নিজের হাতের তৈরী ভর্তার রিভিউ

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করি এই পবিত্র মাহে রমজান সবার ভালোই কাটছে। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় আর আপনাদের সবার দোয়ায় এবং প্রানডালা ভালোবাসা নিয়ে ভালো আছি। যদিও একটু পেরেশানির মধ্যে আছি। তারপরও মহান আল্লাহ্ বাঁচিয়ে রেখেছে। এর জন্য শুকুর আলহামদুল্লিলাহ্। আর বেঁচে আছি বলেই আজও আবার আপনাদের মাঝে চলে এলাম আপনাদের সবার মাঝে আরও একটি ব্লগ নিয়ে।চলছে আমাদের পবিত্র মাহে রমজান মাস। দেখতে দেখতে আজ রহমতের ৭টি রোজা পাড় হয়ে গেছে ।আমরাও সবাই সুস্থ্যভাবে রোজাগুলো করতে পারছি। সেজন্য আলহামদুল্লিলাহ্। আসলে আগের দিনে খাবার দাবার যেমন স্বাদ ছিল ও ফ্রেশ খাবর ছিল কিন্তু এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। এখন পৃথিবীটা কেমন যেনো বদলে গেছে। সবাই ভেজাল খাবর খেয়ে যেন শরীরে বিভিন্ন রোগে ধরে গেছে।

আবার আমরা জানি এই রোজার মাসে আমাদের খাওয়া দাওয়ার তেমন কোন রুচি থাকে না। মনে হয় কি দিয়ে কয়টা ভাত খেলে ভালো লাগবে। কি রান্না করবো সেইটাই ভাবি। তাই ভাবতে ভাবতে মনে হলো যে, আজ কয়েকপদের ভর্তা করি । এতে করে আমাদের পানির যেই সমস্যা চলছে হাড়িপাতিলও কম নষ্ট হবে। আবার খাবার টাও রুচি সম্মত হবে। বুঝলেন না এক ঢিলে দু্ই পাখি আর কি। হিহিহি। আমি আবার একঢিলে দুই পাখি খুব কম মারতে পাড়ি। কারন মাথা ভরা গোবরতো তারপরও মাঝে মাঝে মারা হয়ে যায়।হিহিহি।আর এভাবেই খুব সহজে করে নিলাম রুচিশীল মজাদার কিছু ভর্তা। এতে করে আমার খাবারটাও হলো আর ঝামেলাও কমলো। বলেনা দামে কম মানে ভালো। আপনারা চাইলে এই রোজায় আমার মতো এইরকম মজাদার ভর্তা বানিয়ে সেহিরী করতে পারেন। আর যাদের বাসায় পানির সমস্যা নেই তারা পাশাপাশি চাইলে আরও খাবার রাখতে পারেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আমার বানানো ভর্তা গুলোর রিভিউতে।

image.png

ফেউয়া শুটকী ভর্তা

image.png

প্রথমে যেই ভর্তার ছবিটি দেখছেন সেটি হলো ফেউয়া শুটকি ভর্তা। অনেকে আবার জানে এটি বাসপাতা বলে। অবশ্য এটির দুটি ধরন আছে। আমার মনে হয় একটি ভিজা আর একটি শুকনো। আমি ভিজাটিই করেছি।এই শুটকী ভর্তাটি আমার অনেক পছন্দ। আসলে রোজার মধ্যে কিছু মজার ভর্তা ভাত খাওয়া যায়। এমনিতেই খেতে ইচ্ছে করে না। তাই ভাবলাম যে, কিছু ভর্তা করলে যদি ভাত খাওয়া যায়। যেই কথা সেই কাজ। অবশ্য সারাদিন পানি টেনে ক্লান্ত হয়ে আবার ভর্তা করতে চাচ্ছিলাম না। তারপরও বসে গেলাম। এই ভর্তাটি করেছি ফেউয়া শুটকি আর কাচাঁমরিচ পেঁয়াজ রসুন দিয়ে। ও হ্যাঁ সাথে ধনেপাতাও দিয়েছি। কারন ধনেপাতা ভর্তার স্বাদ আরও বাড়িয়ে দেয়।কি যে মজার ছিল ভর্তাটি । এক কথায় ফাটাফাটি।

