জেনারেল রাইটিং: একটি মায়ের আত্মত্যাগ ও নিঃশব্দ বীরত্বের গল্প।

in আমার বাংলা ব্লগ11 days ago
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু /আদাব

🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001


আজ ২৮ জুলাই রোজ সোমবার ২০২৫ ইং:।

বাংলায় ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।

হ্যালো বন্ধুরা...........

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। বেশ কিছুদিন একটু অসুস্থ থাকাই তেমন একটা কাজ করতে পারিনি তাই চেষ্টা করছি কাজে আবার নিয়মিত ফেরার। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং পোস্ট শেয়ার করব।আশা করি আমার শেয়ার করা জেনারেল রাইটিং পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।


guatemala-4943698_1280.jpg

Source

শান্ত এক গ্রাম সবুজে ঢাকা, পাখির ডাক আর সন্ধ্যার আজানেই যেখানে দিনের ছন্দ ঠিক হয়। এই গ্রামেরই এক মিষ্টি কোণে বাস করতেন রুনা। বয়স মাত্র তিরিশ। কিন্তু তার জীবনদর্শন, দায়িত্ববোধ আর ভালোবাসার গভীরতা দেখে অনেকেই বলতো রুনা যেন শতবর্ষী জ্ঞানী কোনো আত্মা, যে অল্প বয়সেই অনেক কিছু শিখে ফেলেছে।সাধারণ এক পরিবার। স্বামী ফারুক শহরের একটি বড় কোম্পানিতে চাকরি করতেন। রুনা ছিলেন গৃহিণী। তাদের সংসারটা ছোট হলেও ছিলো পরিপাটি ও ভালোবাসায় পূর্ণ। সেই ঘরে ছিলো এক ফুটফুটে মেয়ে আয়েশা, বয়স দুই বছর। রুনার চোখে-মুখে সব সময় আনন্দ থাকলেও, সে ভেতরে কতটা নীরব যুদ্ধ করছিল তা কেউ তখন জানতো না।প্রথম বেবি হওয়ার সময় সে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ডাক্তার তাকে ডাক্তারি সতর্কবার্তা জানায়।প্রথম সন্তান জন্মের পর থেকেই রুনার শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, উচ্চ রক্তচাপ, ও হৃদপিণ্ডের দুর্বলতা একসাথে তার শরীরকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে তুলছিল। অবশেষে ডাক্তার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন,আপনার শরীর আর গর্ভধারণ সহ্য করবে না। যদি দ্বিতীয় সন্তান নিতে যান, তবে জীবন সংশয় রয়েছে।ফারুক তখন স্ত্রীর পাশে ছিল ভীষণভাবে। বলেছিল,আমরা যা পেয়েছি তাই নিয়ে থাকি। তুমি থাকলে সব আছে।রুনা চুপ করে শুনেছিল কিছু বলেনি। শুধু মেয়েকে কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ বসে থেকেছিল সেদিন।কয়েকদিন পর সে স্বামীকে একদিন ধীর স্বরে বললো আয়েশা বড় হবে, একা থাকবে, ভাবো তো? একটা ভাই থাকলে অন্তত একটা হাত থাকবে তার পাশে। আমি যদি না থাকি, ওরা অন্তত একে অন্যকে আঁকড়ে ধরতে পারবে।স্বামীর চোখ ভিজে উঠেছিল। ভালোবাসা তো ঠিক এখানেই নিজেকে হারিয়ে অন্যের জন্য বাঁচা।

