আপন দুই ভাই বিয়ের পরে শত্রু হয়ে যায় কেন?
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
মানুষের জীবনে সম্পর্কের বন্ধন সবচেয়ে শক্তিশালী হয় পরিবার দিয়ে। ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক সেই বন্ধনের অন্যতম সুন্দর দিক। শৈশবের খেলা, পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা, সবকিছুতেই ভাইয়েরা থাকে একে অপরের সবচেয়ে কাছের মানুষ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, অনেক সময় দেখা যায় বিয়ের পর সেই আপন দুই ভাই দূরে সরে যায়, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে শত্রুতার রূপ ধারণ করে। এখন প্রশ্ন হলো , কেন এমন ঘটে?
বিয়ের আগে দুই ভাই একসঙ্গে থাকলে তাদের ব্যয়-ভারও একরকম ভাগাভাগি হয়। কিন্তু বিয়ের পর প্রত্যেকের সংসার আলাদা হয়ে যায়, খরচ বাড়ে, দায়িত্ব বেড়ে যায়। তখন অর্থনৈতিক চাপ দেখা দেয়। কারো আয় বেশি হলে অন্যজনের মনে হিংসা বা কমপ্লেক্স তৈরি হতে পারে। আবার কোনো কারণে পরিবারে যৌথ সম্পদ ভাগাভাগির প্রসঙ্গ এলে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
বিয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই স্ত্রী একজন পুরুষের জীবনে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। অনেক সময় স্ত্রী চাইতে পারেন তার স্বামী যেন আলাদা সংসার গড়ে তোলে অথবা ভাইয়ের পরিবারের সাথে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা না রাখে। এর ফলে ভাইদের মধ্যে অজান্তেই দূরত্ব তৈরি হয়। ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝি স্ত্রীদের কথার মাধ্যমে বড় আকার নিতে পারে।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশীয় সমাজে জমিজমা ও সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ অনেক পুরনো একটি বাস্তবতা। বাবা-মায়ের জীবদ্দশায় হয়তো সমস্যা বোঝা যায় না, কিন্তু মৃত্যুর পর সম্পত্তি বণ্টনের সময় দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বিয়ের পরে প্রত্যেক ভাইয়ের পরিবার আলাদা হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
মানুষ স্বভাবতই তুলনা করতে ভালোবাসে। একজন ভাই যদি ভালো চাকরি করে, বাড়ি-গাড়ি কিনে ফেলে, অন্য ভাইয়ের মধ্যে হীনমন্যতা বা হিংসা কাজ করতে পারে। আবার একজনের স্ত্রী বা সন্তান যদি শিক্ষায়, আচার-আচরণে এগিয়ে থাকে, তখনও গোপন প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। এই তুলনা ধীরে ধীরে অহংকার ও শত্রুতায় রূপ নিতে পারে।
অনেক সময় ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি কেবল খোলাখুলি কথা না বলার কারণে বড় সমস্যায় রূপ নেয়। আগে যেখানে দুই ভাই মনের কথা শেয়ার করত, বিয়ের পর সেই যোগাযোগে ভাঙন দেখা দেয়। এর ফলে একে অপরকে ভুল বোঝা বা অবিশ্বাস করার প্রবণতা বাড়ে।
আশেপাশের আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীরাও অনেক সময় ভাইদের সম্পর্ক খারাপ করে দেয়। কেউ কারো কানে বাড়িয়ে বলা, অন্যের সাফল্য-অসাফল্য নিয়ে সমালোচনা—এসব বিষয়ও ভাইদের মধ্যে বিরোধ বাড়িয়ে তোলে।
কীভাবে এ সমস্যা এড়ানো যায়?
আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখা- সম্পত্তি ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সৎ থাকা।
স্ত্রীর সহযোগিতা- দুই ভাইয়ের সম্পর্ক ভালো রাখতে স্ত্রীদেরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখা জরুরি।
খোলামেলা যোগাযোগ- সমস্যা হলে চেপে না রেখে সরাসরি আলোচনা করা।
ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা – ইসলামে যেমন ভাইদের প্রতি সদাচরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা মানলে অনেক সমস্যা কমে যায়।
সহনশীলতা ও ত্যাগ – অনেক সময় এক ধাপ পেছনে আসাই সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
আপন ভাইয়ের মধ্যে শত্রুতা কখনোই স্বাভাবিক নয়। এটি মূলত অর্থনৈতিক চাপ, স্ত্রীদের প্রভাব, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, অহংকার এবং ভুল বোঝাবুঝির ফল। কিন্তু একটু সহনশীলতা, খোলামেলা কথা বলা, এবং একে অপরের প্রতি আন্তরিক থাকলেই এই সমস্যা এড়ানো যায়। মনে রাখতে হবে, স্ত্রী-সন্তান একদিনের জন্য হলেও দূরে থাকতে পারে, কিন্তু আপন ভাই চিরদিন আপনই থাকে। তাই সম্পর্কের বন্ধন রক্ষা করা প্রতিটি পরিবারের জন্যই জরুরি।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server