Wordsmiths Fiction Week 2: Season 24 – The Envelope
গল্পপ্রিয় স্টিমিয়ান, কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। Steemit Challenge Season 24 এর ফিকশন চ্যালেঞ্জে অংশ গ্রহণের জন্য আমি এই গল্পটি প্রস্তুত করেছি। চলুন, জেনে আসি কি হয়েছিলো দিয়েগোর জীবনে।

Theme
Diego’s night shifts at the 24-hour gas station were usually chill. A few truckers passing through, some tired college kids grabbing energy drinks, and the occasional confused tourist asking for directions. Nothing out of the ordinary. But on the seventh night of his new schedule, things got weird.
At exactly 2:17 in the morning, a rusted blue sedan pulled into the lot. The driver didn’t get out. He just sat there, staring straight at Diego through the glass for a few seconds, then drove off. It was odd, but not scary. At first.
When it happened again the next night, and the one after that, Diego started feeling uneasy. The guy never did anything. Just watched. Like he was waiting for something. Or someone.
Diego told his supervisor, who barely looked up from his old computer. “People are weird,” he mumbled, typing one-handed while sipping gas station coffee.
Still, Diego couldn’t shake it. The man’s face looked kind of familiar, though he couldn’t place it. On the fourth night, Diego finally stepped outside to ask what was going on. But the sedan had already disappeared.
Later that shift, while taking out the trash, Diego spotted something behind the ice machine. A plain white envelope. His name was written on the front in neat, block letters.
খামের উপর দিয়েগো তার নিজের নাম দেখে ভয় পেয়ে যায়। চোখে প্রশ্ন নিয়ে আশেপাশে তাকায়। ওই মুহূর্তে অফিস রুমে তার সুপারভাইজার ব্যতীত আর কেউ ছিলনা। সুপারভাইজার তার স্বভাবগতভাবেই কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। দিয়েগো একবার ভাবল তার কাছে গিয়ে তাকে সবকিছু খুলে বলবে। কিন্তু আগেরবার যখন সে ভালো প্রতি উত্তর পায়নি, তাই সে ভাবলো সুপারভাইজারকে জানিয়ে লাভ কি? দিয়েগো খামটি তার পকেটে চালান দিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেল।
বাড়ি গিয়ে সে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ঘুমোতে গেল। কিন্তু কোন ভাবেই তার ঘুম আসছিল না। বারবারই খামটির কথা তার মনে পড়ছিল। সে জানেওনা খামের ভিতরে কি লেখা আছে। তার ভয় হচ্ছে সেখানে কি লেখা আছে তা নিয়ে। দিয়েগো খামের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু কোন অবস্থাতেই তার ঘুম আসছিল না। অবশেষে দিয়েগো হামটি হাতে নিল এবং খুলে দেখল। সেখানে কেবলমাত্র একটি তারিখ লেখা।
তারিখ দেখে কিছুই বুঝল না দিয়েগো। ভাবতে লাগলো এই দিনে কি হয়েছিল? হিসেব করে দেখলো তখন তার বয়স ছিল ৫ বছর। কিছুই মনে নেই তার। তবে এটা জানে, ছোটবেলায় তার বাবা মারা গিয়েছিল। খুব ভোরে তার বাবা বাসা থেকে বের হয়েছিল। সেটাই শেষ বার সে তার বাবাকে জীবিত দেখেছিল। তারপর দেখেছে হাসপাতালের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায়। তার বাবা কথা বলছিল না, নড়ছিল না। কেউ একজন তার বাবাকে মেরে ফেলেছিল। পরে জানতে পেরেছে কোন ছিনতাইকারের আক্রমণে তার বাবা মারা গেছে।
এমন সময় তার মা সেখানে এসো উপস্থিত হয়। এসে তাকে ডাক দিয়ে বলল,
তুমি এখনো ঘুমাওনি?
না মা। আমার ঘুম আসছে না।
কেন?
