অন্তরালের ছায়া, শেষ পর্ব : প্রতিশোধের রক্তঝরা নীরবতা
পর্ব ৭ : প্রতিশোধের রক্তঝরা নীরবতা
সামিন দ্রুততার সঙ্গে তার হ্যাকিং স্কিল কাজে লাগায় । সে ট্র্যাক করে অর্ণবের মোবাইলের সর্বশেষ লোকেশন—ঢাকার শহরতলির এক পরিত্যক্ত ওয়ারহাউজ ।
রনি তখন বলে ওঠে,
— "ভাই! মাত্র আধঘণ্টা আগে সে তার বাসাতেই ছিল!"
বখতিয়ার চোয়াল শক্ত করে বলে,
— "আর আধঘণ্টা দেরি মানেই হয়তো একটা প্রাণের মূল্য... চল!"
ছায়া ইউনিট ছুটে যায় সেই গন্তব্যের দিকে । রাস্তায় গাড়ির ভেতরে এক অস্বস্তিকর নীরবতা । কারও মুখে কোনো শব্দ নেই
।
মুন্না বলে ওঠে,
— "একটা মানুষ... নিজের স্ত্রীর জন্য এতটা করতে পারে?"
রনি ধীরে বলে,
— "ভালোবাসা মানুষকে ফেরেশতাও বানাতে পারে, আবার শয়তানও ।"
ওয়ারহাউজে পৌঁছে ছায়া ইউনিট শুনতে পায় একটা গুলির শব্দ ।
তারা ছুটে যায় ভেতরে—
আর সেখানে পড়ে আছে অর্ণবের নিথর দেহ । পাশে দাঁড়িয়ে রিয়াদ । চোখে যেন শোকের আগুন, ঠোঁটে এক নির্মম অট্টহাসি।
বখতিয়ার গর্জে ওঠে,
— "তুই কি মানুষ রিয়াদ? আইনের কাছে না গিয়ে তুই নিজে নিজে বিচার করে ফেললি!"
রিয়াদ চোখ মেলে তাকায়, ক্লান্ত কণ্ঠে বলে,
— "আইন!" (একটুখানি থেমে)
— "যে আইন বলেছিল, আমার স্ত্রী নিজ ইচ্ছায় মাতাল হয়েছিলো, যে আইন বিশ্বাস করল এক ফালতু রিপোর্ট... আমার স্ত্রীর কান্না কে শুনেছিল বলো? আমি বলেছিলাম সে বদলে গেছে, কিন্তু কারও কিছু যায় আসে না । আমি বলেছিলাম অনন্যা এখন আর অ্যালকোহলিক নয়, আমি তার জন্য লড়ছি... কিন্তু তোমাদের পুলিশ বলেছিল — ‘এইসব তো মেয়েরা নিজের ইচ্ছায় করে’..."
রিয়াদ এক পা সামনে এগিয়ে আসে । এবার তার কণ্ঠে ক্রোধ নয়, নিঃশেষ এক ভালোবাসা :
— "অনন্যা মরেনি, ওকে ধ্বংস করা হয়েছে… আমি শুধু কাগজে-কলমে নয়, হৃদয়ে তার জন্য স্বামী ছিলাম । বিয়ের পর ও বলেছিল, ‘তুই যা খুশি করিস, শুধু আমাকে কখনো ছোট হতে দিস না...’ আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, অনন্যার অপমানের প্রতিশোধ আমি নেবই... আমি প্রতিশোধ নিয়েছি... আমার পথ ভুল ছিল হয়তো, কিন্তু ভালোবাসাটা তো আর ভুল ছিল না!"
সামিন কাঁপা গলায় বলে,
— "তাহলে তুই নিশি, আরিয়ান...?"
রিয়াদ চোখ মেলে তাকায়, এবার চোখে জল ।
— "নিশিই ছিলো আসল কালপ্রিট— আরিয়ান আর অর্ণব তো ছিলো তার কাঠ পুতুল । যারা আমার অনন্যাকে তিলে তিলে শেষ করেছিল... আমি প্রতিটা খুন এভাবে সাজিয়েছি যেন সেটা দুর্ঘটনা মনে হয় । আমি জানি ওরা কী করেছিল । নিশি সবসময় অনন্যার পেছনে লেগে থাকতো তাকে পেলেই ছোট করতো, তাকে জাতীয় বাজার থেকে সরানোর ফন্দি আঁটতো । শেষ পর্যন্ত না পেরে তাকে হত্যা করলো ।"
(একটু থেমে) :
— "আমি ওদের মতো নই, তাই শুধু শান্তভাবে শেষ করেছি ।"
হঠাৎ সে ধীরে করে বন্দুক তুলে আনে নিজ মাথায় । বখতিয়ার দৌড়ে আসে,
— "না রিয়াদ! এটা পথ না!"
তখন আবিদ বলে উঠে,
— "তুমি যদি এতটাই ভালোবাসতে তাহলে নিজেকে কেন শেষ করতে চাও?"
রিয়াদ হাসে, এক অদ্ভুত তৃপ্তির হাসি ।
— "কারণ আমি আজ সবকিছু শেষ করে এসেছি । প্রতিশোধ, ভালোবাসা, বিচার... এখন শুধু অনন্যার কাছে ফিরতে চাই ।"
সামিন আবেগি হয়ে বলে,
—তুই যদি বেঁচে থাকিস, তোর গল্পটা মানুষ জানবে!"
