জেনারেল রাইটিং:- "অসহায় মানুষের চোখে পৃথিবী"

পৃথিবীটা আসলে একেকজনের জন্য একেক রকম। কারো জন্য এই পৃথিবী রঙিন, হাসিমুখের, আনন্দে ভরা। আবার কারো জন্য এই পৃথিবীটা একদম বিপরীত নিঃস্ব, কষ্টে ভরা আর অসহায়তার আঁধারে ঢাকা। আমরা যাদেরকে অসহায় মানুষ বলি, তারা এই পৃথিবীটাকে দেখে ভিন্ন এক চোখে। সেই চোখে নেই আরাম, নেই স্বপ্ন, শুধু আছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

সোর্স

একবার ভাবুন তো, রাস্তায় বসে থাকা এক বৃদ্ধার চোখ দিয়ে পৃথিবীটা কেমন? কারো ফেলে দেওয়া শুকনো খাবার কুড়িয়ে খেতে হচ্ছে, মাথার উপর নেই ছাদ, ঠান্ডা-গরম বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। যেদিকে তাকায়, সবাই যেন ব্যস্ত, সবাই যেন তাড়াহুড়ো করে ছুটছে নিজের স্বার্থ নিয়ে। কেউ হয়তো তার দিকে একবার তাকায়ও না। তার কাছে পৃথিবীটা যেন খুব নিষ্ঠুর। মানুষ এখানে বড়ো বেশি নিজের জন্য ভাবে।আমি নিজে অনেক সময় ফুটপাতে বসে থাকা শিশুদের দেখি তাদের পায়ে জুতো নেই, শরীরে ছেঁড়া জামা। কেউ ময়লা কাগজ কুড়ায়, কেউ আবার ট্রাফিক সিগন্যালে ফুল বা চকলেট বিক্রি করে। তাদের চোখে আমি দেখি না কোনো স্বপ্ন, দেখি না কোনো রঙ। তারা শুধু জানে, আজ কিছু না বিকোলে রাতের খাবার জুটবে না। তারা জানে না কীভাবে স্কুলে যেতে হয়, জানে না কী জিনিস ‘ছোটবেলার আনন্দ’। তাদের পৃথিবীটা শুধু কাজ আর অভাব দিয়ে ঘেরা।

অসহায় মানুষের চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো অবহেলা। সমাজ তাদের চোখে মানুষই ভাবে না অনেক সময়। যাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত, তারাও কানে তুলো গুঁজে রাখে। অথচ একটু সহানুভূতি, একটু ভালোবাসা, হয়তো তাদের দুঃখ কিছুটা হলেও হালকা করতো।পৃথিবীতে অনেক দেশ, শহর, গ্রাম, মানুষ আছে। তেমনি আছে কোটি কোটি অসহায় মানুষ কারো বাবা নেই, কারো মা নেই, কেউ জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী, কেউ যুদ্ধ বা দুর্যোগে সব কিছু হারিয়েছে। তারা সবাই যেন এক কথার নাম বেঁচে থাকা মানেই যুদ্ধ।তাদের কাছে পৃথিবীটা কখনোই সহজ নয়।

আমি একবার এক বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "নানী, আপনি কি সুখী?" তিনি একটু হেসে বলেছিলেন, "সুখ তো ধনী মানুষের জন্য, বেঁচে থাকাটাই এখন আমার বড়ো পাওয়া।" তার সে কথাটা আজও মনে পড়ে, বুকটা হাহাকার করে ওঠে।আমরা যারা ভাগ্যবান, মাথার উপর ছাদ আছে, খাবার আছে, পরিবার আছে তাদের উচিত এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো। অন্ততপক্ষে একটা বস্ত্র, একটা খাবার বা একটা ভালো কথা দিলেও তারা নিজেদের একা মনে করে না। আমাদের উচিত, তাদের চোখে পৃথিবীটা একটু হলেও সুন্দর করে তোলা।আমরা যদি নিজেদের একটু বদলাই, এক টুকরো সহানুভূতি তাদের দিই, তাহলে হয়তো একদিন সেই অসহায় চোখেও দেখা যাবে একটুখানি ভালোবাসার আলো, একটুখানি আশার রঙ।

এই পৃথিবীটা সবার জন্য হোক ধনী, গরিব, শক্তিশালী, দুর্বল, অসহায় সব মানুষের জন্য। কেউ যেন একাকিত্বে ডুবে থেকে নিজেকে অবাঞ্ছিত না ভাবে। কারণ শেষ পর্যন্ত, আমরা সবাই এই পৃথিবীর যাত্রী। কেউ আগে নামবে, কেউ পরে। কিন্তু সবার প্রাপ্য একটু সম্মান, একটু সহানুভূতি, আর একটু ভালোবাসা।অসহায় মানুষের চোখ দিয়ে পৃথিবীটা দেখি, তাহলে বুঝতে পারি আমাদের একটু সহানুভূতিতেই তাদের জীবন অনেক সুন্দর হতে পারে।

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। _{আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।}