শৈশবের মহালয়ার স্মৃতি।

in আমার বাংলা ব্লগ7 hours ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17585165008851195937999597394726.jpg


সোর্স



মহালয়া মানে বাঙালি হিন্দুদের এক অদ্ভুত আবেগ, যা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবেনা। মহালয়ার দিন মায়ের চক্ষুদান হয়ে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে মা সেজে ওঠে এবং মায়ের বিশেষ বিশেষ দিন এবং মুহূর্ত শুরু হতে থাকে। ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনে এই মহালয়ার দিনটি খুবই স্মরণীয় এবং স্পেশাল ছিল। তবে এই মহালয় স্পেশাল ছিল যতদিন আমার মা বেঁচে ছিলেন। আসলে ছোটবেলা থেকেই যে এলাকাতে বেড়ে উঠেছি সেই জায়গায় পুজো খুবই রমরমা ভাবে উদযাপিত হতো। একটি প্যান্ডেল থেকে অন্য প্যান্ডেলের দূরত্ব পায়ে হেঁটে দুই থেকে তিন মিনিট হবে কোন কোনটা আবার অনেক কাছে কোনটা আবার একটু দূরে। একটা প্যান্ডেলের গান আরেকটা প্যান্ডেলে দাঁড়িয়েও শুনতে পাওয়া যায়। ছোটবেলা থেকেই মহালয়া মানেই আমার কাছে পুজো শুরু হয়ে যেত। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতাম পুজোর আনন্দে আর বান্ধবীরাও যেত না কারণ আমি যেতাম না। তবে বান্ধবীদের সাথে একসাথে বিভিন্ন প্যান্ডেল দর্শন করে বেড়াতাম যে কোন প্যান্ডেল কতদূর তৈরি হলো। কোন প্যান্ডেলটা কতটা বড় হয়েছে এবং কতটা সুন্দর করে করেছে সব খোঁজখবর আগে থেকেই নেওয়া হয়ে যেত। মহালয়ার দিন টা খুব সুন্দরভাবে ছোটবেলা থেকেই শুরু হতো। মহালয়ার আগের দিন সব কাজ অনেক তাড়াতাড়ি সেরে নিতাম আর তার সাথে রাতের খাওয়াও তাড়াতাড়ি করে অন্যদিনের তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তাম।


তবে সত্যি কথা বলতে ভোরবেলা ঘুম ভাঙতে খুবই কষ্ট হয় আর কখনোই ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা হয় না তাই চোখটাও খুলতে চাইতো না। একদম ভোরবেলায় রাতের অন্ধকার কাটিয়ে একটু আলো ফুটতে না ফুটতেই মহালয়া শুরু হয়ে যেত টিভিতে। যদিও অন্ধকার থাকতে মহালয়া শুরু হয়ে যেত বিভিন্ন রেডিও ও এফ এম এ। মহালয়া শুনতে যেমন ভালো লাগতো তেমন টিভিতে দেখতেও ভীষণ পছন্দ করতাম। আমার মায়ের দায়িত্ব ছিল ভোরবেলায় ঘুম থেকে ডেকে তোলা, কারন আমার মা জানতো যে আমাদের না ডাকলে আমরা উঠবো না বা আমাদের ঘুম ভাঙবে না আর যদি আমাদের না ডাকে তবে আমরা মহালয়া দেখতে পারবো না এবং সারাদিনটা মহালয়া দেখিনি সেই কষ্টে পার করে দেব, আর তার সাথে মনটাও খুব খারাপ হয়ে যাবে। সেই জন্য প্রতিবছর মহালয়া শুরু হওয়ার সময়ের ঠিক আধঘন্টা আগেই মা ঘুম থেকে ডেকে দিত যেন ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিতে পারি এবং সুন্দরভাবে মহালয়া দেখতে পারি। ছোটবেলা থেকেই মায়ের সাথে বসে দিদির আর আমার মহালয় দেখার আনন্দ ছিল অনেক বেশি যা বলে বোঝানোর মত নয়। ধীরে ধীরে আমরা বড় হতে লাগলাম তবুও মায়ের সাথে বসে মহালয় দেখার আনন্দটা কম হয়নি।