এমনি। তুমি যাও। আমি এখনই ঘুমিয়ে পড়বো।
সে তার মাকে প্রকৃত ঘটনাটি জানাতে ইতস্ততাবোধ করছিল। সে ভয় পাচ্ছে যদি তার মা ঘটনাটি জেনে তার মাও ভয় পেয়ে যায়। যার কারণে সে ঘটনাটি লুকায় তার মায়ের কাছ থেকে। কিন্তু দিয়েগোর কোনভাবেই ঘুম আসছিল না। তার বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। আবছা আবছা ভাবে বাবার চেহারাটা তার মনের কোণে ভেসে উঠছে। সে জানেনা কে বা কারা কেন তার বাবাকে হত্যা করেছে। এসব নিয়ে কখনো ভাবার সময় পায়নি।
তার বাবা মারা যাওয়ার পর খুব কষ্ট করে তার মা তাদের এই ছোট্ট সংসারটি টেনেছে। অভাবের তাড়নায় দিয়েগো বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেনি। তার বাবাও তাদের জন্য তেমন কিছু রেখে যায়নি। গ্রামে একটা বাড়ি আছে তাদের। কিন্তু সেখানে তাদের থাকা হয়না। জীবিকার তাগিদে তারা এই মফস্বল শহরে বাসা বেধেছে। তার মা একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। আর সে কাজ করে সেই পেট্রোল পাম্পে। বাবা থাকলে হয়তো অন্যরকম হতো তার জীবন। বাবার জন্য তার খুব মায়া হচ্ছে। চেহারাটা পুরোপুরি মনে নেই। কেবল মনে আছে তার বাবা ছিল যথেষ্ট লম্বা, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত বিধ্বস্ত অবস্থায় এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল সে।
বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো দিয়েগো। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে তার কাছে। মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে। তার মা অনেক আগেই তার কর্মস্থলে চলে গিয়েছে। খাবার রান্না করে রেখে গেছে তার জন্য। দিয়েগো খাবার খেয়ে আবার খামটি হাতে নিয়ে বসলো। ভেতরের লেখাটি বের করল। ভাবতে লাগলো কি হয়েছে সেদিন? তার কেন যেন সন্দেহ হলো এই চিঠি এবং তারিখের সাথে তার বাবার কোন সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কি সেটা তাকে অবশ্যই জানতে হবে। সে ঠিক করলো রাতে তার মাকে তার বাবার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে।
রাতে খাবারের সময় দিয়েগো তার মাকে জিজ্ঞাসা করলঃ-
মা, গতরাতে বাবার কথা বেশ মনে পড়েছে। বাবা কবে আর কিভাবে মারা গেছে? খুব জানতে ইচ্ছা করছে।
স্বামীর কথা মনে পড়ায় মেলিন্দ্রা নিজেও কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। তারা একে অপরকে অনেক ভালোবাসতো। তাদের অভাবী সংসারে ভালোবাসার কমতি ছিল না। মনে হল যেন চোখ মুছলেন। বলল,
তোমার বাবা সেদিন সকালে খাবার খেয়ে বের হয়েছে। সাথে আমার দেওয়া দুপুরের খাবারের বাটিটি নিয়ে গিয়েছে। রাতে ফিরতে দেরি হচ্ছিল। মাঝে মাঝেই দেরি করত। ভাবলাম আজও সেরকমই কিছু একটা হবে। হঠাৎ পুলিশ আসলো মধ্যরাতে। এসে জানালো, আপনি কি মেলিন্দ্রা রদ্রিগেজ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন বলল, আপনাকে আমাদের সাথে হাসপাতালে যেতে হবে। একটু সমস্যা হয়েছে।'' আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি তোমাকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে ছুটলাম। সেখানে গিয়ে দেখি তোমার বাবার রক্তাক্ত নিথর দেহ হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছে। পুলিশ জানালো, কেউ একজন থানায় এসে খবর দিয়েছে রাস্তায় একটি লাশ পড়ে আছে। আমরা সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করি। সম্ভবত কোন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছল এবং শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনটাই তাকে দিতে হয়েছে। আমরা এই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। আমরা খুবই দুঃখিত। সহমর্মিতা জানানোর ভাষা নেই। তোমার বাবার মৃত্যুর বিষয় এটুকুই জানি আমি।
দিয়েগো তখন জিজ্ঞাসা করল,
মা, তুমি কি বলতে পারবে সেদিন কত তারিখ ছিল?
