ব্লাড কিলার – পর্ব ৩ : ভাঙা মুখোশ
পর্ব ৩ : ভাঙা মুখোশ
চারদিকে ভারী বৃষ্টি, ঝাপসা জানালা দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে । থানার ভেতরে ঘন অন্ধকার, শুধু ঝাপসা আলোয় টেবিলের ওপর রাখা ফাইলগুলো দেখা যাচ্ছে । ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করছে, অথচ সময় যেন এক জায়গায় থেমে আছে ।
বখতিয়ার কনকের স্ত্রী আফিয়াকে বসিয়েছে টেবিলের ওপাশে ।
তার চোখে অস্থিরতা, ঠোঁট শুকিয়ে গেছে, আঙুল কাঁপছে—কিন্তু সে চেষ্টা করছে দৃঢ় হয়ে বসে থাকতে ।
বখতিয়ার (গভীর গলায়),
আপনি আমাদের সঠিক তথ্য দেননি কেন, আফিয়া? আপনার স্বামীকে খুন করা হয়েছে, অথচ আপনি পুরো সত্যিটা জানাননি ।
আফিয়া (অভিমানী চোখে),
আমি তো আপনাদের কাছে কিছুই লুকাইনি । যা জানি সবই বলেছি ।
বখতিয়ার (টেবিলে হাত মেরে),
তাহলে আপনার স্বামী অন্য মেয়েদের সাথে সময় কাটাতো—এটা কেন লুকালেন?
আফিয়া (চোখ নামিয়ে),
দেখুন... আমি এসব মনে করতে চাই না । সেই সব দিনগুলো আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো ।
বখতিয়ার (চোখ সরু করে),
আমরা খোঁজখবর নিয়েছি । আপনার স্বামী আর আপনি, এই নিয়ে ঝগড়াও করেছেন বহুবার । এখন আপনি বলছেন কিছুই জানেন না?
আফিয়া (গলা শুকনো হয়ে আসছে),
না... আমি কিছু জানি না । হয়তো গুজব শুনেছেন আপনারা ।
বখতিয়ার বুঝতে পারলো—আফিয়া ইচ্ছা করে এড়িয়ে যাচ্ছে । তার চোখের ভেতরে আতঙ্ক আছে, কিন্তু মুখে মিথ্যার মুখোশ । কোনো প্রমাণ নেই বলে তাকে ছাড়তেই হলো । আফিয়া আস্তে আস্তে চেয়ার থেকে উঠে চলে গেলো ।
বখতিয়ার তার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো—
"সে কিছু লুকোচ্ছে... কিন্তু কী?"
ঘরে নিস্তব্ধতা নেমে এলো । বৃষ্টির শব্দ আরও তীব্র হয়ে উঠছে ।
বখতিয়ার টেবিলে বসে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে ভাবছে—
কে কনককে হত্যা করতে চাইবে? কী কারণে?
একটু পর সে সিদ্ধান্ত নিলো—
“কনকের বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে ।”
আবিদ কনকের বন্ধুবান্ধবদের তথ্য সংগ্রহ করলো । দেখা গেলো বেশিরভাগ বন্ধু শহরের বাইরে, শুধু একজন এখনো এই শহরে আছে—জিয়ান । তাকে থানায় ডেকে পাঠানো হলো ।
জিয়ান ঢুকতেই চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল । এক হাতে দামি ঘড়ি, মুখে বিরক্তি ।
জিয়ান,
আপনাদের কতক্ষণ লাগবে? আমি আমার কাজ ফেলে এসেছি ।
বখতিয়ার (রেগে গিয়ে),
আপনার বন্ধু মারা গেছে, তাই আপনাকে ডেকেছি । আর আপনি বলছেন আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে?
জিয়ান (ব্যঙ্গ করে হেসে),
বন্ধু না ছাই! সে ছিল এক সুবিধাবাদী লোক । সবসময় যেদিকে বৃষ্টি হয়, সেইদিকে ছাতা ধরে ।
আবিদ (কপালে ভাঁজ ফেলে),
মানে? পরিষ্কার করে বলুন ।
জিয়ান,
মানে, কনক কারও সাথেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব করতো না । সবসময় স্বার্থ খুঁজতো । যার সাথে মিশবে, তার থেকে লাভ নিতো । প্রত্যেকটা সেক্টরে সে কারও না কারও পা চাটবেই ।
বখতিয়ার চোখ গেঁথে দিলো জিয়ানের চোখে ।
বখতিয়ার,
তার কি কোনো শত্রু ছিল?
জিয়ান (চিন্তায় ডুবে গিয়ে),
না... তবে কিছুদিন আগে তার আরেক বন্ধু জালাল রনির সাথে ঝামেলা হয়েছিল । সম্ভবত টাকা নিয়ে । তবে আমি একশো ভাগ নিশ্চিত নই । তারা দুজনেই একই ক্যাটাগরির ।
বখতিয়ার,
আচ্ছা... ‘তার ক্যাটাগরির’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন? রনিও কি কনকের মতো একই ধরনের কাজ করতো?
জিয়ান (হাসি দিয়ে),
হ্যাঁ, অনেকটা একইরকম । দু’জনেই একসাথে নানা রকম চালাকি করতো, এক কথায় বাটপারি ।
বখতিয়ার,
তার মানে রনিই একটা লিড । তার খোঁজ বের করতে হবে ।
জিয়ান (হাত ঝাড়তে ঝাড়তে),
দেখুন, যা জানি বলে দিলাম । দরকার হলে আবার ডাকবেন । এখন আমার কাজ আছে ।
বখতিয়ার জিয়ানের দেওয়া নাম্বারটা নোট করলো ।
রনির খোঁজে
বখতিয়ার আবিদকে বললো—
“আবিদ, রনির খোঁজ নাও । আমি আপাতত বাসায় যাচ্ছি । কিছু পেলে আমাকে জানিও ।”
রাত হয়ে গেছে । বখতিয়ার বাসায় ফিরলো । টেবিলে চুপচাপ রান্না করছে । একাকিত্বের মাঝে ভাত খাচ্ছে । অন্ধকার ঘরে শুধু বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ ।
হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠলো । স্ক্রিনে আবিদের নাম ।
বখতিয়ার (ফোন কানে),
হ্যালো, কী খবর?
আবিদ (উত্তেজিত গলায়),
স্যার, সমস্যা হয়ে গেছে! রনিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে লোকটা...
ফোনের ওপাশে শোনাই যাচ্ছে শুধু বৃষ্টির শব্দ আর আবিদের কাঁপা গলা । বখতিয়ার ফোনটা শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো ।
“মানে... রনি কি লুকাচ্ছে? নাকি সেও কোনো অদৃশ্য খেলায় জড়িয়ে গেছে?”
ঘরের ভেতর হঠাৎ করে শীতলতা নেমে এলো ।
চলবে...
Twitter
https://x.com/BokhtiarMr90788/status/1968209125332210156?t=zyVMgmuuxDGDIC4m4YnVOA&s=19
https://x.com/pussmemecoin/status/1968123953186214142?t=zyVMgmuuxDGDIC4m4YnVOA&s=19
https://x.com/BokhtiarMr90788/status/1968209433609253184?t=zyVMgmuuxDGDIC4m4YnVOA&s=19
https://coinmarketcap.com/community/post/368339987