পার্বতীপুর মামা ভাগ্নে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে একদিন।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে পার্বতীপুরে ‘মামা ভাগ্নে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করার অনুভূতি শেয়ার করবো ।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

কখনো কখনো জীবনের ব্যস্ততা আমাদের এমন কিছু জায়গায় নিয়ে যায়, যেখান থেকে আমরা কিছু সুন্দর অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফিরি। ঠিক তেমনই এক দিনে আমাকে যেতে হয়েছিল পার্বতীপুরে, একটি দরকারি কাজের জন্য। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে রওনা দিয়ে ছিলাম, যেন সময় মতো পৌঁছে কাজটা সেরে নেওয়া যায়।সব কিছু ঠিকঠাক মতোই হলো, তবে কাজ শেষ হতে হতে দুপুর গড়িয়ে গেল। তখন শরীর ছিল ক্লান্ত আর পেট জ্বলছিল ক্ষুধায়। হঠাৎ মনে পড়ল বহুদিন ধরে শোনা এক নাম পার্বতীপুরের ‘মামা ভাগ্নে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর কালা ভুনা নাকি রীতিমতো বিখ্যাত, এমনটা অনেকের মুখেই শুনেছি। এতবার শোনার পরও যাওয়া হয় নি কখনো, কারণ জায়গাটা চিনতাম না। তাই ফোন বের করে গুগল ম্যাপে লোকেশন সার্চ করলাম।

ঠিকানা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে এক রিকশায় উঠে পড়লাম। রিকশা ধীরে ধীরে শহরের অলিগলি পেরিয়ে নিয়ে চলল আমাকে সেই বহু চর্চিত হোটেলের দিকে। প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট পর পৌঁছালাম “মামা ভাগ্নে হোটেল” এর সামনে। বাইরের দিকে চোখে পড়ল পরিচ্ছন্ন ও সাধারণ এক পরিবেশ কোনো বাড়াবাড়ি নেই, আবার অবহেলা ও না। একধরনের সাদামাটা অথচ বিশ্বাস যোগ্যতা ভরা দৃশ্য।রেস্টুরেন্টে ঢুকেই চোখে পড়ল গোছানো টেবিল-চেয়ার, দেয়ালে সাদাসিধে সাজসজ্জা, আর খাবারের গন্ধে মন ভরে উঠল। যেন এক নিমেষেই ক্লান্তির ছায়া কেটে গেল। সোজা গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে একটা টেবিলে বসে পড়লাম। পাশে বসা লোকদের প্লেটের দিকে চোখ গেল ।নানান রকম তরকারি, গরম গরম পরোটা, আর কালো রঙের রসে টইটম্বুর মাংসের টুকরো। তখন বুঝলাম, আমি ঠিক জায়গাতেই এসেছি।

সঙ্গে সঙ্গে একজন কর্মচারী এসে অর্ডার নিতে চাইলেন। আমি বললাম এক প্লেট সাদা ভাত, সঙ্গে বুটের ডাল আর মুরগির মাংসের কালা ভুনা দিতে। শুনেছিলাম এখানে তিন ধরনের কালা ভুনা পাওয়া যায়। আমি মুরগির মাংসের কালা ভুনা বেছে নিলাম । মুরগির মাংস আমার কাছে বেশ ভালো লাগে ।তবে ঢোকার সময় চোখে পড়েছিল, গরম গরম পরোটা ভাজা হচ্ছে রেঁধুনির হাতে।সেই দৃশ্যটা তখন থেকেই মনকে টানছিল। তাই শেষ মুহূর্তে দুটো পরোটাও অর্ডার করে ফেললাম। আসলে এই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী গুলোর ব্যবহার আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। কেননা তারা সবার সাথে খুবই সুন্দর ব্যবহার করে থাকেন। আমার সঙ্গে ও বেশ ভালো ব্যবহার করেছিলেন তারা।

খাবার খুব দেরি না করেই চলে এল। প্লেটে গরম গরম সাদা ভাত, পাশে ডালের বাটি, আর একপাশে টকটকে কালচে রঙের মুরগির কালা ভুনা।রস-মশলায় ভেজা, সুগন্ধে মন ভরিয়ে দিচ্ছিল। পরোটাও একদম ঝরঝরে আর নরম, খেতেই বোঝা গেল নতুন করে ভাজা। খেতে খেতে বুঝতে পারলাম, এ যেন শুধু খাবার নয়।এটা যেন এক ধরনের গল্প, যা স্বাদ দিয়ে বলা হচ্ছে।মুরগির মাংস ছিল অত্যন্ত নরম, আর কালা ভুনার মশলা এতটাই নিখুঁতভাবে রাঁধা যে প্রতিটি কামড়েই মুখ ভরে যাচ্ছিল স্বাদের বিস্ফোরণে। বুটের ডাল ছিল ঝোলাল আর হালকা ঝাল, ভাতের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে গেছে। পরোটার সঙ্গে এক কামড়ে মাংসের টুকরো মুখে তুলতেই একেবারে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল তৃপ্তিতে।

দুপুরের তীব্র ক্ষুধা আর ক্লান্তি যেন পুরোপুরি মিটে গেল এই একবেলার খাবারে। খাওয়ার পর ঠান্ডা পানি খেয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম।মনে হচ্ছিল এমন শান্তির মুহূর্ত যেন বহুদিন পর পেলাম। বিল মিটিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলাম।বের হতেই মনে হলো, আজকের দিনটা শুধু কাজে নয়, খাবারের স্বাদেও মনে থেকে যাবে। মামা ভাগ্নে হোটেলে খাওয়ার এই অভিজ্ঞতা এতটাই তৃপ্তিদায়ক ছিল যে ভবিষ্যতে যখনই পার্বতীপুরে আসা হবে, তখন একবার হলেও এখানে ঢুঁ মারতে ভুল করব না।এই রকম ছোটখাটো ভ্রমণেও যে এতটা মনের খোরাক পাওয়া যায়, সেটাই আজ নতুন করে বুঝলাম।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।