তার মা মনেকরার চেষ্টা করল। বলল,
সেটা ২০০৫ সাল হবে, শেষের দিকে।
দিয়েগো বলল,
তারিখটা কি অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ ছিল?
মেলিন্দ্রা তারিখটা মনে করতে পারল না। বলল,
হতে পারে। আমার ঠিক মনে নেই। কিন্তু তোমার তারিখ নিয়ে এত কৌতুহল কেন?
দিয়েগো বলল,
এমনি জানতে ইচ্ছা হল।
কিন্তু মায়েরা সব বুঝতে পারে। মনের সন্দেহ মনেই রাখলো। প্রকাশ করল না। দিয়েগো এবার নিশ্চিত হল এই খামের সাথে তার বাবার মৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কি সম্পর্ক তা তাকে অবশ্যই জানতে হবে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দিয়েগো খাবার খেয়ে তার এক বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হল। সেদিন থেকে তার রাতের ডিউটি শুরু হয়েছে। তাই সে ভাবল দিনের বেলা কিছু কাজ এগিয়ে নেয়া যাক। তার সেই বন্ধু এখন তাদের লোকাল পুলিশ স্টেশনে কাজ করে। তার কাছে গিয়ে তার বাবার মৃত্যুর ফাইলটির খোঁজ জানতে চাইল। হঠাৎ এমন চাওয়ায় তার বন্ধু ফিলিপ কিছুটা চমকে উঠ। বন্ধুসুলভ ভঙ্গিতে জানতে চাইল,
এখন এই ফাইল দিয়ে তুই কি করবি? তোর মা কোন মামলা করেনি।
দিয়েগো বলল,
আমার বাবাকে আমি খুব মিস করছি। তার সম্পর্কে আমার জানতে ইচ্ছা করছে। তুই আমাকে সাহায্য করবি কিনা বল?
বন্ধুর আবদার বন্ধুর ফেলতে পারেনা। বলে,
খুব কষ্ট হবে। আমি তোকে এনে দিতে পারব। কিন্তু একদিনের বেশি তোর কাছে রাখতে পারবিনা। আমাকে আবার ফিরিয়ে দিতে হবে।
দিয়েগো খুব খুশি হয় এবং রাজি হয়। ফিলিপ তাকে জানায় সন্ধ্যার দিকে আসলেই সে তার ফাইল পেয়ে যাবে। একথা শুনে খুশি মনে দিয়েগো সেখান থেকে চলে আসে। ফিলিপ ভাবতে লাগলো, ২০ বছর পুরনো নথি এখন কোন ডাস্টবিন থেকে খুঁজে বের করবে? যাইহোক বন্ধুর জন্য তো এটুকু করাই যায়।
সেদিন সন্ধ্যায় ফিলিপের কাছ থেকে তার বাবার ফাইলটি নেয় দিয়েগো। ফাইলটি না খুলেই সেদিনের মত ডিউটিতে চলে যায়। রাত দুইটার দিকে সে আশেপাশে সেই নীল সেডান গাড়িটি খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও দেখা পায়না। একবারের জন্যও সেদিন আর গাড়িটি দেখতে পায়নি। সে খুব অবাক হয়। তাহলে এই চিঠি এবং সেই গাড়ির মধ্যে সম্পর্ক কি? এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে চিঠির তারিখের সাথে তার বাবার মৃত্যুর সম্পর্ক জানতে হবে। ভোরবেলা ডিউটি শেষ হলে সে বাসায় চলে আসে। তারমধ্যে এক ধরনের নির্ভরতা কাজ করছে। সে এক রহস্যের জাল খুলতে যাচ্ছে! ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে এসে ঘুমিয়ে যায়।
দুপুর বেলা উঠে তার বাবার ফাইলটি নিয়ে বসে। হ্যাঁ, তারিখটি মিলে গেছে। তার বাবা ২০০৫ সালের ৫ই অক্টোবর মারা যায়। কারণ হিসেবে অজ্ঞাত ছিনতাইকারীর আক্রমণ উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশের ফাইল থেকে এর বেশি কিছু আর জানা যায়নি। এখন একটাই পথ। এই রহস্যের সমাধান সেই নীল সেডান গাড়িটি দিতে পারবে। কিন্তু সেই গাড়িটি কোথা থেকে আসে আর কোথায় যায় এই সম্পর্কে সে জানেনা। সে ঠিক করলো আজ রাতে আবার খেয়াল করবে। কিন্তু গাড়িটি সেদিনও আসলো না। তাহলে এখন কি হবে?
