ড্রেসিং টেবিলের গল্প: সিলেট থেকে ঢাকায় আসার দীর্ঘ যাত্রা।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
কিছু গল্প থাকে ক্লান্তিকর, কিছু গল্প থাকে আনন্দময়। আর কিছু গল্পে ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা আর আনন্দ সবই মিশে থাকে। এই গল্পও ঠিক তেমনই, আমার নতুন ড্রেসিং টেবিল নিয়ে।
গত কোরবানির ঈদের আগে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সিলেট থেকে ফার্নিচার অর্ডার দিয়েছিল। সিলেটের কাঠের মান ভালো, পাহাড়ি এলাকার কাঠ মজবুত আর সুন্দর হয়ে থাকে। তারা দুটি খাট, এক জোড়া সোফা আর একটি কেবিনেট অর্ডার করেছিল। খবরটা শোনার পর আমারও মনে হলো ঢাকার বাসার জন্য একটা ড্রেসিং টেবিল দরকার। যেহেতু তাদের মাল একসাথে আসবে, ভেবেছিলাম আমার জিনিসটাও সেই ট্রাকে চলে আসবে।
কিন্তু কথায় আছে, কাজের চেয়ে অপেক্ষা অনেক সময় কঠিন হয়। যে ফার্নিচার মিস্ত্রিকে কাজ দেওয়া হয়েছিল, তার কাছ থেকে প্রায়ই একই কথা শুনতাম “বানাচ্ছি”, “প্রায় হয়ে গেছে”, “আগামী সপ্তাহে দিয়ে দেব”। এভাবে সপ্তাহ গড়াতে গড়াতে তিন-চার মাস পেরিয়ে গেল।
অবশেষে গত পরশুদিন খবর পেলাম, ফার্নিচারগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছে গেছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের ফার্নিচার নিয়ে গেছে, কিন্তু আমি পড়লাম নতুন এক দুশ্চিন্তায় ঢাকার বাসায় আমার ড্রেসিং টেবিল কিভাবে আনবো?
রাতেই মোবাইল হাতে নিলাম, অনলাইনে খুঁজতে শুরু করলাম। একে একে ১২-১৪টি নম্বরে ফোন করলাম, কারও ভাড়া বেশি, কারও গাড়ি ফাঁকা নেই, কারও আবার সাড়া মিলল না। অবশেষে TruckBD71 নামের একটি পেইজের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। অনেক কথাবার্তার পর তারা রাজি হলো সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় আমার ড্রেসিং টেবিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে।
পরদিন সকালে গাড়ি রওনা হলো। গাড়ি যখন শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছালো, তখন এক ভাই বললেন গাড়ি তো অনেক বড়, আমিও কিছু ফার্নিচার ঢাকায় নিতে চাই, চাইলে ভাড়া দুইজন মিলে ভাগ করে দিতে পারি। শুনে ভালোই লাগল, রাজি হয়ে গেলাম। এতে করে খরচও বাঁচল, আর গাড়িও ফাঁকা ফিরল না।
তারপর শুরু হলো মূল যাত্রা। সারাদিনের রোদ, যানজট আর ধকল সামলে সন্ধ্যায় অবশেষে ট্রাক ঢাকায় পৌঁছালো। প্রথমে ভাইয়ার ফার্নিচার নামানো হলো, এরপর আমার ড্রেসিং টেবিল।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ঢাকায় আমার বাসা চারতলায়। এত বড়, ভারী ড্রেসিং টেবিল চারতলায় তোলা তো আর সহজ কাজ নয়! আবারও চিন্তার ভাঁজ কপালে। শেষ পর্যন্ত লোক ভাড়া করলাম। তারা সতর্কভাবে টেবিলটি চারতলায় তুলল, ঘরের নির্ধারিত জায়গায় সেট করে দিল।
সব কাজ শেষ হতে যখন রাত ১১টা বেজে গেছে, তখন শরীর-মন দুই-ই ক্লান্ত। শুকনো কাজ শেষে গোসল, খাওয়াদাওয়া সেরে অবশেষে মনে একরকম শান্তি ফিরে এল। আমার কাঙ্ক্ষিত ড্রেসিং টেবিল অবশেষে ঘরে এসেছে, জায়গা মতো বসানো হয়েছে। এত কষ্ট, দুশ্চিন্তা আর দৌড়ঝাঁপের পরও মনের মধ্যে একরকম আনন্দ অনুভব করলাম।
জীবনের অনেক ঘটনাই এমন হয়। সহজ একটা কাজ করতে গিয়ে কত ঘুরপাক খেতে হয়, কত দুশ্চিন্তার ভেতর দিয়ে যেতে হয়, কিন্তু শেষে যখন কাজটি সম্পন্ন হয়, তখন তার আনন্দটাই আলাদা হয়ে ওঠে। এই ড্রেসিং টেবিল এখন শুধু একটা ফার্নিচার নয়, এটা আমার পরিশ্রম, ধৈর্য আর একরকম সন্তুষ্টির প্রতীক হয়ে আছে।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server