যৌতুক বা পন প্রথা।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
যৌতুক বা পন শুনতে সহজ সরল লাগলেও এটি এমন একটা জিনিস যে আমাদের জীবনকে অনেক বেশি নষ্ট করে দেয় আর তার সাথে আমাদের সমাজকে তো প্রতিনিয়ত এই যৌতুক বা পণপ্রথা নষ্ট করে চলেছে। জানিনা কে এই প্রথা চালু করেছে। তবে যেই চালু করুক না কেন খুবই বিকৃত মস্তিষ্ক অথবা খুবই মতলবী মানুষ ছিল সেই ব্যক্তি। কারণ কোনভাবেই এইসব প্রথাকে ভালো বলা যেতে পারে না। এই যৌতুক বা পন সাধারণত যখন ছেলের বাড়ির লোক মেয়ের বাড়ির কাছ থেকে চেয়ে থাকে তখন বলে যে তারা যেসব সংসারের জিনিস, গয়নাগাটি অথবা টাকা পয়সা দেবে সবই তার মেয়েই ভোগ করবে তার মেয়ের জন্যই এবং মেয়ের ভালো থাকার জন্যই তারা নাকি চায়। কিন্তু বিয়ের পর সেই বাড়িগুলিতে একটু খেয়াল রাখলেই দেখা যাবে যে সেই মেয়েটা কতটুকু সেই জিনিস সেই টাকা পয়সা ভোগ করছে বা কতটা এসে জিনিসপত্র নিয়ে সুখে আছে। আসলে এসব একদমই মিথ্যা কথা। পণ চাওয়ার জন্য মেয়েটাকে সামনে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করা ছাড়া আর কিছুই না। একবার পন নেওয়া হয়ে গেলে মেয়েটা কতটুকু ভোগ করে সেটা জানি না তবে ছেলের বাড়ির মানুষ পুরোটাই সেই পণের জিনিসপত্র এবং অর্থ ভোগ করতে দেখা যায়। পন আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা মেয়ের বাবার উপরে করা অত্যাচারের একটি নাম।
যে বাবা-মায়ের মেয়ে কালো এবং একটু অসুন্দর দেখতে সমাজের চোখে তাদের বাবা-মার মোটা অংকের পন গুছিয়ে রাখতে হয় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য। পন ছাড়া যেন এইসব সামাজিক মতে অসুন্দর মেয়েদের বিয়ে দেওয়া একদমই অসম্ভব। তবে শুধু অসুন্দর মেয়ে হলেই যে পন দিতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। আমাদের সমাজের অসুন্দর হোক বা সুন্দর প্রত্যেকটা মেয়ের বাবারই পণ দিতে হবে বাধ্যতামূলক। আর মেয়ের বাবার কাছ থেকে এই পণ বা যৌতুক নেওয়ার সময় কখনোই এটা বলা যাবে না যে পণ বা যৌতুক নিচ্ছে ছেলের বাড়ি থেকে। তাহলে আবার সমাজের চোখে ছেলের বাড়ির মান সম্মান নষ্ট হবে। তাই বলতে হবে মেয়ের বাবা খুশি হয়ে তার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে কিছু উপহার দিচ্ছে। উপহারের নামে যে মেয়ের বাবার আর্থিক অবস্থাটা দেখা হয় না সেটা আর কেউ দেখেনা। মেয়ে সুন্দর হোক বা কুৎসিত পন দেয়া বাধ্যতামূলক। তবে মেয়ে যদি একটু সুন্দর হয় তবে পণ কোন ভাবে একটু কম দিতে হতেও পারে। কিন্তু কোন মেয়ে যদি রূপবতী না হয়ে গুণবতী হয় এবং সুন্দরভাবে সংসার সামলানোর দক্ষতা থাকে এবং সাথে অর্থ উপার্জন করে অর্থাৎ ভালো কোন জায়গায় চাকরি করে তবুও এই পনের হাত থেকে রেহাই নেই। এখনো দেশের বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় পনের কারণে অনেক ভালো গুণবতী মেয়ের বিয়েই হয় না যার বাবা-মার আর্থিক অবস্থা ভীষণ খারাপ।
