জুলাই ঘোষণাপত্র-২০২৫: গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও ভবিষ্যতকল্প

📅 তারিখ: ৫ আগস্ট ২০২৫
📍 স্থান: মানিক মিয়া এভিনিউ, ঢাকা
📝 পাঠ করেন: অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

🌟 মূল আকর্ষণ:
এই ঘোষণাপত্রে ২৮টি দফা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে — যেখানে গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, গত দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের সংস্কারের অঙ্গীকার রয়েছে।
🎯 কেন্দ্রীয় বার্তা: ছাত্র-জনতা ও শহিদদের মর্যাদা, মানবাধিকার, নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার।

📌 সংক্ষিপ্ত হাইলাইট:

• চলতি আন্দোলনের এবং সংবিধানত্মক স্বীকৃতি
• শহিদ ও উদ্যোদ্ধাদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা, আইনি সুরক্ষার অঙ্গীকার
• দুর্নীতি, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গুম‑ক্ষুণ্নের দ্রুত বিচার দাবি
• **সুষ্ঠ নির্বাচন, তরুণ নেতৃত্ব, পরিবেশ ও জবাবদিহি ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি

✦ ভূমিকা

এই ঘোষণাপত্র কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর একক চিন্তার প্রতিফলন নয়; এটি বাংলাদেশের আপামর জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষা, রক্ত-ঘামে গড়া মুক্তির দাবির বহিঃপ্রকাশ। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ছিল শুধু একটি সরকারের পতন নয়, বরং ছিল ফ্যাসিবাদ, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণের এক ঐক্যবদ্ধ চূড়ান্ত প্রতিবাদ। সেই বিদ্রোহের অন্তর্নিহিত চেতনা নিয়েই রচিত হয়েছে "জুলাই ঘোষণাপত্র ২০২৫"।

✦ ঘোষণাপত্রের সারমর্ম ও দৃষ্টিভঙ্গি

১. স্বাধীনতার মূল চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গঠিত হয়েছিল, এই ঘোষণাপত্র সেই চেতনার পুনরুত্থান ঘোষণা করছে।

২. গণতন্ত্রের পুনর্নির্মাণ ও একনায়কতন্ত্রের প্রত্যাখ্যান:
বিগত ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদী ও একদলীয় শাসনের দুঃশাসন, গুম-খুন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, দুর্নীতি ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে একটি সুসংগঠিত গণআন্দোলন গড়ে উঠে, যার চূড়ান্ত রূপ ছিল ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান।

৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও সংবিধান সংস্কার:
গণপ্রতিরোধের সাফল্যের পর ৮ আগস্ট ২০২৪-এ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আলোকে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

৪. বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা:
গণআন্দোলনকালে ও তার পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার জন্য জনগণের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হয়।

৫. শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি:
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া সকল দেশপ্রেমিক জনগণকে "জাতীয় বীর" হিসেবে ঘোষণা এবং আহত ও নিপীড়িতদের পূর্ণ আইনি সুরক্ষা প্রদানের প্রস্তাব রাখা হয়।

৬. নতুন প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন:
এ ঘোষণাপত্র শুধু অতীত সংশোধনের দলিল নয়, এটি ভবিষ্যতের ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের রূপরেখা। যেখানে থাকবে না বৈষম্য, থাকবে না শোষণ কিংবা দলীয় দখলদারিত্ব।

✦ বিশেষ মতামত ও বিশ্লেষণ

🔹 এই ঘোষণাপত্র একটি পরিবর্তন নয়, বরং একটি আত্মশুদ্ধির ডাক। এটি পুরনো ভুলের দায় স্বীকার করে এগিয়ে যাওয়ার এক সাহসী প্রচেষ্টা।

🔹 এতে নাগরিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার জন্য জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে — তা একবিংশ শতকের বাংলাদেশকে এক নতুন দিশা দিতে পারে।

🔹 এটি এক প্রকার নৈতিক ও রাজনৈতিক মেনিফেস্টো — যেখানে রাজনীতির চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে মানবিকতা ও ন্যায়বিচার।

🔹 ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের সম্ভাবনা রাখে, বিশেষত যখন দেশ এক দীর্ঘ রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে।

🔹 শেষত, এই ঘোষণাপত্র এক নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর — যেখানে জনগণ হবে সত্যিকারের মালিক।

✦ উপসংহার:

‘জুলাই ঘোষণাপত্র ২০২৫’ শুধু একটি ঘোষণা নয়; এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের পুনর্নির্মাণ। একটি ভবিষ্যৎ যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকার, নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সাথে বাঁচবে। আজকের এই প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞাই আগামী দিনের গণতান্ত্রিক, মানবিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের মূল ভিত্তি হয়ে উঠুক — এই কামনা করি।

🔖 #জুলাই_ঘোষণাপত্র_২০২৫
🔖 #ফ্যাসিবাদ_বিরোধী_আন্দোলন
🔖 #গণতন্ত্র_পুনঃপ্রতিষ্ঠা
🔖 #মানবিক_বাংলাদেশ

✅ কি আশা করতে পারো:

এই ঘোষণাপত্র যদি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে আগামী নির্বাচন, বিচারপ্রক্রিয়া ও সরকারি পুনর্গঠনে এটি আইনি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

---

🗣️ তোমার ভাবনা জানাও:

এই পাঠ করার বিষয়টি তুমি কীভাবে দেখো? তোমার যা অভিজ্ঞতা বা প্রশ্ন—কমেন্টে জানাও, পাঠকের জন্য এটি অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে উঠবে।

✎ পোস্ট করেছেন: @owahidneel