সিম ভর্তা

image.png

এবার বলুনতো কি ভর্তা নিয়ে হাজির হলাম? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন এটি হলো আমাদের সবার আরও একটি প্রিয় ভর্তা। আর সেটি হলো সিম। সিম ভর্তা আমাদের সবারই কম বেশী অনেক পছন্দ। কি ঠিক বলেছিনা? এই ধরনের ভর্তা হলে সাথে আর কি লাগে বলুনতো। আমি কিন্তু সিম ভর্তা অনেক পছন্দ করি।গরম গরম ভাতের সাথে সিম ভর্তা অনেক ভালো লাগে।এই ভর্তাটা অবশ্য কষ্ট করে পাটায় ডলতে হয়নি। এগুলো সেদ্ধ করে হাতে ভর্তা করা হয়েছে।সিমগুলোকে সামান্য পানি দিয়ে সেদ্ধ করে তার পর শুকনো মরিচ টেলে সাথে পেঁয়াজ সরিষার তেল দিয়ে হাতে ডলে করেছি। বিশ্বাস করবেন এত স্বাদ হয়েছে ভাবছিলাম যে, আপনাদের সবাইকে নিয়ে যদি খেতে পারতাম। কি আর করা। সব আশাতো আর পূরন হয় না। তাই কল্পনা করছিলাম আর আপনাদের নিয়ে খাচ্ছিলাম। বলে না দুধের স্বাদ ঘোলে মিটে।হিহিহি।

টমেটো ভর্তা

image.png

এবার আমি কিন্তু অসাধারণ আরও একটি সকলের প্রিয়, শুধু প্রিয় না। কি বলবো এই ভর্তা দেখলে সত্যি বলছি আমার মনে হয় কেউ পোলাও গোশত নিবে না। বলবে আমাকে গরম গরম ভাত দাও। আমি গরম ভাতের সাথে এই মজার ভর্তা দিয়ে ভাত খাব। সত্যি বলেছি কিনা জানাবেন আপনারা আমাকে। আমার কিন্তু এই ভর্তা অনেক পছন্দ। পাটায় বাটার ঝামেলা ছাড়া শুধু টামাটোগুলো ভেজে শুকনা মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে, ওয়াও কি আর বলবো। তখন আমার এই পরিবারের সাথে সাথে আরও একটি পরিবারের কথা মনে পড়ে গেল। আর সেই পরিবার হলো আপনারা। আপনাদের আমি খুব মিস করেছি । হ্যাঁ আমি যখন পোলাও গোশস্ত রান্না করি তখনও আপনাদের সবার কথা মনে করে খাই। আমি সুখ দুঃখ দুটোই সবার সাথে ভাগ করতে চাই।

বেগুন ভর্তা

image.png

আমরা বেগুন ভর্তা পছন্দ করি না হয়তো এমন মানুষ অনেক কম পাওয়া যাবে। আমারা বাঙ্গলি আর তাই ভর্তার কথা শুনলে যেন আমাদের জিবে জ্বল চলে আসে। আর তা যদি হয় বিভিন্ন ধরনের মজাদার লোভনীয় ভর্তা তাহলেতো আর থাকাই যায় না। মনে হয় কখন প্লেট নিয়ে বসবো গরম ভাত খেতে।বেগুন কিন্তু আমার কাছে রান্না বা ভাজার চেয়ে ভর্তা ভালো লাগে। আমি কিন্তু বেগুন চুলায় পুড়ে ভর্তা করি। আপনারা কে কিভাবে ভর্তা করেন আমাকে জানাবেন। আবশ্য মজার কিছু করতে হলে একটু যন্ত্রনা সহ্য করতেই হবে। আর সেই যন্ত্রণা হলো আমার হাত জ্বলছিল। বলে না কারো পোষ মাস আর কারো সর্বনাশ। আমার ব্যাপারটিও হয়েছে সেই রকম। আমার হাত জ্বলে যাচ্ছে আর সবাই বলছে ওয়াও ভর্তাতো অনেক টেষ্ট হয়েছে।কি আর বলবো সেই ওয়াও শুনেই আমার হাতের জ্বলাও এতগুলোর ভালো লাগার মাঝে ওয়াও হয়ে গেল।

