বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে করণীয়

আমি @arpita007 বাংলাদেশ থেকে। কেমন আছেন সকল বাংলাদেশী এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু -বান্ধবীগণ? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজকে ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে আবার নতুন একটি ব্লগ নিয়ে ।

সোর্স

বর্তমান পৃথিবী যে ভয়াবহ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। শিল্পায়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও অযাচিত ভোগবিলাস মানুষের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি করছে। গ্রীনহাউস গ্যাস যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতির মাত্রাতিরিক্ত নিঃসরণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তাপ আটকে রাখছে, ফলে সৃষ্টি হচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বরফ গলন, খরা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, বনাঞ্চল ধ্বংসসহ নানা বিপর্যয় এ সমস্যার ভয়াবহ পরিণতি প্রকাশ করছে। তাই এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রথমত, বৃক্ষরোপণ বাড়াতে হবে। গাছ পরিবেশের জন্য প্রকৃতির অক্সিজেন কারখানা। তারা কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বাতাসকে শুদ্ধ করে এবং জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ বনভূমি ব্যাপকভাবে ধ্বংস হচ্ছে। তাই প্রত্যেকের উচিত সচেতনভাবে গাছ লাগানো ও বন সংরক্ষণে অংশ নেওয়া।

দ্বিতীয়ত, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। কয়লা, তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি দহন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। এগুলোর পরিবর্তে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ বা বায়োগ্যাস ব্যবহার করলে পরিবেশে গ্রীনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমবে।

তৃতীয়ত, শক্তির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অকারণে বিদ্যুৎ জ্বালানো, গাড়ির অতিরিক্ত ব্যবহার, প্লাস্টিক পণ্য পোড়ানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। গাড়ির পরিবর্তে হেঁটে চলা বা সাইকেল ব্যবহার করলে যেমন স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, তেমনি পরিবেশ দূষণও কমবে।

চতুর্থত, শিল্পকারখানার বর্জ্য ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। শিল্পায়নের নামে যদি প্রকৃতি ধ্বংস হতে থাকে, তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কখনোই থামানো যাবে না। প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট মানদণ্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

পঞ্চমত, আমাদের ভোগবাদী জীবনযাপন কমাতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক, একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য, কৃত্রিম প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত বিলাসিতা পৃথিবীর উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। তাই সহজ-সরল জীবনযাপন, পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিস ব্যবহার ও স্থানীয় পণ্য কেনার মাধ্যমে আমরা পরিবেশের ক্ষতি অনেকাংশে কমাতে পারি।

ষষ্ঠত, শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ভয়াবহতা এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানাতে হবে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একসঙ্গে কাজ করা অপরিহার্য। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কোনো একটি দেশের সমস্যা নয়, এটি সমগ্র পৃথিবীর সমস্যা। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একযোগে গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য কার্যকর চুক্তি ও পদক্ষেপ নিতে হবে। কিয়োটো প্রটোকল, প্যারিস চুক্তি প্রভৃতি উদ্যোগ আরও শক্তিশালী ও বাস্তবসম্মত করতে হবে।

সবশেষে বলা যায়, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেও আমরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারি। যত বেশি আমরা সচেতন হব, তত দ্রুত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানো সম্ভব হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর, বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দিতে হলে আজ থেকেই প্রকৃতিকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আমি অর্পিতা নওশিন তিশা। আমি বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার শখের মধ্যে রান্না করতে ভালোবাসি এবং গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসি । তাছাড়া অবসর সময়ে ছবি আঁকতে,গান শুনতে এবং বিভিন্ন ধরনের কমেডি, থ্রিলার, হরর মুভি দেখতে পছন্দ করি। এছাড়াও হিন্দি ডাবিং করা নাটকগুলো দেখতে পছন্দ করি।