প্রথম বার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে ব্লগিং এর টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য ঈদ মার্কেট ।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে steemit প্ল্যাটফর্মে ব্লগিং করে প্রথম ইনকামের টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের উপহার কেনাকাটা করার অনুভূতি শেয়ার করবো ।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

Steemit প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আমার যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। একেবারে নতুন একজন ব্যবহারকারী হিসেবে আমি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হই। তখন কিছুই জানতাম না , না কনটেন্ট তৈরি, না কমিউনিটি নিয়ে কাজ করার ধারণা ছিল। প্রথমদিকে সবকিছুই নতুন লাগছিল, কিছুটা সংশয়ও কাজ করছিল মনের ভেতরে। ঠিক কতদূর এগোতে পারব, আদৌ কিছু করতে পারব কিনা, এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল মনে। আমাকে রিয়াদ তার মত করে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন পুরো বিষয় গুলো। তবুও আমার সংকোচ বোধ কাজ করতো।সব কিছুর মাঝে আমি হাল ছাড়িনি, আমি চেষ্টা করে গিয়েছি।

আমি যুক্ত হয়েছিলাম আমার বাংলা ব্লগ (ABB school )এ সেখানে আমি ছিলাম প্রায় ৮ মাস। অনেক চেষ্টা, ধৈর্য আর শেখার পর জানুয়ারি মাসে আমি ভেরিফাইড মেম্বার হিসেবে স্বীকৃতি পাই। এই স্বীকৃতি আমার আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সহায়তা, ভালোবাসা আর উৎসাহ আমার পথ চলাকে অনেক সহজ করে তুলেছে। তারা আমাকে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। জীবনের কিছু মুহূর্ত থাকে, যা আমাদের হৃদয়ের গভীরে চিরদিনের জন্য গেঁথে থাকে।Steemit-এর সঙ্গে আমার এই যাত্রাটাও ঠিক তেমনই একটি অনুভূতি হয়ে রইলো।

শুরুর কৌতূহল আর শখের জায়গা থেকে শুরু করে এই প্ল্যাটফর্মটি আমার জীবনে ধীরে ধীরে ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতার জায়গা দখল করে নেয়। আর সেই ভালোবাসার ফসল হিসেবেই আমি প্রথমবারের মতো Steemit থেকে অর্থ উপার্জন করতে পেরেছি।গত পরশুদিন, অনেক ধৈর্য ও পরিশ্রমের ফল হিসেবে আমি ৬০০ স্টিম বিক্রি করে হাতে কিছু টাকা পেয়েছি। এটি ছিল আমার জীবনের প্রথম অনলাইন আয়ের অভিজ্ঞতা একটি আমার কাছে একেবারে বিশেষ এবং আবেগপূর্ণ মুহূর্ত।

টাকা হাতে পেয়েই মনে হলো, এই কুরবানির ঈদে পরিবারের সবার জন্য কিছু না কিছু উপহার কিনে দেওয়া যায়। যদিও পরিমাণে বেশি নয়, কিন্তু নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে প্রিয়জনদের জন্য কিছু কেনাকাটা করার যে আনন্দ, তা সত্যিই অন্যরকম। সিদ্ধান্ত নিলাম, বাজারে গিয়ে এক এক করে সবার জন্য কিছু না কিছু কিনব। সকালে বেরিয়ে পড়লাম ব্যাগ হাতে নিয়ে। দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে পোশাক দেখলাম, তুলনা করলাম, দরদাম করলাম। আব্বুর জন্য সুন্দর এক সেট পাঞ্জাবি পছন্দ করলাম, যেটা তিনি ঈদের দিন নামাজে পরতে পারবেন। আম্মুর জন্য বেছে নিলাম নরম সুতি কাপড়ে আরামদায়ক একটা কামিজ। বোনের জন্য রঙিন কাজ করা একটা থ্রি-পিস আর ছোট ভাইয়ের জন্য ট্রেন্ডি ডিজাইনের একটা শার্ট বেছে নিলাম। কারো জন্য রঙিন জামা, কারো জন্য এক জোড়া পছন্দের স্যান্ডেল প্রত্যেকটা জিনিস যেন আমার মন থেকে বাছাই করা। ঘুরতে ঘুরতে সময় কখন যে কেটে গেল, টেরই পাইনি।

সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ছিল, যখন আমি ব্যাগভর্তি উপহার নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। সবাইকে ডেকে ডেকে জিনিসগুলো তুলে দিলাম হাতে। আম্মুর চোখে খুশির এক ঝিলিক, আব্বুর মুখে গর্বের হাসি, ছোটদের চিৎকার করে ওঠা আনন্দ।সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, আমি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ। আম্মু বলে উঠল, "তুই নিজের ইনকামের টাকায় আমাদের জন্য এত কিছু কিনেছিস, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এই অনুভূতির সঙ্গে আর কোনো কিছুর তুলনা চলে না। আমি বুঝতে পারলাম, শুধু টাকাই নয়, তার পেছনে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা, আন্তরিকতা আর আত্মনির্ভরতার ছোঁয়া মানুষকে কতটা কাছের করে তোলে।

এভাবে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে পারাটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় অর্জনগুলোর একটি। Steemit প্ল্যাটফর্মকে আমি অন্তরের গভীর থেকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ এই প্ল্যাটফর্ম আমার মতো একজন সাধারণ মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রথম ধাপটা পেরোতে সাহায্য করেছে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা, যারা প্রতিনিয়ত পাশে থেকেছে, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, একাগ্রতা আর ধৈর্য ধরে কাজ করলে, প্রত্যেকেই সফল হতে পারে।

তবে মজার ব্যাপার হলো, সবার জন্য এত কিছু কিনে নিজের জন্য কিছু কেনা আর হয়ে ওঠেনি। একটা জুতা আর একটা থ্রিপিস কেনার ইচ্ছা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত সেই ইচ্ছেটা ইচ্ছাই রয়ে গেল। সব ব্যাগ গুছিয়ে দেখে হালকা একটা আফসোস জেগেছিল ।"আহা, নিজের জন্য কিছুই নেওয়া হলো না!" তারপরেই মনে হলো, যাদের মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি, সেই তৃপ্তি আমার সব চেয়ে বড় উপহার।তবে ঠিক একেবারে খালি হাতে ফিরিনি। অনেক খোঁজা খুঁজির পর নিজের জন্যও ছোটখাটো কিছু কিনেছি, যেটা আমার এই বিশেষ দিনটার স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে।

দোকানে অত ভিড় ছিল যে, ফটোগ্রাফারের মতো আলাদা করে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। হাতে সময়ও ছিল না, আর চারদিকে ভিড় এমনই ছিল যে পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত মিলছিল না। তবুও বাইরে থেকে কয়েকটা মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি করে রেখেছি ।শুধু আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য। এই ছবি গুলো আমার প্রথম ইনকামের প্রথম ঈদের আনন্দের প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে।

এই ঈদে আমার উপহারগুলো ছিল হয়তো ছোট ছোট, কিন্তু তার পেছনে লুকিয়ে ছিল ভালোবাসা, শ্রম আর প্রথম ইনকামের উচ্ছ্বাস। আর এই অনুভূতিটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।