থানকুনি পাতা ভর্তা

image.png

এবার সর্বশেষ ভর্তটি করলাম। এটিও পাটায় বেটে। আর এই ভর্তাটি কিন্তু একটি ঔষধি পাতার ভর্তাও বলতে পারেন। এটি আমার একটি পছন্দের ভর্তা। এটা হলো থানকনি পাতার ভর্তা। এই পাতার ভর্তাটিও আমরা কুচিয়ে ভর্তা করি। আবার পাটায় পিসেও ভর্তা করি। তবে পাটায় পিসে ভর্তা করে খেলেই ভালো। আমি জানি এটি পেটের জন্য ভালো কাজ করে। তাই আর একটু সময় নিয়ে কাচাঁমরিচ ধনেপাতা পেঁয়াজ রসুন দিয়ে শেষ করে নিলাম আমার পছন্দের আজরেক থানকনি পাতার ভর্তা।

এবার বলেন কেমন লাগলো আপনাদের সবার কাছে আমার আজকের এই মজাদার ভর্তাগুলো। ভালো লাগলে বলবেন। তবে কিন্তু ভাই ভর্তা আর করতে পারবো না। হাতের যেই অবস্থা হয়েছে। বলে না নেড়া বেলতলায় একবারই যায়। আজ এই পর্যন্তই । আমার ব্লগটির ইতি টানছি। এমনিতেই হাত এখনও জ্বলছে তার মধ্যে পানি টানাটানি। সবার সুস্থ্যতা কামনা করে বিদায় নিচ্ছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা আমার ইউজার নাম @mahfuzanila আমমি পছন্দ করি ঘোরাঘুরি ও ভ্রমন ছবি আঁকা, বিভি ন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে দারুণ পছন্দ করি। আর বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে,মন খারাপ থাকলে গান শুনতে ও গান গাইতে ঘুরতে যেতে আর সবচেয়ে বেশী ঘুমাতে।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 2 years ago 

ভর্তা জাতীয় খাবার আমার খুবই প্রিয়।
বিশেষ করে গরম ভাতে সকালের নাস্তায় হলে তো সব থেকে বেশি ভালো লাগে খেতে।
আপনার ভর্তার রেসিপির মধ্যে টমেটো শুটকি এবং থানকুনির পাতা বেশ লবণীয় ছিল।

 2 years ago 

ভর্তা আমারও ভীষণ পছন্দ। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 

আপনিতো দারুণ কিছু ভর্তার রিভিউ নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন আজকে আপু। আপনার করা প্রতিটি ভর্তা খেয়েছি। কিন্তু থানকুনি পাতার ভর্তা কখনো খাইনি। আপনার করা ভর্তাগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে টমেটো ভর্তা এবং বেগুন ভর্তা। বলে রাখি টমেটো ভর্তা আমার সব থেকে প্রিয় খাবার। আর টমেটো ভর্তার গুনাগুন এবং টেস্ট আপনি যেভাবে বর্ণনা করেছেন তাতে মনে হচ্ছে আপনার বাসায় চলে যাই আপু হি হি। প্রতিটি ভর্তার রিভিউ এবং তার বর্ণনা সত্যি বলতে আপু একদম অসাধারণ হয়েছে। আশা করি আপনার মাধ্যমে পরবর্তীতে আরো নতুন নতুন ভর্তার রিভিউ দেখতে পারব। আপনার জন্য শুভকামনা রইল আপু।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া ।এত চমৎকার করে মন্তব্য করেছেন দেখে অনেক ভালো লাগলো। আরও ভালো লাগলো আমার বানানো ভর্তা আপনার অনেক পছন্দ বলে। ভাবছি এবার ভর্তা বানালে ভাইয় হাতে গ্লাভস পড়ে নিব। হিহিহি।

 2 years ago 

ঠিক রোজার মাসে তেমন খাবারের রুচি থাকে না।আমারও তেমন কিছুই খেতে পারছি না,গলা ব্যথার কারনে।তবে পানির সমস্যা সবচেয়ে বড় সমস্যা।যাইহোক এক ঢিলে দুই পাখি বেশ ভালো করেই মেরেছেন হা হা।আসলে মাঝে মাঝে ভর্তা খেলে রুচি ফিরে আসে আর খেতে বেশ ভালোই লাগে।বেগুন ভর্তা আর শিম ভর্তা আমার বেশ ভালো লাগে।ধন্যবাদ

