বাবা-মায়ের প্রতিপালনের ওপর নির্ভর করে সন্তানের ভবিষ্যৎ।

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17579225605817138809595772016587.jpg


সোর্স



বহু বছর আগে যে সময় আমাদের জীবন এমন গৃহবন্দী ছিল না জীবনটা ছিল খোলা আকাশের নিচে এবং স্বাধীন, তখনকার সময়ে বাবা মায়ের সন্তানের দিকে খুব একটা খেয়াল করার প্রয়োজন হতো না। তখনকার সময়ে একজন দম্পতির তিন চারটা এবং তারও অধিক সন্তান ছিল এবং তারা অনেক সুন্দর ভাবে মানুষ করত। যদিও তখনকার সময় বাবা-মায়ের থেকে সন্তানেরা যেমন শিক্ষা গ্রহণ করত তেমনি পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেও সন্তানেরা অনেক শিক্ষা অর্জন করত। তখনকার জীবন গৃহবন্দী না হওয়ার কারণে সন্তান মানুষ করতে বাবা-মার খুব একটা বেশি কষ্টের সম্মুখীন হতে হতো না। আর তার সাথে প্রত্যেকটা সংসার অনেক বড় ছিল এবং তার সাথে ছিল পরিবারে অনেক মানুষজন যার ফলে সন্তান মানুষ করাও ছিল তুলনামূলক সহজ কাজ। কিন্তু বর্তমানে সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করা অনেক বেশি কষ্টের হয়ে উঠেছে। আর তার সাথে যেহেতু বর্তমানে প্রত্যেকটা সংসার অনেক ছোট হয়ে গেছে তাই বাবা-মায়ের একার ওপরে দায়িত্ব পড়ে যায় সন্তান বড় করে তোলা এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। আগেকার মতো এখন আর দাদু দিদার আদরে নাতি-নাত নিয়ে বড় হতে পারে না। আর বর্তমানে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অর্থাৎ আমাদের সমাজ এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে কোন বাবা-মায়েরাই সন্তানকে বাইরে ছাড়তে সাহস পায় না।


তাই মূলত সন্তানেরা বর্তমানে বেড়ে উঠছে পুরোপুরি বাবা-মায়ের প্রতিপালনের ওপর ভিত্তি করে। বাবা মায়েরা সন্তানকে যেমন শিক্ষা দেয় সন্তানেরাও তেমন শিক্ষা পেয়েই বড় হতে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটাই দেখা যায় যে বাবা-মা যেমন ধরনের সন্তানও ঠিক তেমন ধরনেরই হয়ে থাকে। অর্থাৎ ছোটবেলা থেকেই যদি সন্তান দেখে যে বাবা-মা হিংসা করে, লোকের সাথে ঝগড়া করে, এবং প্রতিনিয়ত কটু কথা মানুষের সাথে বলতে থাকে আর অশ্লীল এবং অসামাজিক শব্দের উচ্চারণ বেশি করে থাকে তবে বাবা-মায়ের এমন কথা শুনতে শুনতে বড় হওয়া সন্তানেরাও তেমনি আচরণ করতে থাকে এবং তেমনি খারাপ ভাষার প্রয়োগ করা শিখে যায়। তেমনই বাবা মা যদি অনেক ভালোভাবে চলাফেরা করে এবং মানুষের সাথে মিলেমিশে সুন্দরভাবে থাকে, মিষ্টভাষী এবং গুছিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলে, মানুষের প্রতি হিংসা মনোভাব না রাখে তবে সন্তানও বাবা-মায়ের সেই আচরণ দেখে তেমনি শিক্ষা পায়। ভবিষ্যতে সন্তানেরা যখন বড় হয় তখন বাবা-মায়ের সেই আচরণ অনুযায়ী সন্তানেরা অনেক সুন্দর ভাবে গড়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যেও সেই ভদ্রতা লক্ষ্য করা যায়। বাবা মায়েরা একটু বুদ্ধিমতই হলে সন্তানকে অবশ্যই সেই ভাবে শিক্ষা দেয় যাতে সন্তানেরা অনেক ভদ্র এবং পরিষ্কার ও সুন্দর মন মানসিকতার একজন ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে।


