বছরের প্রথম বন্ধুদের সাথে ঢোড়কো দিয়ে মাছ ধরা
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
সোমবার, ০৬ ই অক্টোবর ২০২৫ ইং
বর্ষার সকালটা ছিল একেবারে সিনেমার দৃশ্যের মতো — মেঘলা আকাশ, ভিজে ভিজে হাওয়া, চারপাশে সবুজ ধানের ক্ষেত আর কাদা মেশানো পথ। এমন দিনে ঘরে বসে থাকা মানেই বিরক্তি, তাই বন্ধুরা ঠিক করল বছরের প্রথম ঢোড়কো দিয়ে মাছ ধরবে। সবার মনেই উচ্ছ্বাস, যেন ছোটবেলায় ফিরে যাওয়া এক আনন্দযাত্রা।ধানের ক্ষেতের পাশে নালার পানি টলমল করে বয়ে যাচ্ছে। সেই নালা থেকেই শুরু হলো আজকের মাছ ধরার অভিযান। এক বন্ধু হাতে বাঁশ আর খড় নিয়ে ঢোড়কো বানাতে ব্যস্ত, আরেকজন সুতোর সাহায্যে সেটি বাঁধছে ঠিকঠাকভাবে।
ঢোড়কো আসলে একধরনের বাঁশ বা খড়ের তৈরি ফাঁদ, যার ভেতর দিয়ে পানি ঢোকে কিন্তু মাছ বের হতে পারে না। সহজ সরল এই যন্ত্রই গ্রামের মানুষের ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার এক অপরিহার্য উপকরণ।বৃষ্টির ফোঁটা টুপটাপ পড়ছে, পাশে রাখা ছাতাটা অর্ধেক কাদায় ডুবে গেছে। কিন্তু কেউই সেদিকে তাকাচ্ছে না। বরং মনোযোগ পুরোপুরি ঢোড়কো বসানোর দিকে। পায়ে কাদা মেখে, হাঁটু ভিজিয়ে, হাত ডুবিয়ে সবাই মিলে কাজ করছে। চারপাশে শুধু ধানের পাতার শোঁ শোঁ শব্দ আর জলের গর্জন।ঢোড়কো বসানো শেষ হলে শুরু হলো সবচেয়ে মজার অংশ অপেক্ষা।
এই অপেক্ষার সময়টাই যেন পুরো আনন্দের অর্ধেক। কেউ পানি নাড়ছে, কেউ গল্প বলছে, কেউ বা আগের বছরের মাছ ধরার অভিজ্ঞতা মনে করছে। এক বন্ধু বলল, দেখিস, আজ পুঁটি আর ট্যাংরা ভালোই ধরা পড়বে।আরেকজন হেসে বলল, ধরা পড়লে আজ ভাজা মাছের সাথে ভাত খাওয়া হবে মাঠেই।হঠাৎই দেখা গেল পানির ভেতর ঢোড়কোটা কাঁপছে। সবাই একসাথে ছুটে গেল। সাবধানে ঢোড়কোটা তুলে আনতেই দেখা গেল ভেতরে কাঁপছে কয়েকটা তাজা মাছ পুঁটি, শিঙি আর একটা ছোট চিংড়িও সবার মুখে হাসির ঝলক, চোখেমুখে খুশির দীপ্তি।
কেউ মোবাইলে ছবি তুলছে, কেউ আবার মাছগুলো গুনে আনন্দে উচ্ছ্বসিত।এরপর সবাই মিলে মাঠের এক পাশে বসে একটু বিশ্রাম নিল। বৃষ্টিভেজা বাতাসে ধানের গন্ধ, পায়ের নিচে নরম কাদা, আর পাশে ছোট্ট মাছের ঝুড়ি সব মিলিয়ে যেন এক সম্পূর্ণ গ্রামীণ আনন্দের ছবি। কেউ গান ধরল, কেউ হাসিতে ফেটে পড়ল, কেউবা বলল, এই মুহূর্তটাই জীবনের আসল আনন্দ।বিকেলের দিকে সবাই বাড়ি ফিরল, ভেজা পোশাকে, কিন্তু মুখে পরম তৃপ্তির হাসি। ছোট ছোট মাছগুলো হয়তো খুব দামি নয়, কিন্তু এই মুহূর্তগুলো অমূল্য।
ঢোড়কো দিয়ে মাছ ধরা তাদের জন্য শুধু একটি খেলা নয়, বরং বন্ধুত্ব, প্রকৃতি আর গ্রামের জীবনের সঙ্গে গভীর এক সংযোগের প্রতীক।এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে গ্রামীণ জীবনের আনন্দটা সহজেই পাওয়া যায়, যদি মনটা একটু খোলা রাখি। বছরের প্রথম ঢোড়কো দিয়ে মাছ ধরার এই গল্প তাই কেবল কয়েকটা মাছ ধরা নয়, বরং সেই হারিয়ে যাওয়া শৈশব, হাসি আর প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক নির্মল স্মৃতি।
সবাইকে ধন্যবাদ।
Device | iPhone 11 |
---|---|
Camera | 11+11 MP |
County | Bangladesh |
Location | Rangpur, Bangladesh |
Vote@bangla.witness as witness