রিয়াদ শেষবারের মতো তাকায়,
— "আমার গল্প জানলেই কী হবে? এই পৃথিবীটা তো অনুভূতিহীন… তুমরা কেবল চোখে দেখা বিচার চাও, কিন্তু হৃদয়ের যন্ত্রণা কেউ দেখে না..."
ট্রিগার টানার শব্দ ।
বন্দুকের গর্জন ।
এক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা ।
রিয়াদের দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, এক হাতে অনন্যার ছবি ধরা...
এই দৃশ্য দেখে বখতিয়ার ধীরে বলে ওঠে,
— "আজ একটা খুনিকে হারালাম... কিন্তু একটাও প্রশ্নের উত্তর পেলাম না । সত্যি বলতে... আমি জানি না সে খুনি ছিল, নাকি একটা ভালোবাসায় পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়া পুরুষ।"
(শেষ দৃশ্য – বিষণ্ণ বিকেল)
খুনির পরিচয় প্রকাশ পায় । কেস সমাপ্ত হয় ।
কিন্তু...
কোনো জয়ধ্বনি নেই ।
কোনো উৎসবের আলো নেই ।
শুধু বিষাদের এক স্তব্ধতা ঘিরে ধরে গোটা ছায়া ইউনিটকে ।
সবাই চলে যায় ।
কে কোথায় যায় কেউ জানে না । শুধু জানে—দুটো জীবন আর ফিরে আসবে না ।
পরদিন সকালে,
বখতিয়ার চুপচাপ বসে থাকে জানালার ধারে । রোদের আলোতে তার চোখে জলের রেখা স্পষ্ট ।
হঠাৎ সে ফোন করে সবার কাছে—"একবার আসো... শেষবারের মতো..."
ঘন্টাখানেক পর...
ছায়া ইউনিট আবার একত্র হয়—এক ভাঙা, ক্লান্ত, হতভম্ব একতা নিয়ে।
[ঘরের ভিতর নীরবতা]
বখতিয়ার (ভাঙ্গা কণ্ঠে) :
— "আমরা দেরি করে ফেলেছি... আরেকটু আগে এগোলে হয়তো... ওদের দুজনকেই বাঁচানো যেত ।"
আবিদ :
— "অর্ণব বিশ্বাস করেছিল আমাদের ওপর কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি..."
মুন্না (চোখ মুছতে মুছতে) :
— "রিয়াদ একজন খুনি ছিল, ঠিক... কিন্তু তার মাঝে আমি একজন বিধ্বস্ত প্রেমিককে দেখেছি..."
সামিন :
"আমাদের অনন্যার কেসটা আগে দেখার দরকার ছিলো ।"
রনি :
"...আমরা জিতিনি, আমরা হারিয়েছি।"
[বখতিয়ার মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ]
তারপর ধীরে বলে ওঠে—
— "ছায়া ইউনিট... এখানেই শেষ । আমরা আর নয় ।"
সবাই মাথা নিচু করে সম্মতি জানায় ।
চোখে জল, মনে ভার... আবেগে ভেজা এক চূড়ান্ত বিদায় ।
এভাবেই 'ছায়া ইউনিট'-এর সমাপ্তি ঘটে ।
তবে এই কাহিনি, এই বন্ধন, এই ভালোবাসা—তাদের ভেতরে চিরকাল বেঁচে থাকবে...
একটা ছায়ার মতো, যে সবসময় কাছেই ছিল, আড়ালেই ছিল...
(সমাপ্তি – অন্তরালের ছায়া সিজন ১)
সিজন ২ শীঘ্রই আসছে...
অন্তরালের ছায়া, পর্ব ৬ : ছায়া যার মুখ খুলে দেয়
লেখক পরিচিতি
আমি বখতিয়ার রশিদ — গল্প বলার ফাঁকে সময় খুঁজি, আর সময়ের ফাঁকেই খুঁজে পাই গল্প । ক্রাইম থ্রিলার হোক বা অদ্ভুত, আমি সবসময় খুঁজি মানুষ আর মনের রহস্য । ছায়া, অন্ধকার আর মানবিক টানাপোড়েনে গাঁথা আমার চরিত্ররা কখনো নায়ক নয়, কখনো খলনায়কও নয়—তারা শুধু মানুষ । আমি বিশ্বাস করি, গল্প হোক বা সিনেমা অথবা সিরিজ—প্রতিটি লাইন, প্রতিটি সংলাপ একটা জীবন্ত স্পর্শ ছুঁয়ে দিক পাঠকের হৃদয়ে । কেননা
—“ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকে গল্প… আর সেই গল্প খোঁজে বখতিয়ার।”
Twitter
https://x.com/BokhtiarMr90788/status/1953150305694089544?t=V8ZtBmSiPoIHp6RLxAM-Vg&s=19
https://x.com/pussmemecoin/status/1953126455589912782?t=V8ZtBmSiPoIHp6RLxAM-Vg&s=19
https://x.com/BokhtiarMr90788/status/1953150485248291122?t=V8ZtBmSiPoIHp6RLxAM-Vg&s=19
https://coinmarketcap.com/community/post/366568900