মা আসছে!!! দুর্গা মায়ের আগমনের আনন্দ।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
আমাদের জীবনে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পারি প্রত্যেকটা জিনিসের আগমনের জন্য আমরা অনেক বেশি এক্সাইটেড থাকি। যেকোনো সুন্দর দিন আসছে আসছে এটাই এক অদ্ভুত ফিলিংস এবং ভালোলাগার মুহূর্ত কিন্তু দিনটি চলে আসার পরে যেন নিমেষের মধ্যে কেটে যায় এবং দিনগুলো ফুরিয়ে গেলে ভীষণ খারাপ লাগা কাজ করতে থাকে। স্পেশাল দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে যেন আমাদের একটু বেশি ভালো লাগে। স্পেশাল দিনগুলোর জন্য স্পেশাল ভাবে নিজেকে সাজানো, অপেক্ষা করা, স্পেশাল দিনটাকে আরো স্পেশাল করে তোলার জন্য বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি নেওয়া এগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আমাদের শান্তি আর অনেক বেশি ভালো লাগা। কি করবো, কি না করব, কেমন ভাবে দিনগুলো শুরু করব, কখন কোনটা করতে হবে এইসব ভাবনা চিন্তার মধ্যে দিয়েই অনেক বেশি এক্সাইটমেন্ট কাজ করে। তেমনি আমাদের হিন্দু বাঙ্গালীদের সামনেই খুবই বড় এবং স্পেশাল দিন গুলো আসতে চলেছে। সারাটা বছর আমরা অপেক্ষা করতে থাকি এই দিনগুলোর জন্য। আর এই দিনটি হল দুর্গাপুজো অর্থাৎ দূর্গা মায়ের আগমনের সময়। দুর্গা মায়ের এই আগমনকে নিয়ে আমাদের মনের মধ্যে সবসময়ই একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করতে থাকে।
বছরে এই একবারের জন্যই তো মা আমাদের মাঝে অর্থাৎ মর্তে আসে। দুর্গা মা আসবে এবং কয়েকটা দিনের জন্য আমাদের কাছে থাকবে এই আনন্দেই আমরা সেই দিনগুলো অনেক সুন্দর ভাবে পরিকল্পনা করি এবং অনেক সুন্দর ভাবে দিনগুলো কাটানোর চেষ্টা করি। সারা বছরের একটা অপেক্ষা এবং বিভিন্ন রকম প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে চলে আমাদের দিনগুলো। এখন চারিদিকেই দেখলে বোঝা যাবে অনেক বেশি তাড়াহুড়ো ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছে সকলে। দিন চলে আসছে এবং সেই দিনের মধ্যেই শেষ করতে হবে সব কাজ ডেকোরেশন প্যান্ডেল মায়ের মূর্তি তৈরি ইত্যাদি। এ বছরে কোন প্যান্ডেলে মায়ের মূর্তি কেমন দেখতে হবে তার পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে বেশ কয়েক মাস আগেই। প্রত্যেকের পুজোর জায়গাতে খুঁটিপুজো সম্পন্ন করা হয়ে গেছে। চারিদিকে ব্যস্ততার পরিবেশ সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। প্রত্যেকটা দোকানে এখন ভিড় উপচে পড়ছে চারিদিকে ব্যস্ততার পরিবেশ। আর আমরা যেমন ব্যস্ত তেমন ব্যস্ত হয়ে রয়েছে আমাদের দুর্গা মা। সেও ব্যাগ পত্র গোছানো শুরু করেছে মর্তে আমাদের কাছে এসে কদিন থাকবে বলে। তারও ব্যস্ততার শেষ নেই নিজের জামা কাপড় গোছানোর পাশাপাশি কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী অর্থাৎ তার সন্তানদের জিনিসপত্র গুছিয়ে আনা তারই তো দায়িত্ব। তাই আমরা যেমন এদিকে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছি, মা ও অনেক বেশি ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছে সবদিক গুছিয়ে গাছিয়ে আমাদের ভোলে বাবাকে মানিয়ে আমাদের কাছে আসবে বলে।
