শৈশবের স্মৃতিচারণ:- "নানা বাড়ির বর্ষার স্মৃতি"
আমার শৈশবের দিনগুলো ছিলো এক রঙিন ক্যানভাস, আর সেই ক্যানভাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল রঙ ছিল বর্ষাকাল। বর্ষা এলেই মনটা পাখির মতো উড়ু উড়ু করত। কারণ, বর্ষার আগমন মানেই ছিল নানা বাড়িতে যাওয়ার টিকিট। নানা বাড়ি মানেই ছিল অফুরন্ত আনন্দ আর স্বাধীনতা।
তখন আমি ক্লাস ফাইভের ছোট্ট একটা ছেলে। স্কুল ছুটি হলেই ব্যাগ গুছিয়ে নিতাম, আর মনটা চলে যেত সেই সবুজ গ্রামটার পানে। আমাদের নানা বাড়ির পাশেই ছিল এক বিশাল বিল। গ্রীষ্মে সেই বিল শুকিয়ে চৌচির হয়ে যেত, আর বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতেই যেন তার প্রাণ ফিরে আসত। কানায় কানায় ভরে উঠত টলটলে নতুন জলে।বর্ষার শুরুতেই আমরা দল বেঁধে নানা বাড়ি যেতাম। শহরে বৃষ্টি মানেই ছাতা আর কাদা, কিন্তু গ্রামে বৃষ্টি মানেই এক নতুন উৎসব। নানা বাড়ি পৌঁছানোর পরেই প্রথম কাজ ছিল বিলের দিকে ছোটা। হাঁটুপানিতে নেমে পড়তাম, আর শুরু হতো আমাদের মাছ ধরার অভিযান। বড়শি বা জাল নয়, আমাদের অস্ত্র ছিল কেবল দুটি হাত। হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে নামতাম বিলের নরম কাদার মধ্যে। পানি এতই স্বচ্ছ ছিল যে, ছোট ছোট পুঁটি, ট্যাংরা, শিং আর কই মাছের ঝাঁক দেখা যেত।
প্রথম প্রথম হাত দিয়ে মাছ ধরাটা বেশ কঠিন ছিল। মাছগুলো যেন মুহূর্তেই হাতের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেত। কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা দক্ষ হয়ে উঠলাম। আমাদের কৌশল ছিল খুবই সাধারণ। দু'জন মিলে প্রথমে মাছগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করতাম, তারপর একজন হাত দিয়ে সেগুলোকে ধরে ফেলত। মাছগুলো তখন ছটফট করত, আর আমরা আনন্দে চিৎকার করে উঠতাম।মাছ ধরার পাশাপাশি চলত আমাদের আরও অনেক মজা। কখনো ডিঙি নৌকায় চড়ে বিলের এপার থেকে ওপার যেতাম, কখনো বা হাঁসের মতো সাঁতার কাটতাম। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামলে আমরা বিলের পাশেই একটা টিনের চালের নিচে আশ্রয় নিতাম। টিপ টিপ বৃষ্টির শব্দ আর মাটির সোঁদা গন্ধ, সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি। বৃষ্টির মধ্যে ভেজা শরীরেই আমরা বাড়ির দিকে ছুটতাম, আর মা-খালারা বকা দিতেন। কিন্তু সেই বকাতেও যেন ভালোবাসার সুর মিশে থাকত।
সন্ধ্যার পর বিলের পারে বসে জোনাক পোকার খেলা দেখতাম। হাজার হাজার জোনাকি যেন বিলের চারপাশটাকে আলোয় ভরিয়ে দিত। আর নানার মুখে শুনতাম নানা রকম ভূতের গল্প। গল্প শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম, বুঝতেই পারতাম না।শৈশবের সেই দিনগুলো ছিল বড্ড সরল। ছোট ছোট আনন্দগুলোতেই মন ভরে যেত। আজ জীবন অনেক জটিল হয়েছে। শহরের যান্ত্রিক জীবনে সেই বিল, সেই মাছ ধরা, সেই বৃষ্টির শব্দ আর জোনাকি পোকারা যেন এক স্বপ্নের মতো মনে হয়।
বর্ষা এলেই আজও সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে বিলের ঠান্ডা পানিতে হাঁটা, বন্ধুদের সাথে মিলে মাছ ধরা, আর নানার বাড়ির সেই টিনের চালের নিচে বসে বৃষ্টি দেখা। শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো যেন জীবনের এক অমূল্য সম্পদ, যা কখনোই মলিন হবে না।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
X-Promotion
Daily Tasks
Comments Link:-
https://x.com/mohamad786FA/status/1965847825805345175?t=X3M0IqfCjBXUVqZQxa07pQ&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1965847653578904053?t=6FxH2_syc3bSsTTJ0z_now&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1965847418584576265?t=6FxH2_syc3bSsTTJ0z_now&s=19
এরকম মুহূর্তগুলো বড় হওয়ার পর জীবনে হয়ে থাকে এক সোনালী স্মৃতি। যখন এগুলো মনে হয় তখন মনের মধ্যে নতুন রকমের এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। যাই হোক আপনার অনুভূতির কথা জানতে পেরে ভালই লাগলো সেই সাথে আমার জীবনেরও কিছু স্মৃতি পুনরায় মনে পড়ে গেল আপনার পোস্ট পড়ে।
ভাইয়া আপনি তো আজকে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন।আসলে শৈশবকালের কথা মনে পড়লে এখনও কেমন যেন লাগে।বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে অনেক মজা করতাম, ঠিক আপনাদের মত আমরাও মাছ ধরতাম।যাই হোক খুব সুন্দর লাগলো পোস্টটি পড়ে।ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।