"কাচ্চি ভাইয়ের মোহাম্মদপুর ব্রাঞ্চে এক সন্ধ্যার ভুরিভোজ"

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

সারাদিনের ব্যস্ততা আর দৌড়ঝাঁপের পর সন্ধ্যাবেলাটায় কী করতে ইচ্ছে করে বলুন তো? আমার তো মন চায় কোনো বন্ধুর সাথে বসে জমিয়ে আড্ডা দিতে আর সাথে যদি থাকে পছন্দের কোনো খাবার, তাহলে তো দিনটাই সার্থক হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যায় ঠিক এমনই একটা ইচ্ছে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। যেই ভাবা সেই কাজ, বন্ধুকে ফোন দিয়ে বললাম, "চল, আজ কাচ্চি খেতে যাই।" কোথায় যাওয়া যায়, এটা নিয়ে অবশ্য আমাদের খুব বেশি ভাবতে হয়নি। দুজনেরই এক কথা "কাচ্চি ভাই"! যেহেতু আমি মোহাম্মদপুরেই থাকি, তাই আমাদের ঠিকানা হলো কাচ্চি ভাইয়ের মোহাম্মদপুর ব্রাঞ্চ।

1000094310.jpg

সন্ধ্যার পর মোহাম্মদপুরের রাস্তাঘাটে এমনিতেই বেশ ভিড় থাকে। সেই ভিড় ঠেলে আমরা যখন কাচ্চি ভাইয়ের সামনে পৌঁছালাম, দেখি ভেতরের অবস্থা আরও জমজমাট। রেস্তোরাঁর ভেতরে মানুষ আর মানুষ, টেবিলগুলো প্রায় সবই ভরা। এই দৃশ্য দেখে এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, বসতে জায়গা পাব তো? তবে এই ভিড়টাই প্রমাণ করে দিচ্ছিল যে, জায়গাটা আসলেই জনপ্রিয়। আমরা ঠিক করলাম, একটু অপেক্ষা করব। বাইরে দাঁড়িয়েই ভেতরের সুন্দর সাজসজ্জা আর মানুষের খাওয়ার ধুম দেখছিলাম। ভাগ্য ভালো, আমাদের খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। মিনিট দশেক পরেই একটা টেবিল খালি হলো এবং আমরা আমাদের পছন্দের একটা জায়গায় বসে পড়লাম।

1000094224.jpg

আমরা এমন একটা টেবিল পেয়েছিলাম যেটা ছিল একেবারে কাঁচের দেয়ালের পাশে। এখান থেকে বাইরের রাস্তাটা খুব পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছিল। আমার এটা খুব ভালো লাগে বাইরের ব্যস্ত শহরটাকে দেখতে দেখতে আরামে বসে খাওয়া। মনে হচ্ছিল যেন একটা সিনেমার দৃশ্য দেখছি, যেখানে আমরা দুজন মূল চরিত্র আর বাকি পৃথিবীটা নিজের গতিতে চলছে। পরিবেশটা মনটাকে মুহূর্তেই ফুরফুরে করে দিল।

20250824_213234.jpg

এবার এলো খাওয়ার পালা। আমরা কী খাব, তা তো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। তাই মেন্যু কার্ডে বেশি সময় নষ্ট না করে सीधा দুই প্লেট বাসমতি কাচ্চি আর সাথে দুই গ্লাস ঠাণ্ডা বোরহানির অর্ডার দিয়ে দিলাম। সত্যি বলতে, আমি ভাবতেও পারিনি যে এত ভিড়ের মধ্যেও ওরা এত তাড়াতাড়ি খাবার দিয়ে দেবে। অর্ডার দেওয়ার ঠিক দশ মিনিটের মাথায় গরম গরম ধোঁয়া ওঠা কাচ্চির প্লেট আমাদের সামনে হাজির।