দিয়েগোর মাথায় যেন হঠাৎ করেই অনেক বুদ্ধি চলে এসেছে। সে ঠিক করল পত্রিকার হকারদের দোকানে যাবে। সেখান থেকে ওই সময়ের পত্রিকাগুলো খুঁজে বের জানার চেষ্টা করবে তার বাবার হত্যা নিয়ে কোনো খবর হয়েছে কিনা? কিন্তু বহু চেষ্টা করেও ওই সময়ের কোন পত্রিকা খুঁজে পায়নি। এত পুরনো পত্রিকা কে রাখে? নিজেকে নিরুপায় মনে হলো দিয়েগোর। এখন কি করবে সে? সেই গাড়ির অপেক্ষা করা ছাড়া তার কাছে অন্য কোন উপায় আর খোলা নেই।
সেদিন রাতেও গাড়িটি আসেনি। সকালে যখন বাড়ি যাচ্ছিল, তখন পত্রিকার বুড়ো হকার ডেভিড তাকে ডাকলো। বলল,
বাছা, আমি সেসময়ের এক বান্ডেল পত্রিকা পেয়েছি। কিন্তু তুমি যেই তারিখের চেয়েছ সেই তারিখের নয়। তার আগের আর পরের সময়ের আছে। তুমি চাইলে সেগুলো নিতে পারো। কিন্তু এজন্য আমাকে টাকা দিতে হবে। আমি তোমার জন্য এগুলো কিনে এনেছি।
ডেভিডকে সে চেনে। ডেভিড তার কাছে মিথ্যা বলছে। কিন্তু সে টাকা দিয়েই পত্রিকাগুলো কিনে নিয়ে যাবে। কিন্তু টাকা তো আর সে এখন দিতে পারবেনা। তার বেতন হলে তখনই টাকা দিতে পারবে। ডেভিডের এত তাড়া নেই। ডেভিড রাজি হয়ে যায় বাকিতে দিয়েগোকে পত্রিকাগুলো দেওয়ার জন্য।

পত্রিকাগুলা সেদিনের নয় যেদিন তার বাবা মারা গিয়েছে। কিছু পত্রিকা আগের দিনগুলোর। কিছু পত্রিকা পরের দিনগুলোর। কিন্তু সেগুলো ওইদিনের কাছাকাছি সময়ের। যেমন একটি পত্রিকা পাওয়া গেছে অক্টোবর মাসের ৩ তারিখের। আরেকটি পাওয়া গেছে ৯ তারিখের। তবে, বেশিরভাগ পত্রিকা সেপ্টেম্বর মাসের। দিয়েগো ভাবল, আমি সেপ্টেম্বর মাস থেকেই খুঁজে বের করি। সেপ্টেম্বর মাসে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু পেলনা। দেশের পরিস্থিতি, রাজনৈতিক আলোচনা, ব্যবসায়িক আলোচনা, বিদেশের খবর; এসবই সেখানে লেখা। এরমধ্যে একটি ঘটনা রয়েছে যা অবশ্য উল্লেখযোগ্য নয়, তবুও সে পড়েছে। বিশিষ্ট ধনকুবের রিকার্ডো গোমেজকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হুমকি দিয়েছে। তারা বড় অংকের চাঁদা দাবি করেছিল যা দিতে অস্বীকৃতি জানায় রিকার্ডো গোমেজ।
অক্টোবর মাসের পত্রিকাগুলো খুলল দিয়েগো। একই রকম ঘটনা। তবে একটি ঘটনায় তার চোখ আটকে গেল। কারণ এই ঘটনাটি সেপ্টেম্বর মাসের সেই হুমকির সাথে সম্পর্কিত। রিকার্ডো গোমেজকে হুমকি দিয়েছিল জাগুয়ার প নামের এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। ৯ তারিখের পত্রিকায় একটি খবর এসেছে এই শিরোনামে, পরিচয় সনাক্ত করা গিয়েছে সেই দুই সন্ত্রাসীর। পুরো খবরটি পরে দিয়েগো যা জানল তা হচ্ছে,
