মাদক যখন সামাজিকব্যাধি!
17-08-25
০২ ভাদ্র , ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন। তো ভালো সবসময় থাকা যায় না আসলে। কারণ মাঝে মাঝে চারপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা আপনাকে ভালো থাকতে দিবে না। চারপাশের অবস্থা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলবে। আসলে মাদক যে হারে ছড়িয়ে পরছে তাতে মনে হয় সমাজ ও রাষ্ট্র দুটোই দারুনভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। আপনাদের সাথে একটা ঘটনা শেয়ার করি। আমি একটা জব ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম ঢাকার মহাখালীতে। ঘড়িতে তখন সকাল ছয়টা কি সাতটা বাজে। স্বভাবতই ঢাকায় সকাল সকাল গাড়ির আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। মানুষজন খুব কম। তিনটি ছেলে। ওভার ব্রিজের উপরে বসে আছে। বয়স সম্ভবত ৪-৭ এর মধ্যে হবে। এরা ভালো মন্দের কি বুঝে! কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এদের হাতে গাম! যেটা কাগজে লাগিয়ে নেশার মতো মুখ দিয়ে টানছে। তিনটা শিশুই মাথা ঘুড়িয়ে পরে যাওয়ার মতো অবস্থা! তবুও তারা একের পর এক টেনে যাচ্ছে।
আমি যখন তাদের কাছে গিয়ে ধমক দিলাম! তখন তাদের উত্তর তোর বাপের টাকায় খায়। এখন কথা হলো কার ভালো চাইলাম আমি। এজন্য আসলে কারো ভালো চাওয়ার আগে ভেবে চাইতে হবে। শিশুগুলো পথশিশু নিঃসন্দেহে। বাবা-মা থাকলে হয়তো তাদের এই করুণ পরিণতি হতো না। এখন কথা হলো এতো অল্প বয়সে কাদের কাছ থেকে তারা মাদক সম্পর্কে জেনেছে? নিশ্চয় সমাজের কিছু কতিপয় মাদকাসক্ত লোকের কাছ থেকে যাদের থেকে তারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। আপনি একটা বিষয় খেয়াল করেন। এতো অল্প বয়সে যদি মাদকাসক্ত হয়ে যায় তাহলে বয়স বাড়ার সময় তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে না এটার কি গ্যারান্টি থাকে। এমন শিশু শৈশব থেকেই মাদকের সাথে জড়িয়ে পরেছে। কর্মশক্তি, স্মৃতিশক্তি সবই কমতে শুরু করবে। শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হবে। অপরাধচক্র গড়ে উঠবে একে একে।
প্রথম আলোর একটা প্রতিবেদনে দেখেছিলাম ডিএনসি এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৮৩ লক্ষ মানুষ মাদকের সাথে জড়িত! তার মানে সংখ্যাটা একটাবার খেয়াল করেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ কিন্তু পরোক্ষভাবে এটার সাথে যুক্ত! মাদক তরুণদের মধ্যেই যে সীমাবদ্ধ থাকছে ব্যাপারটা কিন্তু এমন না! মেয়েরাও এখন মাদকের সাথে জড়িয়ে পরেছে। বিষয়গুলো আসলে অবাক করার মতো হলেও এটাই বাস্তব চিত্র বাংলাদেশের। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা আসলে একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রের শত্রু বলা যেতে পারে। কারণ মাদকের টাকা না পেলে তারা নানারকম অপরাধমূলক কাজ করে ফেলতে পারে। এমনি টাকা জোগাড় করার জন্য নিজের মা বাবাকে পর্যন্ত মেরে ফেলতে পারে।
যেহেতু বাংলাদেশে বৃহৎ একটা অংশ মাদকের সাথে জড়িত এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। বিশেষ করে আইন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মাদকের সাথে জড়িত কে বা কারা তা শনাক্ত করতে হবে এবং যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকতে হবে। মাদকের চক্র যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। শৈশব থেকে যথাযথ পারিবারিক শিক্ষা দিতে হবে। মাদককে না বলার চর্চা করতে হবে এবং মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গদোষে যেন লোহা না ভাসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে উঠতি বয়সী ছেলেরা বন্ধুদের পাল্লায় পরে মাদকে জরিয়ে পরে। আর একবার জড়িয়ে পরলে সেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। এজন্য যথাসম্ভব বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে।
আসলে আমাদের বন্ধুরা অনেকেই ধূমপান করে। এটা দিয়েই সবাই উচ্চপর্যায়ের মাদকে জড়িয়ে পরে। ঈদে বাড়িতে গেলে তাদের সাথে দেখা হয়! দেখা হলেই সিগারেট খেতে বলে! আমি ডিরেক্ট না করে দেয়। অনেকেই এমন আছে যে বন্ধুত্ব রক্ষার্থে না করতে পারে না। একবার খেয়েই দেখি না হয়! আর সে একবার শুরু হলে থামার খবর থাকে না। এজন্য মাদককে না বলার অভ্যাসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর বর্তমানে সিগারেট খাওয়াটা স্মার্টনেস ভাবা হয়! আপনি সিগারেট না খেলে আনস্মার্ট! অথচ যারা এটা ভাবে তারা নিজেরাও জানে না তারা কতটা অধমের দিকে গেছে। আশা করছি যাদের এমন চিন্তা আছে তাদের চিন্তার পরিবর্তন হবে। মাদককের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তবেই সমাজ ও রাষ্ট্র সুন্দর হবে।
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি করছি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় (ডুয়েট) থেকে । পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত চার বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.