20250824_213243.jpg

আহ্! কী বলব সেই কাচ্চির কথা! প্লেটটা সামনে আসতেই যে অসাধারণ একটা গন্ধ নাকে এসে লাগল, তাতেই অর্ধেক পেট ভরে যাওয়ার জোগাড়। বাসমতি চালগুলো ছিল একদম ঝরঝরে, একটা আরেকটার সাথে লেগে ছিল না। তার উপরে ছিল বড় এক টুকরো খাসির মাংস আর একটা আস্ত আলু। দেখেই জিভে জল চলে আসছিল। তবে খাবার শুরু করার আগে আমরা একটা জরুরি কাজ সেরে নিলাম ছবি তোলা।বন্ধু আমার কয়েকটা ভালো ছবি তুলে দিল, আর সামনে থাকা লোভনীয় কাচ্চির ছবি তো তুলতেই হবে।

20250824_213224.jpg

এরপর আর এক মুহূর্তও দেরি না করে খাওয়া শুরু করে দিলাম। প্রথম কামড়েই বুঝলাম, কেন কাচ্চি ভাইয়ের এত নামডাক। চালটা যেমন নরম, তেমনি মাংসটা মুখে দিতেই একদম গলে যাচ্ছিল। মশলার ব্যবহার ছিল একদম পারফেক্ট খুব বেশিও না, আবার কমও না। প্রতিটা লোকমার সাথে যেন স্বর্গীয় স্বাদ পাচ্ছিলাম। আর বোরহানিটা কাচ্চির স্বাদটাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

20250824_213238.jpg

আমরা খেতে খেতে কখন যে গল্পের গভীরে হারিয়ে গিয়েছিলাম, তা খেয়ালই করিনি। ভার্সিটির পুরোনো দিনের স্মৃতি, বর্তমান জীবনের চাপ, ভবিষ্যতের স্বপ্ন কোনো কথাই যেন বাদ যাচ্ছিল না। সুস্বাদু খাবার আর প্রিয় বন্ধুর সঙ্গ, একটা সন্ধ্যাকে সুন্দর করার জন্য আর কী লাগে। আমরা এতটাই গল্পে আর খাওয়ায় মগ্ন ছিলাম যে, প্লেট কখন খালি হয়ে গেল টেরই পেলাম না।খাওয়া শেষে একটা পরম তৃপ্তির ঢেকুর তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলাম। পেট আর মন, দুটোই যেন পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, তারও একই অবস্থা। সত্যিই, কাচ্চিটা দারুণ ছিল। পয়সা উসুল একটা অভিজ্ঞতা।

IMG-20250824-WA0002.jpg

বিল দিয়ে আমরা যখন বেরিয়ে আসলাম, তখন বেশ রাত হয়েছে। কিন্তু মনে কোনো ক্লান্তি ছিল না, বরং একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছিল। এমন ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই আসলে যান্ত্রিক জীবনটাকে সুন্দর করে তোলে। বন্ধুর সাথে এই ছোট্ট ভুরিভোজের সন্ধ্যাটা আমার অনেক দিন মনে থাকবে।তাই সুন্দর এই মুহূর্ত আপনাদের সাথেও শেয়ার না করে থাকতে পারলাম না।আশা করছি আজকের এই ভুরিভোজের ব্লগটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে।


প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ

Location
Device:Samsung A33 (5G)

আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

ফোনের বিবরণ

মোবাইলSamsung A33 (5G)
ধরণ"কাচ্চি ভাইয়ের মোহাম্মদপুর ব্রাঞ্চে এক সন্ধ্যার ভুরিভোজ"
ক্যমেরা মডেলA33 (48+8+5+2)
ক্যাপচার@mohamad786
অবস্থানঢাকা - বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Posted using SteemX

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 
 last month 

কাচ্চি ভাইয়ের মোহাম্মদপুর ব্রাঞ্চে গিয়ে মজাদার খাবার খেয়েছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো ভাই। দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাই।