ব্লাড কিলার, পর্ব ১ : রক্তমাখা যাত্রা
পর্ব ১ : রক্তমাখা যাত্রা
শহর ডুবে আছে বৃষ্টিতে ।
মেঘ যেন ছিঁড়ে গেছে, আকাশ থেকে টানা ঝরছে জল । বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন বিদ্বেষ নিয়ে পড়ছে, যেন শহরকে ভিজিয়ে নয়—ডুবিয়ে দিতে চাইছে ।
রাস্তাঘাট অদ্ভুতভাবে ফাঁকা ।
দিনের বেলা যে পথগুলো মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে, সেখানে এখন শুধু বাতিগুলো ঝিমঝিম করছে । কোথাও কোনো গাড়ির হর্ন নেই, দোকানের চিৎকার নেই, মানুষের কোলাহল নেই ।
শহরটা যেন মৃত ।
দূরে কোথাও একটা কুকুর হাহাকার করছে । কিন্তু বৃষ্টির শব্দ এত তীব্র যে সেই হাহাকারও গিলে ফেলছে । আলো আর অন্ধকারের মাঝখানে শহর দাঁড়িয়ে আছে নিস্তব্ধতায় মোড়া এক শূন্য মরুভূমির মতো ।
শহরের প্রতিটি মানুষ ঘরে আটকা । টেলিভিশনের সব চ্যানেল থেকে একটাই সতর্কবার্তা বারবার বাজছে—
“প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে নাগরিকদের ঘরে থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে ।”
এই সতর্কবার্তা সবার কানে পৌঁছেছে, সবাই মানছে । কিন্তু এক ব্যক্তির কাছে এসবের কোনো মূল্য নেই ।
বৃষ্টির ধোঁয়াশা কেটে এক ছায়া ধীরে ধীরে সামনে এল ।
লম্বা কালো কোট, মাথায় তার হালকা চুল ।
মুখের অর্ধেক ঢাকা, যেন মানুষ নয়—বরং ছায়া ।
তার শরীর ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টিতে, কিন্তু এক ফোঁটাও যেন তাকে স্পর্শ করতে পারছে না ।
পদক্ষেপের শব্দ তৈরি করছে অদ্ভুত এক ঠান্ডা ছন্দ ।
সে এগিয়ে চলেছে, কিন্তু কে সে, কোথায় যাচ্ছে—কেউ জানে না ।
স্রেফ মনে হয়, শহরের অন্ধকারে জন্ম নেওয়া এক ঝড় নেমে এসেছে মানুষের রূপে ।
তার চোখ দুটো অদ্ভুতভাবে শূন্য ।
সেখানে কোনো আলো নেই, অনুতাপ নেই, ভয় নেই ।
শুধু গভীর অন্ধকার কেলানি ।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর লোকটি পৌঁছাল শহরের পুরনো আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো স্টেশনে । ছুটিতে মানুষের জন্য এই স্টেশন এখন প্রায় জনশূন্য । ম্লান আলোয় ভিজে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্ম ।
একটা মেট্রো দাঁড়িয়ে আছে । কেউ নামছে না, কেউ উঠছেও না ।
ভেতরে মাত্র পাঁচজন যাত্রী । একজন মোবাইল ফোনে স্ক্রল করছে, আরেকজন জানালার বাইরে তাকিয়ে চিন্তায় হারিয়ে গেছে, কেউ আবার হেলান দিয়ে আধো ঘুমে ডুবে আছে ।
লোকটি ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করল । তার পায়ের ছাপ যেন ভিজে মেঝেতে জমে রইল, কিন্তু যাত্রীদের কেউ খেয়াল করল না ।
সে গিয়ে বসলো এক তরুণের পাশে । তরুণটির নাম কনক । দিনভর অফিস করে ক্লান্ত হয়ে ফেরা এক কর্মী । কাঁধে ব্যাগ, শরীরে ক্লান্তি, চোখে ঝিম ধরা ঘুম ।
লোকটি শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল—
— “আচ্ছা, এই ট্রেনটা কোথায় যাচ্ছে, বলতে পারবেন?”
কনক অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল ।
— “অদ্ভুত তো! ট্রেন কোথায় যাচ্ছে না জেনে উঠে পড়েছেন?”
লোকটির ঠোঁটে ভেসে উঠল অদ্ভুত হাসি ।
না বিদ্রুপ, না মমতা—
বরং মৃত্যু যেমন নির্বিকার, তেমন ঠান্ডা ।
মেট্রো ধীরে ধীরে এগোতে লাগল । স্পিকারের ভেতর থেকে ভেসে এল ঘোষণা—
“পরবর্তী স্টেশন… স্টপিং…”
মেট্রো থামল ।
এরই মধ্যে সকল যাত্রী নেমে গেল ।
ভেতরটা আরও নিঃশব্দ হয়ে গেল ।
কনক ব্যাগটা কাঁধে তুলল, ভাবল নামবে । কিন্তু সে জানত না, তার জীবনের শেষ মুহূর্ত শুরু হয়ে গেছে ।
লোকটি কোটের ভেতরে হাত ঢুকালো । এক সেকেন্ড—
তারপর চকচকে Glock 19, সাথে সাইলেন্সার ।
কনক ঘুরে তাকানোরও সুযোগ পেল না ।
“ফুঁস…”
৯ মিমি হোলো পয়েন্ট বুলেট কনকের মাথা ভেদ করে গেল । রক্তের ছিটা ছড়িয়ে পড়ল মেট্রোর সাদা মেঝেতে । কনক মাটিতে লুটিয়ে পড়ল । চোখ খোলা, মুখে বিস্ময় জমে আছে । কিন্তু সেই প্রশ্নবোধক মুখের উত্তর দেবার মতো কেউ নেই ।
লোকটি বন্দুক আবার কোটে ঢুকিয়ে নিল । তার চোখে কোনো আবেগ নেই, কোনো অনুশোচনা নেই । যেন এই হত্যা তার কাছে নিছক এক চুক্তিবদ্ধ কাজ ।
সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, মেট্রোর দরজা পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল । প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা । আলো কেবল মিটমিট করছে । বৃষ্টি এখনও ঝরছে অবিরাম । দূরে বৃষ্টির শব্দ, কাছে রক্তের গন্ধ ।
শহর জানতেই পারল না, একটা জীবন শেষ হয়ে গেল একদম নীরবে ।
চলবে...
Twitter
https://x.com/BokhtiarMr90788/status/1965313461010968997?t=RnBdZ51EUnU-sDC4Vn-t5A&s=19
https://x.com/PussFi_FNDN/status/1965299986306122049?t=RnBdZ51EUnU-sDC4Vn-t5A&s=19
https://x.com/BokhtiarMr90788/status/1965313966680444992?t=A7xQtmwHqx_JD-BhYGbHmQ&s=19
https://coinmarketcap.com/community/post/367969371