"শৈশবের বর্ষা আর নতুন পানির মাছ ধরার গল্প"
শৈশব মানেই হাজার রকমের আনন্দ আর দুষ্টুমিতে ভরা এক রঙিন অধ্যায়। আর গ্রামবাংলার শৈশব হলে তো কথাই নেই। বর্ষাকাল এলেই আমাদের গ্রাম যেন একেবারে নতুন রূপে সেজে উঠতো। চারপাশের ধানক্ষেত, খাল-বিল, পুকুর আর মাঠ ঘাটে থৈ থৈ পানি। মেঘলা আকাশ, কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, আবার কখনও টিনের চালের উপর টুপটাপ শব্দে ঝরঝর বৃষ্টি। আর এই সময়ই ছিল আমাদের মাছ ধরার সবচেয়ে মজার দিনগুলো।
প্রতিবছর বর্ষা এলেই গ্রামের খাল-বিলে নতুন পানি আসতে শুরু করতো। সেই পানির সাথে ভেসে আসতো নানা রকমের মাছ। শৈশবের বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সেই মাছ ধরার মজাটাই ছিল আলাদা। আমাদের ছোট্ট একটা দল ছিল আমি, সুমন, জুয়েল, বাবু আর আকাশ। সকাল হতেই আমরা সবাই একত্র হয়ে যেতাম। কারো হাতে ছিল বাঁশের তৈরি টোপাজাল, কারো হাতে পলো, কেউবা শুধু জাল নিয়ে। কারো আবার কিছুই নেই সে শুধু মাছ ধরার উত্তেজনাই উপভোগ করতো।পানি উঠতে উঠতে গ্রামের অনেক জায়গা প্লাবিত হতো। বিশেষ করে বড় বড় বিল আর পুকুরের পাড় উপচে যখন রাস্তার পাশে পানি চলে আসতো, তখন সেই অল্প পানিতে ছোট ছোট মাছ দেখা যেত। আমরা তখন পড়াশোনা ভুলে, মায়ের বকাঝকা এড়িয়ে নেমে পড়তাম সেই পানিতে। কেউ লুঙ্গি গুটিয়ে হাঁটুজল, কেউ কোমরজল, আবার কেউ সাঁতরে সোজা খালের মাঝখানে চলে যেত। মাছ ধরার এই সময়টাই ছিল বর্ষাকালের সবচেয়ে উপভোগ্য অংশ।
সবচেয়ে বেশি মাছ পাওয়া যেত যখন নতুন পানি খালে এসে পড়তো। পানির স্রোতের সাথে ভেসে আসতো টাকি, শিং, মাগুর, কই, পুঁটি, চিংড়ি, বোয়াল আর গজার মাছ। কখনো কখনো দেখা যেত ছোট ছোট কাঁচকি মাছের ঝাঁক। আমরা সবাই তখন একসাথে জাল নিয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যেতাম। কেউ কেউ পলো দিয়ে খালের তলদেশে ঝাঁপ দিয়ে মাছ তাড়া করতো। ছোটরা পানিতে চিৎ হয়ে শুয়ে মাছের গতিপথ দেখাতো। পানির ভেতরে এমন উত্তেজনা তৈরি হতো, যেন কোন যুদ্ধে নেমেছি।মাছ ধরার পর সেটা ভাগাভাগি করারও একটা নিয়ম ছিল। বড় মাছ বড়দের জন্য, আর ছোট ছোট মাছ আমরা ছোটরা নিজেদের ভাগে নিতাম। তবে মাঝে মাঝে বড় মাছ ধরতে পারলে সেটা নিয়ে শুরু হতো রীতিমতো ঝগড়া। কারো হাতে শিং মাছের কাঁটা বিঁধে যেত, কেউবা বোয়াল মাছের কাটায় কেটে নিতো। তবুও সেই আনন্দের কোনো কমতি ছিল না।মাঝে মাঝে আমরা কৌশলে মাছ ধরার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতাম। কেউ কলাপাতা ভাঁজ করে পুঁটি মাছ ধরার ফাঁদ বানাতো। কেউবা বাঁশ কেটে ছোট ছোট খাঁচার মতো বানিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখতো। রাতভর সেই খাঁচায় গিয়ে আটকা পড়তো মাছ। পরদিন ভোরবেলা উঠেই সেই ফাঁদ দেখতে ছুটে যেতাম।
সন্ধ্যার দিকে সবাই বাড়ি ফিরে আসতো। লুঙ্গি ভিজে একদম কাদা আর জলমাখা। মা বকা দিতেন, “এইতো! আবারও কাদায় গড়াগড়ি খেলি? শরীর খারাপ হবে।” তবুও ওই ধমকের মধ্যেই ছিল মায়ের ভালবাসা। তারপর সবাই মিলে ধুয়ে-মুছে মাছগুলো ভাগাভাগি করে নিতাম। বাড়ির উঠোনে ছোট্ট একটা চুলায় সেই মাছ ভাজা হত। লবণ আর কাঁচামরিচ দিয়ে কই মাছের ভাজা খাওয়ার সে কি স্বাদ!আজও বর্ষাকালে গ্রামের দিকে গেলে সেই দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। সেই পানির গন্ধ, খালের ঢেউ, মাছ ধরার উত্তেজনা, বন্ধুবান্ধবদের হাসি সবকিছু চোখের সামনে ভাসে। জীবন যতই আধুনিক হোক, শৈশবের সেই দিনগুলোর স্মৃতি হৃদয়ের এক কোণে আজও অমলিন।
এখন আর কেউ তেমন করে মাছ ধরতে যায় না। খাল-বিল শুকিয়ে যায়, অনেক জায়গায় নতুন পানিও আসে না। তবুও বর্ষা এলে মনের ভেতর কোথাও যেন কিশোর বয়সের সেই দিনগুলোর ঢেউ খেলে যায়। ইচ্ছা করে আবার লুঙ্গি গুটিয়ে খালে নেমে পড়ি, হাতে পলো নেই, তবুও স্মৃতির পানিতে মাছ ধরি।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
X-Promotion
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily Tasks
Comments Link:-
https://x.com/mohamad786FA/status/1942937625893187689?t=LMTe1vKlyab4GZufq9qKXQ&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1942937856311484770?t=tYDKOrxhvDxzUvFSF8vPlQ&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1942938056480489911?t=aYsPbzDGgHwofootfSiAbw&s=19
Ss
🎉 Congratulations!
Your post has been manually upvoted by the SteemX Team! 🚀
SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem ecosystem.
🔗 Visit us: www.steemx.org
✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5