সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন,শান্তিতে বাঁচুন

আমি @arpita007 বাংলাদেশ থেকে। কেমন আছেন সকল বাংলাদেশী এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু -বান্ধবীগণ? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজকে ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে আবার নতুন একটি ব্লগ নিয়ে ।

সোর্স

বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতির ফলে মানুষের জীবনযাত্রা যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি কিছু নেতিবাচক প্রভাবও সমাজে বিস্তার লাভ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন ধরুন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার অনেক সময় ব্যক্তিগত শান্তি, মানসিক সুস্থতা এবং পারিবারিক সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই অনেকে এখন বিশ্বাস করছেন যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন, শান্তিতে বাঁচুন। এই বাক্যটি নিছক একটি পরামর্শ নয়, বরং একটি বাস্তবমুখী জীবনদর্শনের প্রতিফলন।

প্রথমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানসিক চাপ ও হতাশা বাড়ায়। বিভিন্ন মানুষের আনন্দঘন মুহূর্ত, সাফল্য কিংবা ভ্রমণের ছবি দেখে নিজের জীবনকে অনেকেই ছোট মনে করেন। এতে হীনমন্যতা ও ঈর্ষা জন্ম নেয়। অনলাইনে লাইকের সংখ্যা, ফলোয়ারের পরিমাণ, কিংবা কমেন্টের প্রশংসা অনেককেই নেশাগ্রস্ত করে তোলে। ফলাফলস্বরূপ মানুষ নিজের আসল পরিচয় ভুলে গিয়ে একটি কৃত্রিম চরিত্র ধারণ করতে শুরু করে।

এই মাধ্যমগুলোতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পড়াশোনা, কাজকর্ম, ঘুম, পারিবারিক সময়,সব কিছুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গড়পড়তা একজন ব্যবহারকারী দিনে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটায়। এই সময়টুকু যদি আত্মউন্নয়ন, পড়াশোনা, সৃজনশীলতা বা পরিবারকে দেওয়া যেত, তাহলে তা অনেক বেশি ইতিবাচক ফল বয়ে আনত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুজব ও ভ্রান্ত তথ্য ছড়ানোর অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। ভুল তথ্য অপপ্রচার কিংবা ঘৃণামূলক বক্তব্য সমাজে বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষ ছড়ায়। অনেক সময় এই মাধ্যমগুলোর কারণে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, কারণ মানুষ মনের ভাব প্রকাশে সততা বা দায়িত্ববোধ বজায় রাখে না। অনেকেই অনলাইনে এমন কিছু বলে বা করে, যা বাস্তব জীবনে করার সাহস পায় না।

এছাড়াও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়ে। অনেকেই নিজের প্রতিটি মুহূর্ত অনলাইনে শেয়ার করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে করে ব্যক্তিগত তথ্য, অবস্থান, ছবি বা ভিডিও হ্যাকারদের হাতে পড়ে যেতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ভুল তথ্য, প্রতারণা বা সাইবার বুলিং অনেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

অন্যদিকে যখন কেউ এই মাধ্যমগুলো থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়, তখন সে নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে শেখে। বই পড়া, প্রকৃতির সান্নিধ্য, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বাস্তব সময় কাটানো, কিংবা কোনো নতুন স্কিল শেখা এইসব শান্তি ও তৃপ্তি এনে দেয়। মনের চাপ কমে, ঘুম ভালো হয়, মনোযোগ বাড়ে, এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।

সবশেষে বলা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। কিন্তু এর অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার আমাদের মানসিক শান্তি ও বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই সময় এসেছে এই বিষয়ে সচেতন হওয়ার। যেটুকু প্রয়োজন, শুধু সেটুকুই ব্যবহার করা উচিত। আর যখন দেখবেন এটি আপনার জীবনে অশান্তি তৈরি করছে—তখন সেখান থেকে দূরে সরে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

অতএব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে কিছুটা দূরে থেকে, নিজেকে খুঁজে পাওয়া এবং শান্তিতে বেঁচে থাকাই হোক আমাদের জীবনের নতুন লক্ষ্য।

আমি অর্পিতা নওশিন তিশা। আমি বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার শখের মধ্যে রান্না করতে ভালোবাসি এবং গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসি । তাছাড়া অবসর সময়ে ছবি আঁকতে,গান শুনতে এবং বিভিন্ন ধরনের কমেডি, থ্রিলার, হরর মুভি দেখতে পছন্দ করি। এছাড়াও হিন্দি ডাবিং করা নাটকগুলো দেখতে পছন্দ করি।