বাবা মায়ের কাছে সব সন্তান সমান নয়।

in আমার বাংলা ব্লগyesterday


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17562029289554427357684756988028.jpg


সোর্স



বাবা মা মানেই অনেক বেশি শ্রদ্ধা ভালোবাসা মিলিত পবিত্র একটি সম্পর্ক। আমরা এই পৃথিবীতে বাবা মা ছাড়া কল্পনাই করতে পারি না। প্রত্যেকটা সন্তানের কাছে তার বাবা-মায়ের স্থান অনেক উঁচুতে থাকে। অনেক সুরক্ষিত অনুভব করি আমরা আমাদের বাবা-মায়ের কাছে। আমাদের কাছে আমাদের বাবা-মা সবথেকে শ্রেষ্ঠ হলেও বাবা-মায়ের কাছে কিন্তু আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ কখনোই নয়। প্রত্যেকটা বাবা মায়ের মানসিকতা যেমন সমান নয়, প্রত্যেকটা বাবা-মাও তেমন সমান নয়। সন্তান জন্ম দিয়ে বাবা-মা হওয়া খুবই সহজ হলেও আসলে বাবা-মা হয়ে ওঠা অনেক কঠিন। এর জন্যই গুরুজনেরা বলে, বাবা মা হওয়া সহজ কথা নয়। আমাদের কাছে বাবা মায়ের কোন তুলনা না থাকলেও বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের তুলনা সব সময় থাকে। বাবা-মা সবসময় তার সন্তানদের মধ্যে তুলনা করতেই থাকে। আসলে বাবা মায়ের কাছে সব সন্তান সমান নয়, কোনটা অনেক ভালো আবার কোনটা অনেক খারাপ, কোন সন্তান দায়িত্ববান আবার কোন সন্তান দায়িত্ব বোঝেনা এবং খামখেয়ালি ধরনের। সেই পুরনো যুগ থেকে শুনে আসছি বৃদ্ধ বয়সে যেন আমাদের দেখাশোনা করতে পারে তাই সন্তান অবশ্যই দরকার। কিন্তু আমার মনে হয় এটা একটু স্বার্থপর ধরনের চিন্তাভাবনা।


কারণ আমরা একটা প্রাণ এই পৃথিবীতে আনবো যাকে শান্তিতে বাঁচতে দেব না আমাদের কথা মতনই চালাবো এবং শেষ বয়সে আমাদেরই দেখাশোনা করতে বাধ্য করব তাহলে তারা নিজের মতো করে সুন্দরভাবে বাঁচার তো সময় পাবে না। আমার মনে হয় প্রত্যেকটা সন্তানকে তাদের নিজের মতো করে বাঁচতে খুবই প্রয়োজন। সন্তানকে সুন্দরভাবে মানুষ করলে এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করলে শেষ বয়সে বাবা মাকে এমনিতেই তারা দেখবে এবং তাদের সহযত্ন করবে। তাই শেষ বয়সে যেন দেখাশোনা করে এবং সেবা যত্ন করে সেই জন্য সন্তানের সারা জীবন নষ্ট করার কোন মানে হয় না। তবে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য আগে নিজেও সুশিক্ষিত এবং ভালো চিন্তাভাবনার মানুষ হয়ে ওঠা প্রয়োজন। প্রত্যেকটা মা-বাবার চিন্তাভাবনা যেমন সমান হয় না তেমন প্রত্যেকটা মা-বাবাও ভালো হয় না। তবে একটা জিনিস সব মা বাবার মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় সেটি হল, প্রত্যেকটি মা বাবা যাদের দুটি সন্তান এবং তার থেকে অধিক সন্তান আছে তাদের প্রিয় একটি সন্তান থাকবেই। আর অবহেলায় মানুষ হওয়ার সন্তানও থাকে। একের অধিক সন্তান হলে বাবা-মা কখনোই প্রত্যেকটি সন্তানকে সমানভাবে এবং আদর ভালোবাসা দিতে পারে না বা দেয় না।


