গ্রামের স্মৃতিতে পাওয়া শৈশবের পেয়ারা চুরির অভিযান
শৈশবের কথা মনে পড়লে এখনো বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে। সেই দিনগুলো ছিল অন্যরকম। কোনো চিন্তা ছিল না, ছিল শুধু অফুরন্ত অবসর আর একদল বন্ধু। আমাদের গ্রামটা ছিল সবুজে ঘেরা, আর সেই সবুজের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আমাদের হাজারো দুষ্টুমি আর মজার গল্প। এমনই এক গল্পের কথা বলি, আমাদের পেয়ারা চুরি করার গল্প।
আমাদের গ্রামের একেবারে শেষ মাথায় ছিল করিম চাচার পেয়ারা বাগান। কী বিশাল সেই বাগান! সারি সারি পেয়ারা গাছ, আর তাতে ঝুলে থাকত ডাসা ডাসা পেয়ারা। দেখলেই জিভে জল চলে আসত। কিন্তু বাধা ছিল একটাই,করিম চাচা। উনি সারাদিন বাগান পাহারা দিতেন, যেন উনার গাছের একটা পাতাও কেউ বিনা অনুমতিতে ছুঁতে না পারে। তার রাগী মেজাজের জন্য আমরা সবাই তাকে যমের মতো ভয় পেতাম।সেদিন ছিল এক অলস দুপুর। স্কুল ছুটি, খাওয়া-দাওয়া শেষে আমাদের দলটা বটগাছের নিচে জড়ো হয়েছি। আমি,আকাশ,সুমন আর জুয়েল। কী করা যায়, কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই রতন হঠাৎ বলে উঠল, "চল, আজকে করিম চাচার বাগান থেকে পেয়ারা পেড়ে আনি।" কথাটা শোনার সাথে সাথে আমাদের সবার চোখ চকচক করে উঠল। একদিকে ধরা পড়ার ভয়, আরেকদিকে পাকা পেয়ারার লোভ দুই মিলেমিশে এক অদ্ভুত উত্তেজনা তৈরি হলো।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। আমরা চারজন মিলে একটা নিখুঁত পরিকল্পনা করে ফেললাম। ঠিক হলো, বাগানের পেছনের দিককার ভাঙা পাঁচিল টপকে আমরা ভেতরে ঢুকব। আকাশ থাকবে বাইরে, পাহারায়। যদি চাচাকে আসতে দেখে, তাহলে একটা বিশেষ শিস দেবে।বিকেলের নরম আলোয় আমরা আমাদের অভিযানে বেরিয়ে পড়লাম। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে, কিন্তু মুখে সবার বীরের হাসি। সাবধানে ভাঙা পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকতেই নাকে এসে লাগল পাকা পেয়ারার মিষ্টি গন্ধ। লোভ আর সামলানো গেল না। আমরা গাছে উঠে পড়লাম। যে যার মতো পেয়ারা ছিঁড়তে শুরু করলাম। কেউ পকেটে ভরছি, কেউ শার্টের ভেতরে এমনভাবে রাখছি যেন একটা পুঁটলি হয়ে গেছে। চারদিকে কী যে নিস্তব্ধতা, শুধু পাতা আর ডাল ভাঙার হালকা শব্দ হচ্ছে।
পেয়ারা পাড়া প্রায় শেষের দিকে, এমন সময় হঠাৎ করে আকাশের সেই বিশেষ শিস শুনতে পেলাম। আমাদের তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়।করিম চাচা আসছেন! এক মুহূর্তে আমাদের সব বীরত্ব উড়ে গেল। যে যেদিকে পারলাম, দৌড় লাগালাম। আমি তো এক লাফে গাছ থেকে নেমে এমন দৌড় দিয়েছি যে পায়ের নিচে কী পড়ছে, কাঁটা ফুটছে কি না, সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। পেছনে করিম চাচার গালিগালাজ আর "চোর, চোর" চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু তখন পেছনে তাকানোর সাহস কার আছে?
দৌড়ে একবারে গ্রামের পুকুরপাড়ে এসে আমরা থামলাম। সবাই হাঁপাচ্ছি, কিন্তু সবার মুখে বিজয়ের হাসি। শার্টের ভেতর থেকে পেয়ারাগুলো বের করে যখন গুনতে বসলাম, তখন সে কী আনন্দ! কয়েকটা পেয়ারা অবশ্য দৌড়ের সময় পড়ে গিয়েছিল, কয়েকটা থেঁতলে গিয়েছিল, কিন্তু তাতে কী! ওগুলোই ছিল আমাদের কাছে অমৃতের মতো।পুকুরের পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে আমরা সেই পেয়ারা খেতে বসলাম। নুন-মরিচ কিছুই ছিল না, কিন্তু সেই পেয়ারার স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। ওটা শুধু একটা ফলের স্বাদ ছিল না, ওটার সাথে মিশে ছিল আমাদের বন্ধুত্ব, সাহস আর একটা সফল অভিযানের অনাবিল আনন্দ।
আজ এত বছর পর যখন সেই দিনের কথা ভাবি, তখন হাসি পায়। করিম চাচার কাছে হয়তো আমরা সেদিন চোর ছিলাম, কিন্তু আমাদের কাছে ওটা ছিল শৈশবের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর একটা ঘটনা। সেই পেয়ারার স্বাদের চেয়েও হয়তো সেই স্মৃতিটাই বেশি মিষ্টি।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
X-Promotion
Congratulations!
Your post has been manually upvoted by the SteemPro team! 🚀
This is an automated message.
If you wish to stop receiving these replies, simply reply to this comment with turn-off
Visit here.
https://www.steempro.com
SteemPro Official Discord Server
https://discord.gg/Bsf98vMg6U
💪 Let's strengthen the Steem ecosystem together!
🟩 Vote for witness faisalamin
https://steemitwallet.com/~witnesses
https://www.steempro.com/witnesses#faisalamin
আপনারা চারজন মিলে পেয়ারা খাওয়ার দারুন একটা প্লান করে ফেলেছিলেন। তবে গ্রামীণ সমাজে এরকম কাজগুলো বরাবরই করেছিলাম আমরাও সেই ছোট্টবেলায়। এগুলোতে যেন অন্যরকম স্বাদ পাওয়া যেত। যাইহোক আপনার অনুভূতি জানতে পেরে ভালই লাগলো।