দুর্গা মায়ের আগমনের আনন্দে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশও যেন সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। ফাঁকা মাঠেও যেন কাশফুল ভোরে যায় এবং এই কাশফুল নিজের সৌন্দর্য তার চারপাশে ছড়িয়ে দেয়। ছোটবেলা থেকেই অনেক বেশি আনন্দে থাকতাম দুর্গা মায়ের আগমনের জন্য। ওই মহালয়ার দিন থেকেই আমার যেন স্কুল কলেজে ছুটি হয়ে যেত। স্কুল বা কলেজ ছুটি হতো ষষ্ঠী বা সপ্তমী থেকে কিন্তু আমার জন্য মহালয়ের থেকেই ছুটি। কারণ মহালয়া মানেই আমার কাছে দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যেত। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মহালয়া দেখলেই মনে হতো দুর্গা মা চলে এসেছে। তাই মহালয়ার পর থেকে কখনো স্কুল বা কলেজে কেউ আমাকে দেখতে পেতো না। মহালয় থেকে আমি কোথায় কোন প্যান্ডেল হচ্ছে কোন প্যান্ডেলের কি অবস্থা সবকিছু যেন দেখা শুরু করে দিতাম। কটা জামা কেনাকাটা হল কোন দিন কোনটা পড়বো সবকিছুই আমার পূর্ব পরিকল্পনা করা হয়ে যেত। ছোটবেলায় দুর্গা মায়ের আগমনের এক্সাইটমেন্ট একটু বেশি থাকলেও এখন যে খুব কম আছে তেমনটা নয়। এখনো অনেক বেশি এক্সাইটেড থাকি দুর্গা মায়ের আগমনের আশায় কিন্তু ছোটবেলার দিনগুলো ছিল একটু বেশিই সুন্দর। বড় হবার পর দুর্গাপুজোর আগমনের প্রস্তুতি থাকে একটু অন্যরকম। সবার জন্য জামা কাপড় কেনাকাটা করা, কার কোনটা দরকার সবকিছু নিজের বুঝতে হয় কিন্তু ছোটবেলায় ছিল শুধু নিজেরটা নিয়েই ব্যস্ততা।
দুর্গা মায়ের পুজোর সময় প্রতিদিন রাত জেগে দুর্গা মায়ের দর্শন করা এবং বিভিন্ন ধরনের প্যান্ডেল দেখার যে আনন্দ সেটা ছোটবেলায় যেমন ছিল এখনো তেমনি আছে। সপ্তমীর সারারাত ঠাকুর দেখে আবার অষ্টমীর ভোরবেলা অঞ্জলি দেওয়ার মধ্যে যে একটা এনার্জি কাজ করে সেটা কাউকে বলে বোঝানোর মত নয়। সারারাত জেগে ঠাকুর দেখার পরেও সকালবেলা একটুও ক্লান্তি হয় না বা অলসতা আসে না অষ্টমী পূজার অঞ্জলি দেওয়ার জন্য। মায়ের আগমনের ওই দিনগুলোতে যেন আলাদাই একটা এনার্জি কাজ করে শরীরের মধ্যে। ঘুম না হলেও যেন ঘুম আসে না দু চোখের পাতায়, ক্লান্তিরা ধারে কাছেও ঘেষতে পারে না শুধুমাত্র থাকে মনে অনেক শান্তি আর আনন্দ আর একটা প্যান্ডেলে মাকে দেখার পর অন্য প্যান্ডেলে আবার মন ছুটে যায় মাকে দেখার জন্য। কোন দিন কার সাথে মায়ের দর্শনে কোথায় যাব সেটাও যেন আমাদের পূর্বপরিকল্পনা করা হয়ে যায়। দিনগুলো যেন অনেক কম মনে হয় আর যেতে হবে অনেক জায়গায় সে এক আলাদা অনুভূতি আর চিন্তার বিষয়। আসলে বাঙালির মনে এই দুর্গাপূজো নিয়ে এতটাই এক্সাইটমেন্ট কাজ করে যা বলে বোঝানোর মত নয়। সারা বছর ধরে দিন গুনতে থাকতে হয় এই কয়েকটা দিনের অপেক্ষায়। তবে দেখতে দেখতে দিন চলেই এলো আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। মা আসছে!!!
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
https://x.com/pussmemecoin/status/1952782892637040641