এই দুই সন্ত্রাসী জাগুয়ার প গ্রুপের। তাদের লাশ সেই রাস্তায় পাওয়া গিয়েছে যেই রাস্তায় তার বাবা মারা গেছে। বিষয়টি তার কাছে সন্দেহজনক মনে হল। এমন কিছু কি হয়েছে যে জাগুয়ার প গ্রুপের দুই সন্ত্রাসীর হাতেই তার বাবা নিহত হয়েছে। উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে, এদের লাশের সেদিনই পাওয়া গিয়েছে যেদিন তার বাবার লাশ পাওয়া গিয়েছে। আশ্চর্য! পুলিশের রিপোর্টে সেই তথ্য নেই কেন? এমন হতে পারে পুলিশ বিষয়টির কোন সূত্র খুঁজে পায়নি। কিন্তু তার মাথায় প্রশ্ন জাগলো, তার বাবাকে যদি এই সন্ত্রাসীরা মেরে থাকে তাহলে তাদেরকে মারলো কে? এই প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই রয়েছে সবকিছুর সমাধান।
এখান থেকে একটা সূত্র পেয়েছে দিয়েগো। সেটি হচ্ছে জাগুয়ার প, না ঠিক জাগুয়ার প না; রিকার্ডো গোমেজ। রিকার্ড গোমেজের বাড়ি সে চিনে। তাদের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। সে ভাবলো, একবার গিয়ে দেখেই আসি কোন তথ্য পাওয়া যায় কিনা? যেই ভাবা সেই কাজ। সে গিয়ে হাজির হলো রিকার্ড গোমেজের বাড়ির সামনে।
সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিল চমক। হঠাৎ করেই সেই বাড়ি থেকে বের হলো সেই নীল রঙের সেডান গাড়িটি যা সে রাতে দেখেছিল। গাড়ির মধ্যে রিকার্ড গোমেজের ছেলে লুইস গোমেজ বসে আছে। গাড়িটি তার সামনে দিয়েই চলে গেল। খুব অবাক হয়ে গেল সে। তার মনে সন্দেহ দানা বাধতে থাকে, তাহলে কি তার বাবার খুনের সাথে গোমেজদের কোন সম্পর্ক রয়েছে? কি সেই সম্পর্ক?
সেখান থেকে চলে আসলো দিয়েগো। তার মাথা জট পাকিয়ে গেছে। এগুলো কি হচ্ছে? পরবর্তী কাজ কি হবে তা সে বুঝতে পারলনা।
সেদিন রাতেই অবাক করা কান্ডটি ঘটে গেল। নীল সেডান গাড়িটি আবার দেখা গেল। দিয়েগো দেখা মাত্রই দৌড়ে সামনে চলে গেল। কিন্তু গাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার আগেই গাড়িটি সেখান থেকে চলে যায়। এবার আর দূরে নয়, সেখানেই একই রকমের আরেকটি খাম পাওয়া গেল। দিয়েগো দ্রুত সেই খামটি তুলে নিয়ে পকেটে চালান করে দিল। রহস্যের সমাধান হয়তো হয়ে গেছে।
সেদিনের ডিউটি শেষ করেই বাড়ি ফিরে ফ্রেশ না হয়ে, খাওয়া দাওয়া না করেই খামটি খুলে ফেলল। সেখানে আরেকটি তারিখ লেখা। অবশ্য সাথে সময় এবং একটি ঠিকানা দেওয়া আছে।
সে এবার নিশ্চিত হল তার বাবার খুনের সাথে গোমেজদের কোন সম্পর্ক অবশ্যই রয়েছে। তবে একটা সমাধানতো সে করতে পেরেছে। তাকে এখন গোমেজ টাওয়ারে যেতে হবে। কোন রহস্য লুকিয়ে আছে তা তাকে জানতে হবে। সে সিদ্ধান্ত নিল সেখানে অবশ্যই যাবে।
গোমেজরা এই শহরের অন্যতম ব্যবসায়ী পরিবার। গোমেজ টাওয়ার তাদের নিজস্ব ভবন যেখানে তারা তাদের ব্যবসায়িক কাজগুলো করে থাকে। সময়মত গোমেজ টাওয়ারে হাজির হয় দিয়েগো। সব ঘটনাই সে তার মা এবং সুপারভাইজারের কাছ থেকে গোপন করে। সে অন্য কারো সাহায্য নিতে চেয়েছিল। কাউকে জানিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু কেন যেন শেষ পর্যন্ত আর কাউকে জানায়নি। যাইহোক, সে গোমেজ টাওয়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দারোয়ান তার কাছে জানতে চাইলো এখানে কি চাই? সে বলল, সাত তলায় আমাকে ডাকা হয়েছে। দারোয়ান কিছু না বলে গেট খুলে দিল। ঢুকার পথে সিকিউরিটিরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে ছেড়ে দেয়। লিফটে করে সাত তলায় উঠলে সে।
