স্মৃতিচারণ: শৈশবের বৈশাখী ঝড়ে আম কুড়ানোর স্মৃতি
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
মঙ্গলবার, ০৩ ই জুন ২০২৫ ইং
বৈশাখ আসলেই মনের মধ্যে কোথা থেকে যেন একটা ঝড় ওঠে। সেই ঝড়ে শুধু বাতাস নয়, উড়ে আসে শৈশবের স্মৃতিরা। তখনকার বৈশাখ মানেই ছিল ঝড়-বৃষ্টির উত্তাল উত্তেজনা, মাটিতে পড়ে থাকা কাঁচা পাকা আম, আর সে আম কুড়ানোর উৎসব। ঠিক যেন গ্রামের এক অলিখিত উৎসব বৈশাখী ঝড়ে আম কুড়ানো। তখন বৈশাখ মাস মানেই ছিল একধরনের উৎসব।আর এই উৎসব গ্ৰামের সকল ছেলে মেয়েরা একত্রিত হয়ে উদযাপন করেছিলাম। তখনকার দিন গুলো ছিল এক সোনালী দিন, সে দিন গুলো এখন অনেক বেশি মিস করি।
আমার শৈশব কেটেছে এক ছোট্ট গ্রামে, যেখানে বৈশাখ এলেই আকাশের রং বদলে যেত। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই চারদিক অন্ধকার হয়ে আসত। গাছের ডালপালা নাচতে শুরু করত ঝড়ো হাওয়ায়। মাটির ঘরে দুলুনি লাগত, মায়েরা হাঁসফাঁস করত ঝড় উঠছে জামাকাপড় নামিয়ে ফেল।কিন্তু আমাদের তখন একটাই চিন্তা ঝড়ে কতগুলো আম পড়বে? তখন আমাদের গ্ৰামের সকল ধরনের আম গাছের মধ্যে আম ধরেছিল। কিছু কিছু আম বৈশাখ মাসেই পাকা শুরু হয়ে যেত, আবার কিছু কিছু আম জৈষ্ঠ্য মাসে পাকা শুরু হতো। আমাদের কাছে পাকা ও কাঁচা আমের কোন তফাৎ ছিল না।
যখন ঝড় ঠিক শুরু হয়, তখন আমরা সবাই ঘরের জানালায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। চোখ ছিল উঠোনের আমগাছগুলোর দিকে। ঝড়ের শব্দে পাতা কাঁপত, টুক করে একটি, আবার দুটি আম পড়ে যেত মাটিতে। হঠাৎ ঝড় থেমে গেলে যেন পুরো গ্রাম একসঙ্গে নিশ্বাস ফেলত। আর তখনই শুরু হত আমাদের অভিযান। আসলে আম কুড়ানো অভিযান ছিল একধরনের প্রতিযোগিতা। যারা গ্ৰাম এলাকার মধ্যে বসবাস করেছেন তারা হয়তো প্রত্যেকেই এই বিষয়ে অবগত আছেন। এই অভিযানে যে যত বেশি আম কুড়াতে পারবে সেই বিজয়ী।
পিচ্চি হাতগুলোতে একেকটা পাটের থলে বা পুরনো গামছা। যার থলেতে বেশি আম, সেই ছিল বিজয়ী। তবে আম কুড়ানোর লড়াইটা কেবল প্রতিযোগিতা ছিল না, ছিল আনন্দ, উত্তেজনা, আর অজানা এক মায়া। বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে ঠাণ্ডা লাগবে জেনেও কেউ থেমে থাকত না। কাদা মাখা পায়ে আমরা দৌড়ে বেড়াতাম এক গাছ থেকে আরেক গাছে। মাঝে মাঝে বড়দের বকাঝকিও জুটত, কিন্তু পরদিন আবার সেই রাস্তাই হতো আমাদের দৌড়ের ময়দান।ঝড়ের পরে পাওয়া সেই আমগুলোর একটা আলাদা স্বাদ ছিল। অনেকটা যুদ্ধ করে জেতার মতো।
মাটির গন্ধ লেগে থাকা কাঁচা আম, কেউ কেউ চাটনি করত, কেউবা লবণ-মরিচ মেখে খেত। মায়েরা চোখ রাঙিয়ে বলত এভাবে খেলে পেট ব্যথা করবে, কিন্তু তবুও লোভ সামলানো যেত না।আজ শহরের ব্যস্ত জীবনে বৈশাখ আসে ক্যালেন্ডারে, ঝড় আসে খবরের পাতায়। কিন্তু শৈশবের সেই ঝড় আর আসে না। আসে না সেই কাঁপা কাঁপা দুপুর, মাটিতে পড়ে থাকা কাঁচা আম, কিংবা ছুটে বেড়ানো নির্লজ্জ আনন্দ। তবু বৈশাখ এলেই মনের কোণে কোথাও একটা কচি গাছের ডালে ঝুলে পড়ে সেই পুরোনো দিনের ছবি। মনে হয়, যদি আর একবার ঝড় উঠত আর একবার ছুটে যেতাম আম কুড়াতে।
সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Vote@bangla.witness as witness
Daily task
Link
https://x.com/Riyadx2P/status/1929873388132356264?t=hhxwvXNhkzmOfoXoHWmjIg&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1929873668206919860?t=hhxwvXNhkzmOfoXoHWmjIg&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1929873877792108979?t=hhxwvXNhkzmOfoXoHWmjIg&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1929874184261255515?t=hhxwvXNhkzmOfoXoHWmjIg&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1929874409634123811?t=hhxwvXNhkzmOfoXoHWmjIg&s=19
Screenshot
আপনার অতীতের আম কুড়ানোর স্মৃতিচারণ পড়তে গিয়ে নিজের স্মৃতিতে হারিয়ে গেলাম। ছোটবেলায় আম কুড়ানো স্মৃতি কত টাইনা মধুর। আজকে বৃষ্টির মধ্যে আমার বোন যখন আমি কুড়াছিলো তখন হারিয়ে গিয়েছিলাম নিজের স্মৃতিতে। আহা শৈশব। চাইলেও আর দিনগুলো ফিরে আসে না। আপনার শৈশবের এই সুন্দর স্মৃতিময় মুহূর্ত পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া।
আপনার শৈশবের বৈশাখী ঝড়ে আম কুড়ানোর স্মৃতিচারণ পড়ে মনটা বেশ নস্টালজিক হয়ে উঠল। প্রকৃতির মাঝে মিশে থাকা সেই মিষ্টি আনন্দ আর গ্রামীণ ছুটে বেড়ানোর গল্প সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আজকের ব্যস্ত জীবনে এমন স্মৃতিগুলো আমাদের জীবনে এক অসাধারণ উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে। ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে শেয়ার করার জন্য।
ভাইয়া আপনার ঝড় বৃষ্টির আম কুড়ানোর স্মৃতিময় পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।আসলে শৈশব কালটি এমন মধুময় ছিল যা এখন আমরা আফসোস করতেছি।তবে আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে আমি আমার শৈশকালের কিছু স্মৃতি মনে পরে গেলো।ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।