কিন্তু ছেলেদের যোগ্যতা অনুযায়ী যৌতুক বা পন বারে বা কমে। অনেক জায়গায় অনেক সময় দেখা যায় ছেলে যত শিক্ষিত যত বেশি অর্থ উপার্জন করে যৌতুক তত বেশি দাবি করে এবং মেয়ের বাড়ি থেকে দিতে হয়। আর যৌতুক না দিতে পারলে দেখা যায় বিয়েই হয় না। অনেক সময় কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা অনেক কষ্ট করে কিছুটা যৌতুক বা পন জোগাড় করে এবং বিয়ের খরচ বিভিন্নভাবে সেভিংস ভেঙে, ধার দেনা করে আবার লোন করে কোনো রকমে মেয়ের বিয়ে দিলেও পরবর্তীতে যখন অনেকদিন হয়ে যায় কিন্তু বাকি পন দিতে পারে না তখন শুরু হয়ে যায় শশুর বাড়িতে মেয়ের ওপর বিভিন্ন রকম অত্যাচার। আর এরকম অত্যাচার মেয়ের এবং মেয়ের বাড়ির জন্য হয়ে যায় অনেক বেশি কষ্টকর। বাবা-মা অনেক ক্ষেত্রে মনে করে যে কোনভাবে বিয়েটা দিতে পারলে পরে একটু একটু করে হয়তো বাকি যৌতুক দিয়ে দিতে পারবে কিন্তু যখনই না দেওয়া হয় তখনই দেখা যায় মেয়ের উপর তীব্র অত্যাচার চলে যার ফলে কিছু কিছু মেয়েরা তো অনেক সময় কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসে আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় শ্বশুরবাড়ির লোকই মেরে ফেলে। তাই যে জিনিস কারোর ভালো করেনা এবং সমাজে কিছু শ্রেণীর মানুষের জন্য অনেক বেশি খারাপ হয়ে থাকে সেই নিয়ম বা প্রথা কখনোই ভালো হতে পারে না।
যৌতুকের লোভ একটি সংসারকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে এবং দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে তাই আমাদের কখনোই এই যৌতুক বা পণ প্রথাকে কখনোই সমর্থন করা উচিত নয়। এবং প্রতিনিয়ত এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত। যদিও আগেকার দিনের তুলনায় বর্তমানে পণ নেওয়া এবং দেওয়া দুটোই অনেক বেশি কমে গেছে তবুও বর্তমানে দেখা যায় অনেক জায়গাতে এখনো তেমন উন্নতি হয়ে পারিনি আর এসব জায়গায় এই পণপ্রথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রথা হিসেবে পালন করা হয়। এই পণ প্রথার কারণে অনেক সময় এমনও দেখা যায় যে বাবা মা তার মেয়ের উপর শ্বশুর বাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এবং পণ না দিতে পারায় অক্ষম হয়ে আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নেয়। একটি মেয়েকে বিয়ে করে একটি ছেলের জীবনে আনা মানে তার দায়িত্ব সম্পূর্ণ তার স্বামীর হয়ে থাকে। স্বামীর দায়িত্ব তার স্ত্রীর ভরণপোষণের সম্পূর্ণ ভার নেওয়া। এবং তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করা। মেয়ের বাড়ি থেকে যদি মেয়ের জন্য সবকিছু দিয়ে তারপরে বিয়ে দিতে হয় তাহলে বিয়ে দেওয়ার থেকে মেয়েকে বাড়িতে রেখে দেওয়াই অনেক বেশিই ভালো কাজ। আর পণ দেওয়া মানেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। কারণ পন দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই আইনত অপরাধ। তাই আমরা পন নেওয়া এবং দেওয়া দুটো থেকেই বিরত থাকার চেষ্টা করব এবং সমাজকে অনেক বেশি উন্নত এবং সুন্দর করে তোলার চেষ্টা করব।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