বিন্দু বিন্দু ঘামতে শুরু করল দিয়েগো। সে জানেনা এখন সে কি করবে? বিশাল একটি লবি। সেখানে অসংখ্য বসার সিট। কিন্তু কোথাও মানুষ নেই। একটিমাত্র রুম সেখানে। লেখা 'লুইস গোমেজ - ডিরেক্টর'। তার সামনে একটি ছোট্ট রিসিপশন কাউন্টার। সেখানে একটি অতীব সুন্দরী এক মেয়ে বসে আছে। দিয়েগো আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যায়। এয়ার কন্ডিশন করা রুমের ভেতরও সে ঘামতে থাকে। একটি চেয়ারে বসে। কারন সে জানেনা এরপর সে কোথায় যাবে? তাকে দেওয়া ঠিকানা এ পর্যন্তই।
একটু পরে রিসিপসনিস্ট মেয়েটি তাকে ডাক দেয়। দিয়েগো তার সামনে এগিয়ে যায়। তাকে নাম জিজ্ঞাসা করলে সে নাম বলে, দিয়েগো রদ্রিগেজ। রিসিপশনিস্ট মেয়েটি তার সামনে রাখা ল্যান্ড ফোনটি উঠায় এবং কাকে যেন কল করে বলে, 'দিয়েগো রদ্রিগেজ নামে একজন আগন্তুক এসেছে।' ওপাশ থেকে কিছু একটা বলল। মেয়েটি 'আচ্ছা ঠিক আছে, স্যার।' বলে ফোনটি রেখে দেয়। তারপর দিয়েগোকে বলে, আপনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি আপনাকে ডাকবো।
দিয়েগো আবার সেই আগের চেয়ারে এসে বসে থাকে।
এবার কিছুটা শান্ত হয় দিয়েগোর মন। রুমটি চারদিকে তাকালো সে। বিশাল রুম। এই ফ্লোরে সম্ভবত এই দুটিই রুমে রয়েছে। একটি হচ্ছে ডিরেক্টরের রুম, আরেকটি হচ্ছে এই লবি। রুমের দেওয়ালে টাঙ্গানো চিত্রকর্মগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। বেশিরভাগ চিত্রের মাথা-মুন্ডু বুঝতে পারেনা। কিছু চিত্র খুব সুন্দর। ভাবে এমন একটি ছবি যদি তার ঘরে টাঙ্গানো থাকতো তাহলে কতই না সুন্দর হতো! যাইহোক, এভাবে কতক্ষণ সময় কেটেছে তা দিয়েগো বলতে পারবেনা। একসময় সেই সুন্দরী মেয়েটি তাকে ডাক দেয় এবং বলে, 'স্যার আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছে।' দিয়েগো ভিতরে চলে যায়।
এই রুমটিও যথেষ্ট বড়। তবে আগের রুমটির মত নয়। একটি আলিশান টেবিল, তার ওপারে আরো আলিশান একটি চেয়ার। টেবিলের উপর তিনটি কম্পিউটার রাখা। রুমের আবহাওয়া আরেকটু শীতল। টেবিলেরে এপাশে তিনটি চেয়ার রাখা। যে পাশে দরজা তার ঠিক উল্টো পাশে কাঁচের দেয়াল। সেখান থেকে তাদের পুরো শহরটি দেখা যায়। খুবই চমৎকার একটি দৃশ্য! এখানে দাঁড়িয়ে থেকে সে সারা দিন কাটিয়ে দিতে পারবে। এত সুন্দর দৃশ্য তার চোখের সামনে ভাসছে! সেই কাঁচের দেয়াল আর তার মাঝখানে কাল স্যুট পরা একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। সেও তার মত সেই সুন্দর দৃশ্য দেখছে। লোকটি হঠাৎ করে ঘুরলো,
দিয়েগো রদ্রিগেজ?
