জেনারেল রাইটিং- স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তি।
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আজ আপনাদের সাথে একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করব। যার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তি।

ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না। যাইহোক, আমার এলাকা দিয়েই শুরু করি। আমি থাকি বাংলাদেশের অন্যতম একটি ভারী শিল্প এলাকা, ঢাকা ইপিজেড এর কাছেই, সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানায়। ঢাকা ইপিজেড বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এ ধরনের এলাকার রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা আপনি কেমন চান? যেহেতু এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি বৈদেশিক আয়ের উৎস, তাহলে এখানকার রাস্তাঘাট, আবাসিক সুযোগ-সুবিধা এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা থাকা উচিত সর্বোচ্চ লেবেলের। আপনি হয়তো এমনটাই ভাবছেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আপনার ধারণা সম্পূর্ণ রকমের ভুল। কারণ এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটেও উন্নত নয়। এই এলাকার রাস্তাঘাট দেখলে মনে হবে কোন মহল্লার রাস্তাঘাট। এই এলাকাটি একটি ভারী শিল্প এলাকা। যেখান থেকে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সমুদ্র বন্দর অথবা স্থল বন্দরের দিকে ভারী ভারী ট্রাক, কাভার ভ্যান, লরি যাতায়াত করে। এজন্য এখানকার রাস্তাঘাট হওয়া উচিত ছিল সবচেয়ে ভারসহনীয় ও প্রশস্ত রাস্তাঘাট।
কিন্তু না, এখানকার রাস্তাঘাটে পাশাপাশি দুটি ট্রাক গেলেই যেন রাস্তা জ্যাম হয়ে যায়। নতুন রাস্তা করার এক সপ্তাহ পরে সেই রাস্তা দিয়ে আর স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন ট্রাক বা কাভার ভ্যান যেতে পারেনা। অর্থাৎ এযেন এক অত্যাচার। এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য বের হবে। কিছু বর্জ্য খুবই রাসায়নিক, যা স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য জলাশয় পড়তে দেওয়া যাবেনা। এসে দেখুন, এখানকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে ড্রেনের ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে নিম্নমানের ব্যবস্থা। এতটাই খারাপ যে রাস্তায় চলে আসে এবং রাস্তার অবস্থা খারাপ করে দেয়। ভাবুন তো, সেই রাস্তা দিয়ে মানুষের হাঁটাহাঁটি করছে সেই পানির উপর দিয়ে। তাদের শারীরিক অবস্থাটা কেমন হবে? এলাকার পরিবেশের উপর কেমন প্রভাব পড়বে?
সবকিছুই হয়েছে আমাদের স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার জন্য। এলাকার রাস্তাঘাট, পরিবেশগত পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে পরিবেশবিদ, নগরবিদ এবং পরিকল্পনাবিদরা ভাবেনি। তাদের সামনে যখন যে সমস্যা এসেছে তারা সেই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছে। তারা কখনোই দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। তারা এই কথাটা ভাবেনি, আজ আমি যেই কাজটা করছি, পাঁচ বছর পর সে কাজটা অর্থবহ হবে কিনা? পাঁচ বছর পর সেই কাজটা কি ভোগান্তিতে রূপ নিবে কিনা? এই বিষয়ে তারা কখনোই ভাবেনি।
যার ফলে তাদের তখনকার গৃহীত সেই পদক্ষেপ ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। আমি এই এলাকার কথা বাদ দেই, বাংলাদেশের এমন কোন সেক্টর নেই, এমন কোন জায়গা নেই, এমন কোন পরিবেশ নেই, যেখানে এই সমস্যা নেই। এমন কোথাও নেই, যেখানে সঠিক পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা ২০ বছর পরে ভোগান্তিতে পরিণত হয়নি। এসব দেখলে খুবই দুঃখ লাগে। আসলে আমরা কেমন জাতি? আমরা কেমন মানুষ? যাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই! যাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিন্দুমাত্র পরিকল্পনা নেই! কোনরকম দায়সারা ভাবে বর্তমানের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে আমরা ব্যস্ত এবং সেটাও পুরোপুরি সমাধান করা নয়। কোনরকম গা বাঁচানো সমাধান। এজন্য আমাদের ভবিষ্যৎ আমরাই বিনষ্ট করছি।

Link 1: https://x.com/akib_66/status/1953135025647698297