আলস্য: কোনো রোগ নয়, এটা এক ধরনের সংকেত।
কখনও কখনও সবচেয়ে কঠিন লড়াইটা তখনই হয়, যখন আমাদের শুধু বিছানা ছেড়ে উঠতে হয় — আর আমরা হেরে যাই।
কিছু কিছু দিন আসে, যখন মনে হয় — সব কিছু থেমে যাক।
সকালে অ্যালার্ম বেজে ওঠে, কিন্তু ওঠার ইচ্ছা হয় না।
হাতে বই থাকে, কিন্তু মন কোথাও হারিয়ে যায়।
কাজের তালিকা তৈরি থাকে, কিন্তু প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস হয় না।
আর তারপর আমরা নিজেদেরই দোষ দিই — “হয়তো আমি খুবই আলসে হয়ে গেছি।”
অনেকে বলে, "যে করতে চায়, সে করেই ফেলে।"
কিন্তু তারা কি কখনও সেই সকালটা দেখেছে,
যখন শরীর জেগে ওঠে, কিন্তু আত্মা ঘুমিয়ে থাকে?
আলস্য আসলে আত্মার একটি সংকেত —
যে আমরা ক্লান্ত, জটিলতায় জড়ানো,
এবং হয়তো নিজেদের পথ থেকেও সরে গেছি।
আমার এক ছেলের কথা মনে পড়ে।
চুপচাপ, একটু গম্ভীর, কিন্তু ভেতরটা খুব সংবেদনশীল।
তার স্বপ্ন ছিল — একজন লেখক হওয়ার।
তার ডায়েরিতে শব্দ নয়, আবেগ বইতো।
প্রতিটি লাইনে ছিল অনুভূতি, প্রতিটি লেখায় ছিল গভীরতা।
কিন্তু সে প্রায়ই বলত, “এখন মুড নেই, সময় পাচ্ছি না, কাল থেকে শুরু করব।”
আর সেই ‘কাল’ আর কখনও এল না।
সময় চলে গেল।
এখন সে একটা প্রাইভেট চাকরি করে —
প্রতিদিন কম্পিউটারের সামনে বসে রিপোর্ট বানায়,
যার সঙ্গে তার হৃদয়ের কোনো যোগ নেই।
কিন্তু যখনই দেখা হয়, বলে —
“ইশ্… তখন যদি একটু আলস্য ছেড়ে লিখতে শুরু করতাম…”
অনেকে জিজ্ঞেস করে —
"আলস্য আর বিশ্রাম কি এক?"
না, বিশ্রাম হলো শরীর আর মনের প্রয়োজন।
যখন আমরা ক্লান্ত হই, তখন ঘুম, হাঁটা, নিজেকে সময় দেওয়া — এগুলো দরকারি।
কিন্তু আলস্য সেই জায়গা, যেখানে আমরা জানি কী করতে হবে —
তবুও ইচ্ছেশক্তি হার মানে।
বিশ্রামের পর জীবন এগিয়ে চলে,
কিন্তু আলস্য আমাদের থামিয়ে রাখে ঠিক যেখানে আমরা ছিলাম।
আলস্যকে হারাতে বড় পদক্ষেপের দরকার নেই —
ছোট ছোট চেষ্টাগুলোর দরকার হয়,
যা প্রতিদিন সকালে আমাদের একটু করে ভালো বানিয়ে তোলে।
শুরুটা বড় কিছু দিয়ে না —
স্রেফ ৫ মিনিট বই খুলে পড়ুন, বা একটা প্যারাগ্রাফ লিখে ফেলুন।
যখন প্রথম পদক্ষেপটা নেওয়া হয়,
তখন মন নিজেই বলে — “চলো, আরেকটু।”
প্রতিদিন এমন একটা সময় বেছে নিন,
যেখানে আপনি নিজের সঙ্গে থাকতে পারেন।
লেখা হোক, হাঁটা হোক বা নীরবতায় বসে থাকা —
ওই সময়টা শুধুই আপনার হওয়া উচিত।
দিন শেষে নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করুন —
“আজকের দিনটা কি আমাকে আমার স্বপ্নের একটু কাছাকাছি নিয়ে গেল?”
আলস্য কোনো শত্রু নয়, সে একটা আয়না।
সে আমাদের দেখায়, জীবনে কিছু একটা অপূর্ণ আছে।
কিছু এমন, যা পূর্ণ করা আমাদের দায়িত্ব — পিছিয়ে যাওয়া নয়।
আলস্যকে হারাতে বড় কিছু নয়,
আজ শুধু একটা ছোট্ট পদক্ষেপ নিন।
কাল কেমন হবে — সেটা আজ আপনি কী করছেন তার উপর নির্ভর করে।