হ্যাঁ।
আমি লুইস গোমেজ। তোমার বাবার নাম নিশ্চয়ই সার্জিও রদ্রিগেজ?
হ্যাঁ
এরপর লুইস বলতে লাগলো,
আমি তোমার কাছে ঋণী, দিয়েগো। আমার সে রাতের কথা এখনো মনে আছে। সব সময় মনে থাকবে। জাগুয়ার প-রা আমাদের পরিবারের পেছনে লেগেছিল। তারা বেশ বড় অংকের চাঁদা দাবি করেছিল। আমার বাবা তাদেরকে সামান্য অর্থ প্রস্তাব করেছিল। তাতে তারা রাজি হয়নি। তারা বলেছিল তারা আমাদের পরিবারের বড় রকমের ক্ষতি করবে। কিন্তু আমরা কেউই ভাবতে পারেনি তারা আমাকে হত্যা করার টার্গেট করবে। সেদিন আমার স্কুল থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। স্কুলের সেদিন বিশেষ একটি কাজ ছিল। ফেরার পথে জাগুয়ার প-র সদস্যরা আমার গাড়ি আটকে দেয়। তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। তারা দুজনই ছিল। রাস্তার উপর গাড়ি ফেলে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে ছিল। যার কারণে আমার গাড়ির ড্রাইভার চাইলেও সামনে যেতে পারেনি। তারা শুরুতেই আমার ড্রাইভারকে অজ্ঞান করে ফেলে। তারপর আমাকে গাড়ি থেকে টেনে বের করে। আমার চোখ-মুখ বাঁধতে যাবে এমন সময় কোথা থেকে যেন একজন লম্বা-চওড়া সুঠাম দেহের অধিকারী একজন লোক হাজির হয়।
লুইস বলতে থাকলো,
সন্ত্রাসী দুজনকে সে আক্রমণ করে। তাদের সাথে লোকটির অনেক দস্তাদস্তি হয়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসী দুজন তোমার বাবার গায়ে ছুরি মারে। তোমার বাবা বীরপুরুষ ছিলেন। তিনি তাদের একজনের হাত থেকে একটি ছুরি কেড়ে নিয়ে দুজনকেই ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। কিন্তু সন্ত্রাসী দুজন এই অবস্থাতেই পালিয়ে যায়। তোমার বাবার ঘা বেশ গভীর ছিল। আমার ড্রাইভারের জ্ঞান ফেরার আগেই তোমার বাবা মারা যায়। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। সেখানে বেশিক্ষণ থাকাও নিরাপদ মনেহয়নি। দ্রুত থানায় যাই আমরা এবং বলি রাস্তায় একটি লাশ পড়ে আছে।
লুইস আরও যোগ করল,
আমার বাবা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তোমাদের পরিবারের কথা। তোমাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে বাবা তোমার মাকে একটি কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। যা তোমার মাও জানতে পারেনা কিভাবে তার কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু আমি যখন জানতে পারি, নিজের কিছু করতে ইচ্ছে হয়েছিল তোমাদের জন্য। এতদিন সুযোগ পাইনি। কিছুদিন যাবত আমিও আমার বাবাকে হারিয়েছি। আমি বুঝি বাবা হারানোর কষ্ট। তোমার বাবা যেহেতু আমার জন্য হারিয়েছে, তাই কিছু ক্ষতিপূরণ আমি দিতে চাই তোমাকে।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলেছিল লুইস। শুনে দিয়েগোর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। তার বাবা এমন বীরের মত মারা গিয়েছে, বিষয়টা জানতে পেরে তার গর্ব হচ্ছে। কিন্তু সে এখন কি করবে বুঝতে পারছেনা। তার কি উচিৎ হবে প্রস্তাবটি লুফে নেওয়ার? দিয়েগো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।
