"শৈশবে গ্রামের বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে গিয়ে পা ভেঙে ফেলার কাহিনী"
শৈশব মানেই দুষ্টুমি, খেলাধুলা আর অজস্র স্মৃতির ভাণ্ডার। আজও মনে আছে গ্রামের সেই মাঠের কথা, যেখানে বিকেল হলেই আমরা ছুটে যেতাম খেলতে। মাঠটা ছিল আমাদের আনন্দের ঠিকানা। ফুটবল, দড়ি লাফ, কানামাছি কত কিছুই না খেলতাম সেখানে। তবে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। বন্ধুরা মিলে একসাথে মাঠে দাঁড়ালেই যেন পৃথিবীটা হয়ে যেত আনন্দময়।
একদিন বিকেলের কথা। আকাশে মেঘ থাকলেও হালকা বাতাস বইছিল। আমরা সবাই ঠিক করলাম ফুটবল ম্যাচ হবে। দুই দলে ভাগ হলাম। আমি গেলাম আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের দলে। গ্রামের সেই ছোট্ট মাঠে যেন বিশ্বকাপ খেলার উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আমরা সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করছিলাম গোল করার। ছোট মাঠ হলেও খেলার মজা ছিল অফুরন্ত।খেলা চলতে চলতে এক সময় বলটা এল আমার দিকে। আমি তখন প্রাণপণে বল নিয়ে দৌড়াচ্ছি। গোলপোস্টের কাছে পৌঁছাতে আর কয়েক কদম বাকি। হঠাৎ আমার সামনে প্রতিপক্ষ দলের রাকিব এসে পড়ল। সে বল ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য ঝাঁপ দিল, আমিও জোরে পা বাড়ালাম। কিন্তু সেদিন যেন ভাগ্য আমার বিপরীতে ছিল। বলের পরিবর্তে আমাদের দুজনের পা জোরে ধাক্কা খেল। মুহূর্তের মধ্যেই আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম।
প্রথমে ভেবেছিলাম হালকা আঘাত। কিন্তু উঠে দাঁড়াতে গিয়েই বুঝলাম ব্যাপারটা অন্য রকম। পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলো, চোখে জল চলে এলো। বন্ধুরা ছুটে এল আমাকে তুলতে। কেউ পানি দিল, কেউ কাঁধে ভর দিল। তবুও আমি দাঁড়াতে পারলাম না। অবশেষে দুই বন্ধু মিলে আমাকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেল বাড়িতে পৌঁছেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে গেল। মা তো কেঁদে ফেলল। বাবা তাড়াহুড়ো করে গ্রামের হোমিও ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার দেখে বললেন, “এটা ভাঙা মনে হচ্ছে, শহরে নিয়ে গিয়ে এক্স-রে করতে হবে।” সেই কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। জীবনে প্রথম বুঝলাম পা ভাঙা মানে কী বড় কষ্ট।
সেই রাতে ভয় আর ব্যথার সাথে ঘুমিয়েছিলাম। পরদিন সকালে বাবা আমাকে নিয়ে গেলেন শহরের হাসপাতালে। এক্স-রে করে ডাক্তার নিশ্চিত করলেন, সত্যিই আমার পা ভেঙেছে। তারপর শুরু হলো প্লাস্টার করার ঝামেলা। সাদা সিমেন্টের মতো শক্ত প্লাস্টার দিয়ে পা বেঁধে দিল। তখন মনে হলো, এখন ক’দিন আর মাঠে দৌড়ানো সম্ভব নয়।প্রায় দুই মাস আমি বিছানায় বা খুঁটি ভর দিয়ে হাঁটলাম। সেই সময় বন্ধুরা প্রতিদিন আমার খোঁজ নিতে আসত। তারা খেলতে আসলে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আমি শুধু দেখতাম। খেলতে না পারার কষ্টটা তখন সবচেয়ে বেশি অনুভব করেছিলাম। তবে বন্ধুরা মাঝে মাঝে আমার পাশে বসে গল্প করত, কেউ আবার আমায় মিষ্টি এনে দিত।অবশেষে কয়েক মাস পর প্লাস্টার খোলা হলো। ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করলাম। আবারও মাঠে নামলাম, তবে এবার একটু সাবধানে। সেই ঘটনার পর শিখেছি, খেলাধুলার মজার মধ্যেও সাবধান থাকতে হয়।
আজ এত বছর পরে সেই দিনের কথা মনে পড়লে হাসিও পায়, আবার ব্যথাও লাগে। ফুটবল খেলতে গিয়ে পা ভাঙার সেই অভিজ্ঞতা কষ্টের হলেও বন্ধুত্ব, গ্রামের মাঠ আর শৈশবের স্মৃতিগুলোকে আরও গভীর করে দিয়েছে। শৈশব মানেই যে ঝুঁকি আর আনন্দে ভরা এক রঙিন অধ্যায়, সেই ঘটনার মাধ্যমে তা আমি নিজের জীবনে হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছি।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
X-Promotion
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily Tasks
Comments Link:-
https://x.com/mohamad786FA/status/1957856566180474909?t=faysLoJDezjQ3zBDagExWA&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1957856784028430521?t=hJ9pz-GjbL-lE8HWj2UUhQ&s=19
https://x.com/selina_akh/status/1957838173830066217?t=w08pw3EOiQo1v1i5y5zKBQ&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1957856993441640471?t=YoDNAoHgLn3IaDHRLApT1w&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1957857604459458758?t=E9PFA_e1vB0RBeTHjXXvGg&s=19
Ss