কিছু কিছু বাবা মায়েরা এমন আছে যারা সন্তানকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকম কথার মাধ্যমে অর্থ সম্পত্তির প্রতি লোভী করে তোলে, আত্মীয়-স্বজনকে সব সময় প্রয়োজনহীন এবং নিম্ন চোখে দেখে এবং সন্তানকেও সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করে। মানুষের প্রতি আন্তরিকতা এবং ভালোবাসার যে সুন্দর একটা সম্পর্ক থাকা উচিত সেটা কখনোই সন্তানকে শেখায় না। গরিব এবং অসহায় মানুষদের সাহায্য করা না শিখিয়ে কিছু কিছু বাবা-মা শুধু শিখিয়ে থাকে যে কিভাবে অর্থ প্রতিপত্তিসালী মানুষদের সাথে মিশতে হয় এবং তাদের থেকে অর্থ উপার্জন করতে হয়। মানুষের প্রতি হিংসা মনোভাব এবং কাছের মানুষকে দূরে সরিয়ে দেওয়া এইসব যখন মা-বাবা তার সন্তানকে আচরণের মাধ্যমে শিখাতে থাকে তখন তারা এটা ভুলে যায় যে তারাও একসময় বৃদ্ধ হবে এবং সেই সন্তান বড় হবে, বড় হয়ে সে খারাপ ভাবে মানুষ হওয়ার সন্তানটি অবশ্যই তাদের সাথেও অনেক খারাপ ব্যবহার করবে, মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে এবং হিংসা করলে সেই ক্ষতি এবং হিংসা পুনরায় নিজের দিকে একদিন না একদিন ঠিকই ফিরে আসে। বাবা মা তার সন্তানদের যদি এমন খারাপ ভাবে প্রতিপালন করতে থাকে তবে সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে তার বাবা মা নিজেই ঠেলে দিচ্ছে।


কারণ হিংসা এবং স্বার্থপর মনোভাব যে সব ব্যক্তির মধ্যে থাকে তাদের সাথে কোন ভাল মানুষ মেলামেশা করে না বা বন্ধুত্ব করতে চায় না। তাই এমন খারাপ ভাবে বেড়ে ওঠা মানুষরা একটা সময় গিয়ে একদমই একা হয়ে পড়ে আর যদি তারা কোন খারাপ সঙ্গ পেয়ে যায় তবে অনেক বেশি খারাপ হয়ে পড়ে এবং তাদের ভবিষ্যৎ একদম নষ্ট হয়ে যায়। অর্থ প্রতিপত্তি কখনোই চিরস্থায়ী নয় কিন্তু মানুষের মনুষত্ব, সুন্দর ব্যবহার, ভালো আচার-আচরণ, দয়ালু এবং ভালোবাসা সুলভ মনোভাব এগুলোই মানুষের সাথে সবসময় থেকে যায়। এছাড়াও সন্তানকে যদি প্রতিনিয়ত মনে আঘাত করা কথা বলতে থাকা হয়, প্রতিনিয়ত নিচু দেখানো হয়, এবং তাকে অনুভব করতে বাধ্য করা হয় যে সে কোন কাজের নয় এবং একদমই অর্থহীন একটা অকাদের মানুষ তাকে এই পৃথিবীতে কোনই দরকার নেই এবং তার সাথে প্রতিনিয়ত বাজে ব্যবহার করা হয় তবে সেসব সন্তানেরাও সুন্দর মন মানসিকতা নিয়ে বাঁচতে পারে না বা বড় হতে পারে না। তাই আমাদের উচিত আমাদের সন্তানদের সবসময় বড়দেরকে যেমন শ্রদ্ধা এবং সম্মান করা শেখানো তেমন তাদের সাথেও আমাদের সব সময় ভালোভাবে সম্মানের সাথে কথা বলা। তবেই আমাদের সন্তান সুস্থ এবং সুন্দর মানসিকতার মানুষ হয়ে উঠবে এবং সুস্থ সুন্দর প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারবে।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।