লুইস তাকে বুঝালো,
শুনো, আমার বাবা এত অর্থ-সম্পত্তি রেখে গিয়েছে সব আমার জন্য। তোমার বাবা থাকলে হয়তো তিনিও তোমার জন্য কিছু রেখে যেতেন। কিন্তু তিনি যেহেতু আমার জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন, আর তোমার জন্য কিছু রাখতে পারেনি। তাই এটা আমার দায়িত্ব তার হয়ে তোমার জন্য কিছু করা। তুমি যদি চাও আমি আমার এখানে তোমার কাজের ব্যবস্থা করে দেব। যদি নগদ অর্থ কিংবা জায়গা-,জমি, বাড়ি চাও; তাহলে সেটাই দিব। তুমি বলো তোমার কি লাগবে?
লোকটার প্রতি কৃতজ্ঞতায় দিয়েগোর মাথা নুয়ে এসেছে। সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা। শেষ পর্যন্ত সে বলল,
এ বিষয়ে আমি আমার মায়ের সাথে কথা বলবো। তারপর আপনাকে জানাবো।
লুইস বলল
বেশ তাহলে সেটাই কর।
দিয়েগো সেখান থেকে চলে আসে। তার মা সব শুনে বলল,
ঈশ্বর আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছে। একটু দেরি করে হলেও তিনি আমাদেরকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিয়েছেন।
দিয়েগোকে জিজ্ঞাসা করল,
তুমি কি ভেবেছো? কি করতে চাও?
দিয়েগো বলল,
মা আমি কৃষি কাজ জানি। আমার মনেহয় তার কাছ থেকে যদি আমরা সামান্য কিছু জমি পাই তাহলে সেখানে চাষাবাদ করে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।
মা বলল
তাই কর বাছা।
পরদিন একই সময় দিয়েগো লুইস গোমেজের কাছে গিয়ে তার সিদ্ধান্তের কথা জানালো। লুইস গোমেজ তাকে জিজ্ঞাসা করল,
কতটুকু জমি তোমার প্রয়োজন?
তা আমি বলতে পারবো না। আমাকে যতটুকু দেন আমি ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকব। আমার নিজের কোন চাওয়া নেই।
লুইস তখন কাকে যেন ফোন দিলন। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা লোক হাজির হলো। লোকটিকে লুইস নির্দেশ দিল,
নদীর কাছের ফার্ম হাউজটির কাগজপত্র দিয়েগোর নামে করে দেওয়ার জন্য। দিয়েগোকে জায়গাটি চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। আজ থেকে জায়গাটি দিয়েগোর।
আবেগাপ্লুত দিয়েগো কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ল। লুইস তাকে বলল,
আজ আমি ঋণমুক্ত হলাম। ধন্যবাদ আমাকে ঋণমুক্ত করার জন্য। তুমি এখন যেতে পারো।
এভাবেই নিজের সততা এবং কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ একজন পেট্রোল পাম্প কর্মী থেকে একজন বিত্তবান কৃষক হয়ে উঠল দিয়েগো। যার পুরো কৃতিত্ব তার সৎ, সাহসী বাবার। একই সাথে তার পরিশ্রমী মায়ের এবং তার সততার। দিয়েগো লোভী ছিলনা। যা তাকে এই উচ্চতায় নিয়ে এসেছে।

চ্যালেঞ্জে অংশ নেয়ার জন্য আমি আমন্ত্রন জানাচ্ছি, @impersonal, @zulbahri এবং @fabiha কে।
Twitter Promotion Link: https://x.com/akib_66/status/1919099292238725541