যদিও মহালয়া আগের থেকে অনেক বেশি ভেজাল করা শুরু করে দিয়েছিল তবুও মায়ের সাথে ভোরবেলা উঠে মহালয়া দেখতে বেশ আনন্দই লাগতো। ভোরবেলা মায়ের সাথে মহালয়া দেখার পর ছাদে চলে যেতাম সূর্য উদয়ের সুন্দর একটি দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মহালয়া দেখে প্রকৃতির সেই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা কি চরম সুখের ছিল সেটা এখন আরো ভালোভাবে বুঝতে পারি। মহালয়ার দিনটা সারাদিনই মহালয়া এবং দুর্গা মায়ের আগমনের গান চলতো প্রত্যেকটা প্যান্ডেলের মাইকে সহ বিভিন্ন জায়গায়। মহালয়ার দিন সারাদিন যে সুন্দর মায়ের গান চলত তাতে পুজোর শুরুর একটা সুন্দর অনুভূতি পাওয়া যেত। মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত আনন্দ ছিল তখন। মহালয়ার দিন থেকে পুজোর গান চারিদিকে বাঁচতেই থাকতো। আমাদের বাড়ির সামনে একটা পিলার ছিল এবং সেই পিলারে মহালয়ার আগের দিন দুই ক্লাবের দুটো মাইক বেঁধে দিয়ে যেত। আর আমরা সারাদিন ধরে সেই দুই ক্লাবের গান একত্রে অনেক জোরে শুনতে পেতাম। মাইকের গান মহালয়ার দিন থেকেই বাজানো শুরু করত এবং এত জোরে গান গুলো বাজতো যে আমরা নিজেরাই নিজেদের কথা শুনতে পারতাম না এবং একে অপরের সাথে কথা বলতে গেলে অনেক জোরে জোরে কথা বলতে হতো। তবে সেটার মধ্যেও অনেক বেশি আনন্দ লুকানো ছিল।


মহালয়ার দিনের সেই সব আনন্দ এবং মজা গুলি এখন সবই স্মৃতিতে রয়েছে। বর্তমানে মহালয়ের দিন আসলেও আগের মত আর তেমন আনন্দ হয় না। আমার মায়ের পরকালে গমনের পর থেকে কেমন যেন জীবন একটা শান্ত নদীর মতো হয়ে গেছে। এখন আর কেউ মহালয়ার দিন ভোরবেলা মহালয়া দেখার জন্য ডেকে দেয় না, একসাথে মহালয়া দেখার মত কেউ নেই আর আগের মত আনন্দ হয় না। আমার মায়ের পরলোক গমনের এক থেকে দেড় বছর আগে দিদির বিয়ে হয়ে গেছিল আর তারপর মা চলে যাওয়ার পর আমি হয়ে গেছিলাম একদম একা। তবে বর্তমানে আমার বিয়ের পরে আমার সঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও সেই দিনগুলো মত আনন্দ হয় না। আসলে যেদিন যায় ভালোই যায় আর বর্তমান ভালো গেলেও সেই আগের মত তেমনভাবে ভালো যায় না। আমরা যত বড় হতে থাকি তত আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হতে থাকে তাই ছোটবেলার ওই সহজ সরল মনের ছোট ছোট আনন্দ বর্তমানে শুধু মুখে হাসি ফোটায়। বড় হয়ে গেলে মানুষের মনে আনন্দ অনেক বেশি কমে যায়। বর্তমানে মহালয়ার দিন আগের মত সুন্দর না কাটলেও বলা যায় বেশ ভালোই কাটে। তবে ছোটবেলার সেই পুজোর দিনগুলি এবং মহালয়ার দিনটির আনন্দ এবং অনুভূতি ছিল অনেক আলাদা, অনেক সুন্দর এবং অনেক আবেগের।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Sort:  
 40 minutes ago 

শৈশবের আনন্দ গুলো একটু আলাদা রকমের। আপনাকে মহালয়ার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আপু। আশা করছি এবারের পূজো অনেক ভালো কাটবে।