স্বর্ণের উর্ধ্বগতি: বিশ্ববাজারের চিত্র।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো স্বর্ণের দাম। বাংলাদেশে আজ ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম ২ লাখ টাকারও বেশি। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একসময় যেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সহজেই বিয়ের জন্য বা সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে স্বর্ণ কিনতে পারত, এখন সেটি অনেকের কাছে অধরাই হয়ে গেছে। তবুও আশ্চর্যের বিষয় হলো দাম বাড়লেও মানুষের স্বর্ণ কেনার আগ্রহ কমছে না, বরং দিন দিন আরও বাড়ছে।
স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে কিছু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কারণ যথা-
ডলারের দরপতন: ডলারের মান কমে গেলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝোঁকে। ফলে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ে, আর দামও বাড়ে।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও যুদ্ধ পরিস্থিতি: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে সরিয়ে স্বর্ণে বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি: টাকার মান কমে গেলে মানুষ অর্থ ধরে রাখার পরিবর্তে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে, কারণ এটি নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ রিজার্ভ বৃদ্ধি: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ক্রয় করছে, যার ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ কমে গিয়ে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে। স্বর্ণ শুধু অলংকার নয়, এটি এক ধরনের আর্থিক নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক প্রতীক।
এখন দেখা যাক স্বর্ণের দাম এভাবে বাড়ার কারণ কি -
বিনিয়োগের মাধ্যম: স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা থাকায় অনেকে মুনাফার আশায় এটি কিনে রাখছে।
বিয়ের সংস্কৃতি: দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে, বিশেষ করে বাংলাদেশ,ভারত, পাকিস্তানের বিয়ের সময় স্বর্ণ অলংকার অপরিহার্য।
সঞ্চয়ের নিরাপদ উপায়: ব্যাংকের সুদ কমে গেলে মানুষ টাকাকে স্বর্ণে রূপান্তর করে রাখতেই বেশি স্বস্তি বোধ করে।
এখন দেখা যাক বিশ্বে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশগুলো কারা-
এক নাম্বারে রয়েছে চীন যারা বছরে প্রায় ৩৭০ টন, তারপরে অস্ট্রেলিয়া বছরে প্রায় ৩২০ টন, রাশিয়া বছরে প্রায় ৩০০ টন, কানাডা প্রায় ২০০ টন, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১৯০ টন। দিনকে দিন মানুষ বাড়ছে স্বর্ণ উৎপাদন কারী দেশও বাড়ছে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ আমদানি ও ব্যবহার করে ভারত ও চীন। ভারতে বিয়ের মৌসুমে স্বর্ণ বিক্রি রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যায়। এছাড়া দুবাই, সৌদি আরব, তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও স্বর্ণ ব্যবহারের হার অনেক বেশি।
এখন দেখা যাক কোন দেশে সবথেকে বেশি স্বর্ণ মজুদ রয়েছে। ২০২5 সালের হিসাব অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ মজুদ রযেছে যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের স্বর্ণা মজুদের পরিমাণ ৮,১৩৩ টন, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জার্মানি। তাদের পরিমাণ ৩,৩৫২ টন। তৃতীয় স্হানে ইতালি। তাদের রয়েছে ২,৪৫১ টন। তারপর যথাক্রমে ফ্রান্স ২,৪৩৬ টন, রাশিয়া ২,০০০+ টন। চীন ২,০০০+ টন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে তুলনামূলকভাবে স্বর্ণ মজুদ খুবই কম, মাত্র কয়েক টনের মতো।
অর্থনীতিবিদদের ধারণা, আগামী কয়েক বছর স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে। যদি ডলারের মান আরও দুর্বল হয়। বৈশ্বিক যুদ্ধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণ ক্রয় অব্যাহত রাখে। তাহলে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। তবে প্রযুক্তি খাতে রিসাইকেল করা স্বর্ণের ব্যবহার বেড়ে গেলে সাময়িকভাবে দাম কিছুটা স্থিতিশীলও হতে পারে।
স্বর্ণ এখন আর শুধু অলংকার নয়, এটি একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সূচক। বাংলাদেশে ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম ২ লাখ টাকায় পৌঁছানো যেমন চিন্তার বিষয়, তেমনি এটি বিশ্ব অর্থনীতির বড় পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত বহন করে। ভবিষ্যতে স্বর্ণে বিনিয়োগের আগে বাজার বিশ্লেষণ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
অসাধারণ কাজ! চালিয়ে যান 💪