মানুষের জীবনে সফলতা কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়। সফলতা আসে তখনই, যখন আমরা সঠিক সময়ে সঠিক লক্ষ্য স্থির করি এবং সেই লক্ষ্য পূরণে ধারাবাহিক পরিশ্রম করি। সময় ও লক্ষ্য এই দুটি উপাদানই যেন একে অপরের পরিপূরক। লক্ষ্য যদি থাকে কিন্তু সময়ের সদ্ব্যবহার না হয়, তবে সেই লক্ষ্য অধরা থেকে যায়। আবার সময় থাকলেও যদি লক্ষ্য স্পষ্ট না হয়, তবে আমাদের পরিশ্রম অর্থহীন মনে হতে পারে। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণই আমাদের সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বোঝা প্রয়োজন। লক্ষ্য মানে শুধুই বড় স্বপ্ন দেখা নয়; বরং সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশ তৈরি করা। ধরা যাক একজন ছাত্র যদি জানে না তার পড়াশোনার উদ্দেশ্য কী, সে কেবল পরীক্ষা পাস করার জন্য পড়বে নাকি জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়বে, তাহলে সে পথ হারিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু যদি সে স্পষ্টভাবে ঠিক করে যে ভবিষ্যতে একজন দক্ষ ডাক্তার হতে চায়, তবে তার পড়াশোনায় নিয়মিততা আসবে, পরিশ্রমে আগ্রহ বাড়বে এবং সময়কে সে সঠিকভাবে ব্যবহার করবে।

সঠিক সময়ের গুরুত্বও সমানভাবে অপরিহার্য। সময় একবার চলে গেলে তা আর ফিরে আসে না। যারা সময়কে মূল্য দেয় না, তারা জীবনের মূল্যবান সুযোগ হারিয়ে ফেলে। ধরুন কোনো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু তা বাজারের সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করা হলো, তখন হয়তো প্রতিযোগীরা এগিয়ে যাবে এবং সুযোগ হাতছাড়া হবে। তাই সময়কে কাজে লাগানো এবং সঠিক মুহূর্তে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়াই একজন মানুষের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

তবে সঠিক সময়ে সঠিক লক্ষ্য নিয়ে এগোনোর জন্য কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। প্রথমত, নিজের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত, প্রতিদিনের কাজের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যাতে সময় অপচয় না হয়। তৃতীয়ত, ধৈর্য ও মনোবল বজায় রাখা প্রয়োজন, কারণ সাফল্যের পথে বাধা-বিপত্তি আসবেই। যে ব্যক্তি এসব অভ্যাসকে অনুসরণ করতে পারে, তার সাফল্য প্রায় নিশ্চিত।

ইতিহাসে আমরা অসংখ্য উদাহরণ দেখতে পাই যেখানে সঠিক সময়ে সঠিক লক্ষ্য স্থির করে মানুষ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। যেমন মহাত্মা গান্ধী যদি স্বাধীনতা সংগ্রামে সময়মতো যোগ না দিতেন, তাহলে হয়তো ভারতের স্বাধীনতার পথ দীর্ঘতর হতো। আবার ব্যবসায়িক জগতে স্টিভ জবস বা ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তিত্বরা সময়কে হাতের মুঠোয় ধরে রেখেই তাদের লক্ষ্য পূরণ করেছেন।

সর্বোপরি বলা যায়, সঠিক সময়ে সঠিক লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া মানে জীবনের সঠিক ছন্দ খুঁজে পাওয়া। এতে যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়ে, তেমনি কাজের প্রতি অনুপ্রেরণাও বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। সফলতা তখন আর দূরের কিছু মনে হয় না; বরং সেটি হয়ে ওঠে কঠোর পরিশ্রম, সঠিক পরিকল্পনা ও সময়ের সঠিক ব্যবহারের স্বাভাবিক ফলাফল। তাই এখনই আমাদের উচিত নিজের লক্ষ্য স্পষ্ট করা এবং সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়া। কারণ সময় ও লক্ষ্য, এই দুইয়ের মিলনেই গড়ে ওঠে সত্যিকারের সফলতা।