"শৈশবের আকাশে রঙিন ঘুড়ির দিনগুলি"

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

শৈশবের সেই আনন্দময় দিনগুলোর মধ্যে এক অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল ঘুড়ি উড়ানোর দিন। আমার গ্রামের ছোট্ট মাটির পথের মাঝে যখন শীতের হাওয়া বইতে শুরু করত, তখন আমরা বন্ধুদের নিয়ে ঘুড়ি উড়ানোর জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করতাম। আমার জন্য ঘুড়ি ছিল কেবল একটা খেলা নয়, এক ধরনের স্বাধীনতা, যেন আকাশে ছড়িয়ে পড়ার এক অদ্ভুত অনুভূতি ছিল সেখানে।

1000072922.png

AI-generated image

সেই সময় আমরা সবাই নিজেরা ঘুড়ি বানাতাম। আমার চাচা খুব ভালো করে ঘুড়ি বানাতে জানতেন, তাই বেশিরভাগ সময় তাঁর কাছ থেকে নতুন ঘুড়ি বানানোর উপকরণ সংগ্রহ করতাম। আমি যখন প্রথম ঘুড়ি উড়ানো শিখি, তখন সে ঘুড়ি ছিল একেবারে সাধারন। সুতার সোজা লাইনে যখন ঘুড়ি একটানা আকাশে উঠতে থাকত, মনে হত আমি যেন জীবনের প্রথম উড়ানটা শুরু করেছি। প্রতিটি ঘূরণের সঙ্গে একটা আনন্দের ঢেউ অন্তরে উঠত, যেটি ভাষায় বোঝানো কঠিন।একদিন বিকেল বেলা, তখন সূর্যাস্তের সময় ছিল, আমি এবং আমার বন্ধুরা মিলে চেয়ে দেখলাম কতগুলো ঘুড়ি আকাশে উড়ছে। ঘুড়ির বিভিন্ন রঙ ও আকারে যেন আমাদের কল্পনা দানা বাঁধছিল। আমার মনে আছে, আমার ঘুড়িটি ছিল হালকা নীল রঙের, আর তার সাথে সোনালি রংয়ের কিছু আঁকা ছিল। আমি খুব আশাবাদী ছিলাম যে, এই ঘুড়িটি আকাশের শীর্ষে পৌঁছাতে পারবে। কিন্তু এমন সময় হঠাৎ একটা দুষ্টু বন্ধু আমার ঘুড়িটিকে টেনে ফেলল। আমি কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, কিন্তু পরে তাকে হেসে বললাম, "আচ্ছা, এবার নতুন করে চেষ্টা করি।"

যত বার আমাদের ঘুড়ি উড়ত, তত বার আমরা নানা রকম কৌশল শিখতাম। কখনো আমরা ঘুড়ির সুতায় মোচড় দিতাম, কখনো বা ঝাঁপিয়ে পড়তাম। আমাদের প্রতিযোগিতাও ছিল, কে কত দূর ঘুড়ি উড়াতে পারবে। পুরো গ্রাম যেন এক উন্মুক্ত আকাশ হয়ে যেত, যেখানে শিশুদের হাসির রোল আর ঘুড়ির সুতার টান যেন এক অনাবিল আনন্দের উৎস হয়ে উঠত।একটা বিশেষ ঘটনা মনে পড়ে, এক শীতের সন্ধ্যায় যখন ঘুড়ি উড়ানোর সিজন ছিল, আমি আর আমার বন্ধু মেহেদী মিলে এক নতুন ঘুড়ি বানালাম। সেই দিনটাতে আমাদের খুব ভালো লাগছিল, কারণ আমাদের বানানো ঘুড়ি আকাশে দ্রুত উড়ছিল। আমরা ঠিক করলাম, আজ আর কাউকে আমাদের ঘুড়ি ছিনতাই করতে দেব না। সেই প্রতিযোগিতার মাঝে হঠাৎ এসে পড়ল প্রবল বাতাস, আর আমাদের ঘুড়িটি উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। যদিও আমরা দুঃখিত হয়েছিলাম, তবুও সেই খেলা আমাদের কাছে এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল।

আমি বিশ্বাস করি, এই সাদাসিধে কিন্তু অবিশ্বাস্য আনন্দের মুহূর্তগুলোই আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তোলে। সেই দিনগুলো খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলেও, আজও সেই স্মৃতিগুলোকে মনে করে খুব ভালো লাগে।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  
 3 months ago 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

আহ ভাই সেই দিন গুলো এখন অনেক মিস করি। সত্যি কতশত স্মৃতি কতশত মূহূর্ত। সেগুলো এখন শুধুই অতীত। বন্ধুদের সাথে লড়াই চলতো কে কত উপরে ঘুড়ি তুলতে পারে। সেই অনূভুতি এখন প্রায় অম্লান। দারুণ লিখেছেন আপনি।