এরপরও রুনা মাতৃত্বের সাহস নিয়ে চিকিৎসকদের নিষেধ সত্ত্বেও, সব ঝুঁকি মাথায় নিয়ে রুনা মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গর্ভাবস্থার প্রতিটি মাস ছিল অনিশ্চয়তার এক বিশাল লড়াই। প্রতিটি সকালে শুরু হতো প্রার্থনায়, প্রতিটি রাতে শেষ হতো ব্যথায়। শ্বাস নিতে কষ্ট হতো, পা ফুলে যেত, তবুও সে হাসি মুখেই বলতো এই কষ্টগুলো আমার সন্তানের জন্য।গ্রামের সবাই জানতো এই মা তার জীবনের বিনিময়ে জীবন জন্ম দিতে যাচ্ছে। তাই তাকে ঘিরে যেন এক অদ্ভুত শ্রদ্ধার বলয় তৈরি হয়েছিল।অবশেষে প্রতীক্ষিত সেই দিন এলো। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রুনা যখন বাচ্চার কান্না শুনলো, তার মুখে ফুটে উঠেছিল শান্ত এক হাসি।ছেলে হলো ছোট্ট একটা প্রাণ, যেন তার চোখের ভাষা বোঝে। কিন্তু এই হাসির পেছনে লুকিয়ে ছিল জীবন শেষ হওয়ার অপেক্ষা।রুনার শরীর ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছিল। রক্তের চাপ, হার্টের সমস্যায় সে আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। ডাক্তাররাও ক্লান্ত, পরিবারও ভীত। ফারুক তখন সন্তানদের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ। একদিকে নতুন জীবন আরেকদিকে তার প্রিয়জনের মৃত্যু।১৯ দিন এই ১৯টি দিন রুনা সন্তানের মুখ দেখেছিল, বুকের দুধ দিতে পারেনি, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্ত ওদের দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ কাঁদত।রুনাকে নিয়ে তার স্বামী এক হসপিটাল থেকে আর এক হসপিটাল করে নিয়ে বেরিয়েছে কারণ যদি তাকে বাঁচানো যায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, ছেলের বয়স যখন ১৯ দিন সেদিন রাতে ঘুমের মধ্যেই সে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। কোনো আর্তনাদ নয়, কোনো বিদায় বার্তাও নয়। শুধু নিঃশব্দে চলে গেলো সেই মা, যে নিজের শেষ আলো দিয়ে দুটি জীবন জ্বালিয়ে গেল।রুনার মৃত্যুর খবরে তার পুরো পরিবার ও পুরো গ্রাম শোকে ডুবে গেলো। মানুষ দল বেঁধে আসতে লাগলো। কাঁদতে লাগলো এক বৃদ্ধ মা, যে বলছিল মেয়েটা নিজেকে হারালো, শুধু যেন নিজের সন্তানদের আঁধার থেকে রক্ষা করতে পারে।ছোট ছোট শিশুরাও মাকে খুঁজছিল। রুনার মেয়েটি যখন কাঁদছিল আর বলছিলআম্মু কোথায়?তখন সবার চোখ ফেটে জল পড়ছিল।সবার বুকের ভিতর ছোট বাচ্চা দুইটার জন্য কেঁপে উঠছিল।এখানেই রুনার গল্প শেষ হয় না। তার গল্প বেঁচে থাকবে তার সন্তানদের চোখে, আচরণে, আর ভালোবাসায়। প্রতিটি মেয়ের হাসিতে, প্রতিটি মায়ের দোয়ার মধ্য দিয়ে সে আজও জীবিত।রুনা চলে গেছে, কিন্তু রেখে গেছে এমন এক মাতৃত্বের ইতিহাস যা চিরদিন সমাজকে শেখাবেভালোবাসা মানে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে, অন্যের জীবন সুরক্ষিত রাখা।"একটি মায়ের আত্মত্যাগ ও নিঃশব্দ বীরত্বের গল্প "এই নাম শুধু রুনার নয়। এই নাম সকল সেই মায়েদের, যারা নিজের আলো নিভিয়ে, সন্তানদের জন্য জীবন সৃষ্টি করেন।সেই ছোট্ট দুটি শিশু একদিন যখন বড় হবে, তখন কেউ একজন নিশ্চয়ই একদিন বলবে তোমাদের মা ছিলেন একটি উপাখ্যান, যার গল্প বললে আকাশও কাঁদে।


পোস্টের বিষয়জেনারেল রাইটিং
পোস্টকারীতানহা তানজিল তরসা
ডিভাইসরেডমি নোট ১১
লোকেশনপাবনা
আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর লেখার অমিল ও ভূল ত্রুটি হলে ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেবেন।


১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আমি তানহা তানজিল তরসা। আমার স্টিম আইডির নাম @tanha001। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমি বিবাহিতা। আমার একটা ছেলে সন্তান আছে। আমি ফটোগ্রাফি, গান গাইতে,রান্না করতে ও বাইকে ঘুরতে অনেক পছন্দ করি। আমার জন্ম স্থান কালিগঞ্জ থানা ঝিনাইদহ জেলায়। আমি পেশায় এক গৃহিনী। পাশাপাশি আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি আমার হাসবেন্ড এর চাকরির সূত্রে পাবনা চাটমোহর এ বসবাস করছি।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি দেখার জন্য ও সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। স্পেশালি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, এডমিন ও মডারেটরদের যারা আমাকে এত সুন্দর একটা কমিউনিটিতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমাকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট করছেন।


১০%প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


Logo.png

Banner.png

20250619_101616.jpg