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

আপনার জন্য দোয়া রইল আপু ।আপনার গলা ব্যাথা যেন ভালো হয়ে যায়। যাক আমার পাখি মারা আপনার ভালো লেগেছে যেনে ভালোই লাগলো হাহাহা। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

নিজের হাতের তৈরি ভর্তার রিভিউ দেখে বেশ ভালো লাগলো। আপনার তৈরি করা ভর্তার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে খুবই খেতে ইচ্ছে করছে। সবগুলো ভর্তা খুবই লোভনীয় ছিল। সবগুলো ভর্তার মধ্যে আমার কাছে টমেটো ভর্তা এবং বেগুন ভর্তা খুবই ভালো লাগে। যাইহোক আপনার সবগুলো ভর্তা নিশ্চয়ই খুব সুস্বাদু ছিল।

 2 years ago 

হ্যাঁ আপু টমাটো ভর্তা হলে আমার আর কিছু প্রয়োজন হয় না। সুন্দর গোছালো মন্তব্য করে সাপোট করার জন্য ধন্যবাদ ।

 2 years ago 

মানুষের জীবনে পেরেশানি থাকবে এটাই স্বাভাবিক তবে এই পেরেশানির মাঝেও যে আমরা বেঁচে আছি এটাই আলহামদুলিল্লাহ, যাইহোক খুবই মজাদার কিছু ভর্তা রেসিপি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। মাছ মাংস যেটাই রান্না করুক না কেন তার আগে যদি একটু ভর্তা দিয়ে খাওয়া যায় তাহলে খুব একটা মন্দ লাগে না। ধন্যবাদ আপনাকে মজাদার কিছু ভর্তা রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

হ্যাঁ ভাইয়া আমরা যে,বেঁচে আছি এটাই আলহামদুলিল্লাহ্।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে এভাবে পাশে থেকেছেন।

 2 years ago 

বেশ কয়েকটা সুস্বাদু ভর্তার রেসিপি রিভিউ দিয়েছেন। আসলে প্রত্যেকটা ভর্তায় আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। বিশেষ করে সিম আর বেগুন ভর্তা গরম ভাতের সাথে খেতে খুবই ভালো লাগে। তাছাড়া শুটকি ভর্তাও আমার অনেক পছন্দের একটি খাবার। প্রত্যেকটা ভর্তা সম্পর্কে সুন্দর উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ সুস্বাদু কিছু ভর্তার রিভিউ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

আমারও প্রতিটা ভর্তা অনেক পছন্দের। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর মন মুগ্ধকর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 2 years ago 

ভর্তা আমার ভীষণ প্রিয়। বিভিন্ন রকমের ভর্তা খেতে অনেক ভালো লাগে। দারুন সব ভর্তার রেসিপি সত্যি ভালো লাগলো আপু। আর গরম ভাতের সাথে ভর্তা খেতে আমি অনেক পছন্দ করি। গরম ভাতের সাথে ঝাল ঝাল ভর্তা খাওয়ার মজাই আলাদা। দারুন সব রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

আপু মজাদার জিনিসগুলো মধ্যে কষ্ট থাকে বেশী। আমিও ভর্তা অনেক পছন্দ করি। সুন্দর মন্তব্য পেয়ে ভর্তারমতো মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

 2 years ago 

বেগুন ভর্তা টমেটো ভর্তা নিয়মিত খাওয়া হয়। ভর্তা বাঙালির খাবারের অবিচ্ছেদ‍্য একটা অংশ। আর ভর্তা আমার অনেক পছন্দের একটা খাবার। তবে থানকুনি পাতা ভর্তা কখনো খাইনি। আর শুটকি ভর্তা টা দেখে বেশ লোভনীয় লাগছে। বেশ দারুণ ছিল আপনার তৈরি ভর্তা গুলোর রিভিউ।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

থানকনি শরীরের জন্য উপকার ভাইয়া খেয়ে দেখবেন। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর গোছালো মন্তব্যে জন্য।