রাগের আগুন নিভলে বুঝি পুড়ে গেছে কত কিছু।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
মানুষের জীবনে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ধ্বংসাত্মক আবেগগুলোর একটি হলো রাগ। রাগ এমন এক জড়ো আবেগ, যা যখন মাথায় চড়ে বসে তখন মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। ঠিক যেন নদীর স্রোতের মতো, নদী যখন তীব্র বেগে বইতে থাকে, তখন সে কোন ঘর ভাঙছে, কোন ফসল ডুবাচ্ছে, তা বুঝা যায় না। কিন্তু যখন স্রোত থামে, পানি নামতে শুরু করে, তখন চোখে পড়ে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।
আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, গতকাল রাতে আমি রাগের বশবর্তী হয়ে দুইজন কাছের মানুষের সঙ্গে কড়া ভাষায় কথা বলে ফেলি। তাদের কোনো দোষ না থাকলেও আমার মানসিক চাপ আর জড়িত আবেগের কারণে আমি নিজের মনের ভার তাদের ওপর চাপিয়ে দিলাম। সেই মুহূর্তে নিজেকে যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমি ঠিক বলছি, ওদের উচিত ছিল আমার মতো ভাবা। কিন্তু যখন রাগ নেমে গেল, মাথা ঠান্ডা হলো, তখন মনের মধ্যে এক তীব্র অনুশোচনা ঘিরে ধরল।
‘আমি এমন কথা বললাম কেন? এভাবে কড়া ব্যবহার করাটা কি সত্যিই দরকার ছিল? ওরা তো আমাকে সবসময়ই সম্মান করে, আমার পাশে থাকে। এইসব প্রশ্ন ভেতরটা খুঁড়ে খুঁড়ে খেয়ে যেতে লাগল। এমন অনুভূতিতে কেউ নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারে না। আমিও পারিনি।
রাগ আমাদের মস্তিষ্কে অ্যামিগডালা নামক একটি অংশ সক্রিয় করে তোলে। এটি fight or flight রেসপন্স তৈরি করে। সেই মুহূর্তে যুক্তিবোধ, সহনশীলতা, সহানুভূতির মতো গুণাবলি স্তিমিত হয়ে যায়। মানুষ যেন এক মুহূর্তের জন্য পশুর মতো আচরণ করতে থাকে, শুধু আঘাত করতে চায়, বুঝে না কাকে আঘাত করছে বা কেন করছে।
রাগ কমে গেলে মানুষের বিবেক জেগে ওঠে। তখন মন বুঝতে পারে যে সে আসলে কত ভুল করেছে। কিন্তু তখন আর ফিরে গিয়ে কথা ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। কারো মন ভেঙে গেলে তাকে জোড়া দেওয়া যায়, তবে দাগটা থেকে যায়। মানুষ ভুলে গেলেও অনুভূতি থেকে যায়।
আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমার কথাগুলো হয়তো সামনের মানুষ ভুলে যাবে, কিন্তু সেই মুহূর্তের কষ্ট তার মনে রয়ে যাবে, এই ভেবে মনটা কষ্ট পাচ্ছে।
আমার মত কেউ যেন ভুল না করে, রাগ নিয়ন্ত্রণের কিছু বাস্তবিক কৌশল শিখার চেষ্টা করছি। কারন আমার রাগটা অনেক বেশি। সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কপালে দুঃখ আছে।
চুপ করে থাকার চেষ্টা করা: কথা বলার আগে অন্তত ১০ সেকেন্ড সময় নিতে হবে। অনেক সময় এই সামান্য সময়ই আমাদেরকে বড় ভুল থেকে বাঁচাতে পারে।
পানি পান করার চেষ্টা করা: রাগ উঠলে ঠান্ডা পানি পান করলে রাগ কমে যায়। এটি শরীর ও মন দুটোই শান্ত করে।
জায়গা পরিবর্তন করতে হবে: রাগের সময় যেই পরিবেশে আছি, সেখান থেকে সরে যেতে হবে। হাঁটতে বের হওয়া বা অন্য ঘরে যাওযা, বা বাইরে গিয়ে দাঁড়ানো।
নামাজ পড়া বা ধ্যান করা: আধ্যাত্মিকতা রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। দুই রাকাত নামাজ বা পাঁচ মিনিট মনোযোগ দিয়ে ধ্যান রাগকে অনেকটা হালকা করে দেয়।
নিজেকে প্রশ্ন করা: ‘এই রাগের কারণ কি সত্যিই এত গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নটি নিজেকে করলে অনেক সময় রাগের গুরুত্ব হারায়।
রাগকে দমন নয়, নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ আমরা মানুষ, আমাদের আবেগ থাকবে, কিন্তু সেই আবেগ যদি মানুষ ভাঙার অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তা আমাদের মানবিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
আমার এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি, রাগ আসবে, কিন্তু তাকে প্রশ্রয় দিলে আমরা নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই রাগের স্রোতে ভেসে যাবার আগে একটু থেমে চিন্তা করা জরুরি।
আপনিও যদি রাগের কারণে কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকেন, আজই গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চান। কারণ ক্ষমা চাইতে কখনোই দেরি করা উচিত নয়। আর আজ থেকেই চেষ্টা করুন, রাগ নয়, সহনশীলতাই হোক আপনার আমার আসল শক্তি।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
https://x.com/RamimHa74448648/status/1952389206380265548?t=wTrubjbvWQMI_thsOPtreg&s=19