শৈশবের স্মৃতিচারণ:- ‘অপারেশন চিকেন’

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago (edited)

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

জীবনের কিছু মুহূর্ত থাকে, যেগুলো সময়ের কাঁটায় মুছে যায় না। বয়স যতই বাড়ুক না কেন, সেসব স্মৃতি বারবার ফিরে আসে এক অদ্ভুত মায়ায় ভর করে। এমনই এক স্মৃতি আজও আমার মনে গেঁথে আছে,ক্লাস ফাইভে পড়াকালীন গ্রামের বন্ধুবান্ধব নিয়ে মুরগী চুরি করে পিকনিক করার গল্প।সেই গল্পটি আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে আসলাম।আশা করছি গল্পটি আপনারা সবাই উপভোগ করবেন। চলুন তাহলে শুরু করি...

আমি তখন শহরে থাকতাম, তবে শহুরে জীবনে তেমন মন টিকত না। গ্রামের খোলা মাঠ, মেঠো পথ, নদীর ধারে বসে গল্প করা,এসবই আমার কাছে ছিল স্বর্গের মতো। তাই মাসে দু-একবার সুযোগ পেলেই ছুটে যেতাম গ্রামের বাড়িতে। আমার গ্রামটা খুব একটা দূরে না, সিএনজিতে ২০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায়। গ্রামের বাতাসে ছিল এক ধরনের মুক্তি, ছিল প্রাণের ছোঁয়া।

1000065075.png

AI-generated image

একবার গ্রামে গিয়েই এমন এক ঘটনার মুখোমুখি হলাম, যা আজও মনে পড়লে হাসি পায়, আবার একরাশ আবেগে মন ভরে ওঠে। ক্লাস ফাইভের কথা। সেই সময় গ্রামের বন্ধুরা ছিল একেকজন দস্যি স্বভাবের- আশিক, জুয়েল, সুমন, আকাশ, জীবন আর আমি। ছোট ছোট দুষ্টুমিতে আমরা ছিলাম ওস্তাদ। সেদিন দুপুরবেলা সবাই মিলে ঠিক করলাম, পিকনিক করব। কিন্তু সমস্যা হলো, খাওয়ার কিছু নেই। টাকা-পয়সাও তেমন ছিল না কারো হাতে। তখনই কার মাথায় যেন দুষ্টু এক আইডিয়া এল, মুরগি চুরি করে রান্না করা হবে!মনে হচ্ছিল যেন আমরা কোনো সিনেমার দৃশ্যে অভিনয় করছি। একদল ‘দুর্ধর্ষ’ কিশোর, যারা মিশনে বেরিয়েছে। টার্গেট একটা দেশি মুরগি, যেটা এক চাচার উঠোনে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আমরা ধীরে ধীরে ঘিরে ফেললাম। আশিক আর জুয়েল মুরগিটাকে ধরল, আর বাকি সবাই চোখ-কান খোলা রেখে পাহারা দিলাম। মুরগি ধরার পর আমরা দৌড়ে চলে গেলাম গ্রামের এক প্রান্তে, যেখানে এক বিশাল পুরনো বটগাছ আছে, নদীর একদম ধারে।

ওখানেই ছিল আমাদের ‘অপারেশন চিকেন’ । সুমন আর জীবন আগুন জ্বালালো, আমি আর আশিক পানি আনলাম, আর আকাশ মসলা জোগাড়ে গেল পাশের বাড়ি থেকে। অবশেষে অনেক কষ্টে রান্না হলো মুরগির ঝোল। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতে সেই তরকারির স্বাদ আজও জিভে লেগে আছে। আমরা সবাই মাটিতে পাতা পাটায় বসে সেই খাবার খেলাম। হাসি-ঠাট্টা, গল্প, খুনসুটি সব মিলিয়ে এক অপূর্ব দুপুর কাটল আমাদের।

তবে এ গল্প এখানেই থেমে থাকেনি। আমরা জানতাম, এটা ঠিক কাজ হয়নি। মজা করতে গিয়ে যে অন্যায় করেছি, তা মেনে নেওয়ার মতো বুকের জোরও ছিল আমাদের। খাওয়ার পরই সবাই মিলে সেই চাচার বাড়িতে গেলাম। ভয়ে আমাদের গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। চাচা তখন উঠানে বসে ছিলেন। আমরা গিয়ে সব খুলে বললাম। তিনি প্রথমে অবাক, পরে হেসে ফেললেন। আমাদের সরলতা দেখে তিনি রাগ করলেন না। আমরা মুরগির দাম দিলাম, আর রান্না করা তরকারির কিছু অংশও তাঁকে দিয়ে এলাম। তিনি আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, "যাও, জীবনে এই রকম ভুল আর করো না। তবে তোমাদের সাহসটা আমার ভালো লেগেছে।"

সেই দিনটার কথা আজও মনে পড়ে। তখন যদি আমাদের কাছে একটা মোবাইল ফোন থাকতো, ছবি তুলে রাখতাম, হয়তো ছোট্ট একটা ভিডিও করতাম। এখন শুধু চোখ বন্ধ করলেই সেই দৃশ্যগুলো ভেসে ওঠে বটগাছের ছায়া, নদীর ঢেউ, হাসতে হাসতে আমাদের মাটিতে বসে খাওয়া, আর মুরগির মালিকের সদয় হাসিমুখ।

সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, তবে কিছু স্মৃতি কখনোই মুছে যায় না। সেই একদিনের দুষ্টু পিকনিক আজ আমার শৈশবের রঙিন এক অধ্যায় হয়ে আছে। আজও যখন গ্রামের পথে হাঁটি, কোনো মুরগিকে উঠোনে ঘুরে বেড়াতে দেখি, তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঠোঁটের কোণে হাসি চলে আসে। এমন করে হাসায়, আবার শেখায় জীবনের অনেক কিছু।যাইহোক,আজ গল্পটি এখানেই শেষ করলাম।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif