শৈশবের স্মৃতিচারণ:- "ফানুশের মতো উড়ে যাওয়া শৈশবের সন্ধ্যা"

in আমার বাংলা ব্লগ11 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

শৈশব একটা এমন সময়, যেটা কখনো ফিরে আসে না, কিন্তু মন চাইলেই হাজারবার ফিরে যেতে চায়। আমার শৈশবের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটা ছিল সন্ধ্যার পর গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া। হ্যাঁ, ঠিক শুনছেন বিদ্যুৎ চলে যেত, আর আমরা আনন্দে ফেটে পড়তাম! আজ যখন সন্ধ্যায় আলো জ্বলে উঠলে ঘর আলোকিত হয়, তখন মনটা যেন ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। কারণ মনে পড়ে সেই অন্ধকারেই আমাদের শৈশবের আলো খেলা করতো।

1000090032.jpg

সোর্স

আমরা তখন গ্রামে থাকতাম, বিশাল এক উঠোন ঘেরা বাড়িতে। চারপাশে গাছ-গাছালি আর একটা বড় আমগাছ। সন্ধ্যা নামার পরপরই পড়ার টেবিলে বসতে হতো। ঠিক তখনই যদি বিদ্যুৎ চলে যেত, আমাদের আনন্দ আর বাঁধ মানতো না।বই-খাতা ছুড়ে ফেলে আমরা দৌড়ে চলে যেতাম উঠোনে। চাচাতো ভাইবোনেরা, কাজিনরা, এমনকি পাড়ার ছোটরা পর্যন্ত একসাথে জড়ো হয়ে যেত।উঠোনজুড়ে তখন শুরু হতো হইচই কেউ লুকোচুরি খেলছে, কেউ “বরফ-পানি”, কেউ “লাফা-লাফি” আর কেউবা কেবল পাকা গলায় ভূতের গল্প বলছে। আলো নেই, চারপাশে আধো অন্ধকার, তবু যেন সেই অন্ধকারেই সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো ছিল আমাদের হাসিতে, চিৎকারে, খেলায়।আমার ছোট চাচাতো ভাই ছিল সবার মধ্যে সবচেয়ে কৌতুকপ্রিয়। সে এমনভাবে ভূতের গল্প বলত যে, মেয়েরা ভয়ে কান্না শুরু করে দিত, আবার পরক্ষণেই আমরা সবাই একসাথে হেসে গড়িয়ে পড়তাম। কেউ একজন আচমকা পেছন থেকে “ভূত!” বলে চিৎকার দিলে সবাই হুড়োহুড়ি করে দৌড়ে পালাতাম। সন্ধ্যার ওই কয়েক ঘণ্টা যেন ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে রঙিন সময়।

বিদ্যুৎ চলে গেলে মাঝে মাঝে বড়রা একটা হারিকেন জ্বালিয়ে রাখত বারান্দায়। তার আলোয় কিছুটা অন্ধকার কেটে যেত, কিন্তু আমাদের খেলাধুলার উৎসাহে তার কোনো প্রভাব পড়ত না। দাদি পাটিতে বসে থাকতেন, হাতে পাখা নিয়ে আমাদের দুষ্টুমি দেখতেন আর মাঝে মাঝে ডাক দিয়ে বলতেন, “খুব বাড়াবাড়ি কইরো না রে, নইলে ভূত আইবো”আর একে একে আসতো বিভিন্ন খাবারের গন্ধ রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা সেই মশলার গন্ধে পেট কুঁকড়ে উঠতো। আম্মু,চাচি, ফুফুরা মিলে রান্না করতেন চুলার আগুনে। সেই খাবারের স্বাদ আজকের হোটেল-রেস্টুরেন্টের কোনো দামি খাবারেও মেলে না। বিদ্যুৎ চলে গেলে রান্নাঘরটা যেন হতো এক সৃজনশীলতার কেন্দ্রবিন্দু আলো নেই, কিন্তু ভালোবাসা টগবগ করছিল সেই পাতিলে।সবাই মিলে খাবার খেতাম পাটি পেতে উঠোনে বসে। তারপর যখন আলো ফিরে আসত, মনটা হঠাৎ কেমন যেন ভার হয়ে যেত। কারণ তার মানে ছিল, খেলাধুলার ইতি, গল্পের ইতি, আবার বই-খাতার কাছে ফিরে যাওয়ার ডাক। কেউ কেউ মুখ গোমড়া করে বসে থাকত কিছুক্ষণ, কেউ বলত “আহ, আর একটু যদি না আসতো বিদ্যুৎ!” আমি আজও মনে মনে সেই কথাই বলি “আহ, আর একটু যদি না শেষ হতো শৈশব!”

আজকের আধুনিক পৃথিবীতে বিদ্যুৎ থাকে ২৪ ঘণ্টা, ঘরে ঘরে এলইডি লাইট, এসি, স্মার্টফোন তবু কোথাও যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। সেই উঠোন, সেই গাছপালার ফাঁকে খেলা, সেই একসাথে চিৎকার করে হাসা সবই এখন স্মৃতির পাতায় জমে থাকা ধুলোপড়া একটা পৃষ্ঠা।কখনো কখনো বিদ্যুৎ গেলে এখনো চোখ বন্ধ করে শৈশবে চলে যাই। মনে হয়, আবার হয়তো উঠোনে যাবো, চাচাতো ভাইবোনরা ডাক দেবে, দাদির পাখার বাতাসে গল্প শুনবো, আর হারিকেনের আলোয় একসাথে বসে রাতের খিচুড়ি খাবো। কিন্তু চোখ খুলতেই বুঝি, আমি বড় হয়ে গেছি, সময় চলে গেছে।

তবুও সেই শৈশবের সন্ধ্যাগুলো এখনো আমার হৃদয়ে জ্বলছে এক একটা তারার মতো অন্ধকারে পথ দেখানো আলো, ফানুশের মতো উড়ে যাওয়া স্মৃতির দীপ্ত আলো।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Posted using SteemX

Sort:  
 11 days ago 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

🎉 Congratulations!

Your post has been manually upvoted by the SteemX Team! 🚀

SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem ecosystem.

🔗 Visit us: www.steemx.org

✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5

banner.jpg

@punicwax here! 👋

@mohamad786, what a beautifully nostalgic piece! Your description of childhood evenings spent in the dark, illuminated by laughter and stories, is truly captivating. The way you paint a picture of simpler times, where the absence of electricity sparked joy and togetherness, really resonates.

It's amazing how you've captured the essence of those precious moments, contrasting them with the modern world. That yearning for the past, the warmth of family gatherings, and the unique flavors of home-cooked meals – it all comes alive through your words.

Thank you for sharing this evocative memory! I'm sure many others can relate to the magic of those childhood experiences. What was your favorite game to play during those evenings? Let's share our childhood memories in the comments! 😊