"শৈশবের কাঁঠাল চুরি করে কাঁঠাল খাওয়ার প্রতিযোগিতার গল্প"
শৈশবের দিনগুলো কত যে সুন্দর ছিল, এখনো চোখ বন্ধ করলেই সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। পড়াশোনার ফাঁকে আমরা সারাবছর অপেক্ষা করতাম গ্রীষ্মের ছুটির জন্য। ছুটি পড়লেই আমরা শহর থেকে চলে যেতাম গ্রামের বাড়িতে। গ্রামের পরিবেশ ছিল একদম অন্যরকম। চারপাশে খালি সবুজ মাঠ, আম-কাঁঠাল গাছ, পুকুর, বাঁশঝাড় আর খোলা আকাশ। শহরের ব্যস্ততা আর ইট-পাথরের ভিড় থেকে মুক্তি পেয়ে সেই গ্রামই ছিল আমাদের স্বর্গ।
গ্রামে আমার অনেক বন্ধু ছিল। তাদের সাথে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ, গাছে ওঠা, সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, আর লুকোচুরি খেলেই দিন কেটে যেত। তবে গ্রামের সবচেয়ে মজার আর স্মরণীয় ঘটনা ছিল কাঁঠাল চুরির গল্প। সেই গল্প আজও মনে পড়লে না হেসে থাকতে পারি না।আজ আমি আপনাদের মাঝে সেই গল্পটি শেয়ার করতে আসলাম। চলুন তাহলে শুরু করি...
আমাদের বাড়ির একটু পাশেই ছিল বড় এক কাঁঠাল গাছ। সেই গাছের কাঁঠালগুলো ছিল খুবই মিষ্টি আর বড় বড়। গাছটা ছিল মামার বাড়ির পেছনের দিকে। তবে মামা সব সময় নিষেধ করতেন কাউকে না জানিয়ে কাঁঠাল খাওয়া যাবে না। আর এই নিষেধটাই যেন আমাদের মধ্যে কৌতূহল আর লোভ আরও বাড়িয়ে দিত। তখনকার দিনে নিষেধ করা মানেই ছিল সেটা করতেই হবে।একদিন বিকেলে আমরা চার বন্ধু আমি, সোহাগ, রায়হান আর মামুন মিলে ঠিক করলাম, রাতে কাঁঠাল চুরি করব। সবার মধ্যে উত্তেজনা আর আনন্দ। একই সঙ্গে ভয়ও ছিল। যদি মামা ধরে ফেলেন! কিন্তু তবুও পিছিয়ে আসার কেউ নয়।পরিকল্পনা হলো, রাত আটটার পর সবাই চুপিচুপি মামার বাড়ির পেছনে বাঁশবাগানের পাশে দেখা করব। ঠিক সময়ে সবাই হাজির। চারপাশে তখনো ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, দূরের মাঠে ব্যাঙের আওয়াজ। আকাশে ছিল অর্ধেক চাঁদ, আর তার আলোয় চারপাশে হালকা আবছা আলো। বাতাসে ছিল গরম আর হালকা একটা মাটির গন্ধ।
সোহাগ আর রায়হান আগে থেকেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি আর মামুন খুব সাবধানে গাছের ডাল বেয়ে উঠলাম। গাছে উঠতে উঠতে বুক ঢিপঢিপ করছিল। তবু মনে হচ্ছিল, আজ না হলে আর কবে।ওপরে উঠে দেখি, একপাশে ঝুলে আছে বড় একটা কাঁঠাল। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো পড়ে সেটার গায়ে ঝিলমিল করছে।আমাদের সাথে ছোট একটা দা এনেছিলাম। মামুন খুব সাবধানে দা দিয়ে কাঁঠালের ডাল কাটতে লাগল। কিছুক্ষণ পর কাঁঠালটা টুপ করে পড়ে গেল। নিচে থাকা সোহাগ সেটা ধরে ফেলল। সবাই মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এবার দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়লাম।তাড়াতাড়ি সবাই মিলে কাঁঠালটা নিয়ে গেলাম পাশের পুকুরপাড়ে। সেই জায়গাটা ছিল অনেকটা গোপন। আমরা ঠিক করলাম, সেখানেই কাঁঠাল খাওয়ার প্রতিযোগিতা করব। যে বেশি খেতে পারবে, সে হবে ‘কাঁঠাল রাজা’।