প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সন্তানটি বাবা-মার বেশি কথা শুনে চলে সেই সন্তানটি বাবা-মার অবহেলার বস্তু হয়ে যায়। আর যে সন্তানটি বাবা-মার সব থেকে অবাধ্য হয় এবং নিজের মন মতই চলাফেরা করে এবং কাজ করে তারাই যেন বাবা-মায়ের বেশি ভালোবাসা পায়। কারণ যে সন্তান অবাধ্য হয়ে চলে এবং নিজের মন মত চলাফেরা করে তারা ভবিষ্যতে নিজের মন মত ভালো কিছু করে এবং বেশি অর্থ উপার্জন করে যার ফলে বাবা-মা সেই সন্তানের প্রতি বেশি আগ্রহ এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে। অপরদিকে যে সন্তান নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বাবা-মার কথা মেনে চলে তার প্রতি বাবা-মার বেশি আকর্ষণ বা ভালোবাসা থাকে না। কম উপার্জন করা সন্তানকে কোন বাবা মা এই পছন্দ করেনা, যদিও এই কম উপার্জন করার পেছনে বাবা মার ভুল থাকে তবুও বাবা-মা নিজের সেই ভুল স্বীকার করতে চায় না এবং সন্তানকেই প্রতিটা ক্ষেত্রে দোষারোপ করে। প্রত্যেকটা বাবা-মার কাছে সেই সন্তানটি বেশি আপন যে সন্তান বেশি আর্থিক দিক থেকে সক্ষম। আবার অন্যদিকে কোন বাবা-মার যদি থাকে প্রথম সন্তান ছেলে এবং পরবর্তীতে ছেলেমেয়ে যাই হোক না কেন, সেই বাবা মার সে প্রথম সন্তানের থেকে পরের সন্তানগুলোর প্রতি ভালোবাসা যেন বেশি থাকে।


বড় সন্তান যখনই একটু অর্থ উপার্জন করতে শুরু করে তখনই তার ওপর বাবা-মা চাপ দেওয়া শুরু করে জনতার ছোট ভাই বোনদের চাহিদা সে পূরণ করে। যেকোনো বাবা মায়ের কাছে তার পরিবারের বড় সন্তান যেন সংসারের বোঝা টানার জন্যই হয়ে থাকে। এছাড়াও মেয়ে সন্তান গুলোর মধ্যেও যে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির অবস্থা ভালো সেই মেয়ে বাবা মায়ের অনেক আপন এবং যত্ন পায় আর যে মেয়েটি একটু আর্থিক দিক থেকে খারাপ পরিবারের বিয়ে করে যায় সেই মেয়েটি বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনেক অবহেলা পেয়ে থাকে। বাবা মা কখনোই প্রত্যেকটা সন্তানকে সমান নজরে এবার সমান ভালোবাসা দেয় না। বাবা মাকে যে যত আর্থিক দিক থেকে খুশি করতে পারে এছাড়াও যার কাছ থেকে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় সেইসব সন্তানেরাই বেশি আপন হয়ে থাকে। যদিও সব বাবা-মা সমান নয় এই পৃথিবীতে ব্যতিক্রমধর্মী বহু বাবা-মা থাকে যারা আদর্শ বাবা-মা হয়ে থাকে। কিন্তু এই পৃথিবীতে অর্ধেকের বেশি বাবা-মাই অনেক বেশি অবিচার করে থাকে তার সন্তানের ওপর। বর্তমানে যদিও চিন্তা ভাবনা একটু পাল্টে গেছে এবং প্রায় মা-বাবা সন্তানের ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা করে যে, সে যদি বৃদ্ধ বয়সে দেখে তো দেখবে আর যদি না দেখে তাও কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু তবুও প্রত্যেকটি মা-বাবা প্রত্যেকটি সন্তানকে সমান ভালোবাসা কখনোই দেয় না।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Sort:  
 23 hours ago 

একটি খুবই সত্যি এবং মর্মস্পর্শী কথা বলেছেন। অনেক পরিবারেই এই বিষয়টি অস্বীকার করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। এই অনুভূতির সাথে একমত পোষণ করছি, এটি অনেককে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়ে দেয়।পিতামাতার পক্ষে সম্পূর্ণরূপে নিষ্পক্ষ থাকা খুবই কঠিন। তাদের নিজস্ব অতীত, ব্যক্তিত্ব, এবং প্রত্যাশা ভিন্ন ভিন্ন সন্তানের সাথে তাদের সম্পর্ককে আলাদাভাবে প্রভাবিত করে। এটি অনেক সময় অসচেতনভাবেই হয়ে থাকে।