ঢেঁকির টুংটাং শব্দে হারিয়ে যাওয়া শিকড়ের গল্প ।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে ঢেঁকির টুংটাং শব্দে হারিয়ে যাওয়া শিকড়ের গল্প শেয়ার করবো ।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। কিন্তু এক সময় ছিল যখন বাংলার প্রতিটি গ্রাম্য পরিবারে ঢেঁকির টুংটাং শব্দ ছিল এক অভিন্ন চিত্র। ঘরের উঠানে মাটির উপর কাঠের তৈরি ঢেঁকি বসানো থাকত, আর পরিবারের গৃহিণীরা কিংবা তরুণীরা মিলিত হয়ে সেই ঢেঁকির মাধ্যমে ধান ভেঙে চাল, চাল ভেঙে আটা তৈরি করতেন।এক সময় ছিল না কোন ধরনের আধুনিক আটা ভাঙ্গার মেশিন, আটা ভাঙ্গার জন্য একমাত্র উপায় ছিল ঢেঁকি। এই ঢেঁকি শুধু মাত্র আটা ভাঙ্গার জন্য সীমাবদ্ধ নয়, এই ঢেঁকি দিয়ে ধান ভাঙ্গা থেকে শুরু করে সকল ধরনের কাজ হয়েছিল।

এই প্রাচীন যন্ত্রটির গঠন ছিল অত্যন্ত সহজ ও বুদ্ধিদীপ্ত। মাটির বা কাঠের মেঝেতে স্থাপন করা হতো ঢেঁকি। একপাশে ভারি কাঠের বোল, অপর পাশে হালকা কাঠের হাতল। একজন মানুষ পায়ে চাপ দিয়ে হাতল উঠাতো, ফলে অপর প্রান্তের বোল নিচে পড়ে চাল ভেঙে দিত। বারবার এভাবে চাপ দিয়ে চাল বা ধান ভেঙে আটা, চাল কিংবা চালের গুঁড়ো তৈরি করা হতো।আটা তৈরির এই প্রক্রিয়াটির মধ্যে ছিল অদ্ভুত এক পরিশ্রম, কিন্তু সেই পরিশ্রমে ছিল তৃপ্তি। ঢেঁকির মাধ্যমে তৈরি আটা অনেক বেশি খাঁটি ও স্বাস্থ্যসম্মত হতো। কোনও ধরনের মেশিন ব্যবহার না করেও নারীরা ঘরোয়া পরিবেশেই পরিশ্রম করে স্নেহে-ভালবাসায় আটা তৈরি।

ঢেঁকি ছিল কেবলমাত্র একটি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করার যন্ত্রই নয়, এটি ছিল নারীদের পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশার, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যমও। একসাথে ঢেঁকি চালাতে চালাতে তারা হাস্যরস করত, গান গাইত, গল্প করত। এই রকম মুহূর্ত গুলোই বাংলার গ্রামীণ সমাজের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছিল।আটা তৈরির পদ্ধতিটি ছিল খুবই পরিশ্রমসাধ্য, তবুও এতে ছিল এক ধরনের নিজস্ব আনন্দ। ধান থেকে প্রথমে চাল তৈরি করা হতো ঢেঁকির সাহায্যে। এরপর সেই চাল রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে আবার ঢেঁকিতে ভেঙে তৈরি হতো আটা।

এই আটা দিয়ে তৈরি রুটির স্বাদই ছিল অন্যরকম একেবারে খাঁটি, কোনোরকম মেশানো ছাড়াই। ঢেঁকির আটা থেকে তৈরি খাবারে ছিল প্রকৃতির ঘ্রাণ, পরিশ্রমের তৃপ্তি ও ভালোবাসার ছোঁয়া।একটি ঢেঁকি চালাতে হতো দুই বা তিনজন মিলে। একজন পায়ে চাপ দিয়ে ঢেঁকি ফেলে দিতেন নিচের দিকে, আর অন্য একজন ঢেঁকির মুখে চাল ঢালতেন। ভারসাম্য রেখে এই কাজ চালিয়ে যেতে হতো ধৈর্য আর দক্ষতা নিয়ে। এই সম্মিলিত শ্রম ও সহযোগিতার মধ্য দিয়েই তৈরি হতো আটা, আর তৈরি হতো পারস্পরিক আত্মিক বন্ধন। অনেক মহিলা একসাথে একত্রিত হয়ে ঢেঁকি দিয়ে আটা তৈরি করবেন। বিশেষ করে যখন শীতকালে পিঠে তৈরি করার ধুম পড়ে যেত, তখন এই ঢেঁকির ব্যবহার হতো অনেক বেশি।

আজ আমরা যান্ত্রিক জীবনের চাপে হারিয়ে ফেলেছি অনেক কিছুর মতো এই ঢেঁকির কাহিনীও। মেশিনে তৈরি করা আটার সুবিধা থাকলেও, তাতে মিশে থাকে না সেই প্রাচীন বাংলার ঘামের গন্ধ, সেই আন্তরিকতার ছাপ। ঢেঁকির শব্দে যেন এক সময়ের জীবনযাত্রার ধ্বনি বাজত, আর এখন তা রয়ে গেছে শুধুই স্মৃতি হয়ে।তবুও কিছু কিছু গ্রামে এখনও কোথাও কোথাও দেখা মেলে পুরোনো ঢেঁকির। অনেকেই নস্টালজিয়ায় সেই স্মৃতিগুলো ধরে রাখেন ঘরের কোণে একটি পুরনো ঢেঁকি সাজিয়ে রেখে। কেউ কেউ আবার ভিডিও করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন, যাতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে সেই পুরনো ঐতিহ্যের গল্প। বর্তমান সময়ের ছেলে মেয়েরা এই পুরাতন ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগত নন।

ঢেঁকি কেবল একটি যন্ত্রই ছিল না, এটি ছিল বাংলার নারীর শক্তি, ধৈর্য, ঐক্য এবং সংস্কৃতির এক জীবন্ত নিদর্শন। আজকের প্রজন্মের কাছে হয়তো এটি শুধুই একটি স্মৃতিচিহ্ন, কিন্তু এই ঢেঁকি আমাদের শিকড়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি অমূল্য চিহ্ন, যা কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।