মামুন কাঁঠালটা ভেঙে ফেলল। কি দারুণ সুগন্ধ!চারপাশে মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। কাঁঠালের ভেতর থেকে লালচে কোষগুলো দেখে সবার চোখ চকচক করে উঠল। আমরা যার যার হাতে লালসা নিয়ে কাঁঠালের কোষ তুলতে লাগলাম।প্রতিযোগিতা শুরু হলো। কে কত খেতে পারে! সোহাগ খুব দ্রুত খাচ্ছে। রায়হান একটু আস্তে আস্তে। আমি তো দাঁত দিয়ে কাঁঠালের কোষ ছিঁড়ে মুখে দিচ্ছি, যেন জীবনে এমন মিষ্টি কাঁঠাল আর পাইনি। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, সোহাগ খেয়ে খেয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। রায়হানও বলল “আমি পারব না ভাই, আর খেতে ইচ্ছা করছে না।”আমি তখনো খেয়ে যাচ্ছি। শেষে সবাই মিলে আমাকে ‘কাঁঠাল রাজা’ ঘোষণা করল। ভীষণ খুশি হলাম। এ এক অদ্ভুত আনন্দ।
কাঁঠাল খাওয়ার পর আবার সমস্যায় পড়লাম। হাতে লেগে থাকা আঠা কিছুতেই ছাড়ছে না। তাড়াতাড়ি পাশের কলাগাছের পাতা ছিঁড়ে নিয়ে তাতে মাটি মেখে হাত মুছে নিলাম। একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলাম। সেই হাসি ছিল একেবারে নিখাদ আনন্দের।খাওয়া শেষে সবাই চুপচাপ বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব। মামার বাড়ির পাশে গিয়ে গাছের নিচে পড়ে থাকা ডালের দাগও মুছে দিলাম, যাতে কেউ টের না পায়।পরদিন সকালে মামা বললেন “আরে! একটা বড় কাঁঠাল তো নেই!” আমরা সবাই মুখ গম্ভীর করে চুপ করে রইলাম। ভেতরে ভেতরে দম ফাটানো হাসি চাপছিলাম। মামা হেসে বললেন “যাক, যে খেয়েছে সে নিশ্চয়ই মজা পেয়েছে।” তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, তিনি সবই জানেন। কিন্তু ইচ্ছা করেই কিছু বললেন না। সেদিন মনে মনে খুব ভালো লেগেছিল মামার এই ব্যবহারে।
এই ছিল শৈশবের এক দারুণ স্মৃতি। এখনো বন্ধুরা দেখা হলে সেই কাঁঠাল চুরির গল্প করি। কখনো কখনো হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে আসে। তখনকার সেই নিষ্পাপ ভয়, রোমাঞ্চ আর আনন্দের দিন আর ফিরে আসে না। তবে স্মৃতিতে আজও টাটকা হয়ে আছে।আশা করছি আজকে আমার শেয়ার করা শৈশবের এই স্মৃতিচারণ আপনাদের সবার অনেক ভালো লেগেছে।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
X-Promotion
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily Tasks
Comment Link:-
https://x.com/mohamad786FA/status/1935256430539620850?t=qiL8xUWgcXmcDMdPl-QgmQ&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1935256696764657968?t=VaFVmqg3AfoYGaE4nh9DfQ&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1935256945394626850?t=e1qGxwh2kPzQE-fqnK6fqw&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1935257253197791269?t=7BjwZIyGsQC1uBrO2cB5ew&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1935420926839136470?t=gpG-Ocf6WAOYiGoVMuylUw&s=19
Ss