগুলো সোর্স দেওয়া উচিত ছিল কারণ আছে এখানে অনেকগুলো লেখা আপনি গুগল থেকে নিয়েছেন উইকিপিডিয়া থেকে নিয়েছেন ও গুলোর লিংক দেওয়া দরকার।
আমি মোটামুটি ৩ টি বই পড়ে নিজের মতো করে লিখেছি পুরো টা। এজন্যে গুগল বা উইকিপিডিয়ার কোনো নির্দিষ্ট লিংক আমার জানা নাই ভাই। আর তাই আমি কোনো প্রয়োজন ও মনে করি নি লিংক এর।
চর্যাপদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি জানতে পারলাম দাদা আপনার লেখা থেকে।ধন্যবাদ দাদা।