বিশ্বকর্মা পুজোর দিনের মুহূর্ত
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন ।আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি বিশ্বকর্মা পূজোর মুহূর্তগুলো। যতবার পুজোর সংক্রান্ত ব্যাপারে পোস্ট শেয়ার করি, ততবারই আপনাদেরকে বলেছি আমাদের বাড়িতে কোন পুজো বোধহয় আর বাকি নেই ।মাসে মাসে যে কতগুলো পুজো হতে থাকে ,তা ধারণার বাইরে।
তবে এই বিশ্বকর্মা পূজা আমাদের বাড়িতে হয় না, আমাদের কারখানার যেখানে মূর্তির কাজ চলতে থাকে, সেখানেই হয়। আসলে সেখানে অনেক বড় বড় মেশিন আছে ,যেগুলো না থাকলে কখনোই বড় বড় মূর্তি করা সম্ভব নয়। ফাইবার, মেটাল বিভিন্ন ধরনের মূর্তি তৈরি করতে অথবা পাথরের মূর্তি তৈরি করতে ওই সংক্রান্ত যন্ত্র লাগবে। এর সাথে সেদিনকে আমাদের গাড়িগুলোরও পূজা করা হয়। সাথে আমাদের কারখানায় যে দাদারা রয়েছে ,তাদেরও গাড়ির পুজো দেওয়া হয়।
বিশ্বকর্মা পূজোটা প্রত্যেক বছর একই রকম কাটে। সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে স্নান করে বাবার সাথে কারখানায় চলে যাই খুব তাড়াহুড়ো করে। মা বলে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সেদিনকে সবকিছু গুছিয়ে নিতে ।যেহেতু বাড়ির সমস্ত পুজোর বাসন কারখানায় নিয়ে যেতে হয় ।আর মা সমস্ত কিছু জোগাড় করে কারখানায় পাঠিয়ে দেয় এই কারণে। আর ওদিকে গিয়ে যেটা প্রত্যেক বছরই হয় সেটা হলো -
আমরা গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি ,আর ব্রাহ্মণ ব্যাটা নড়তে চড়তে আসে। সেদিনকেই যেমন নটার সময় ব্রাহ্মণের আসার কথা, এগারোটা বেজে গেল ব্রাহ্মণ আসছে না। আমাদের পুজোর জোগাড় সমস্ত কিছু হয়ে গেছে। কারখানায় আস্তে আস্তে দাদারা চলে আসছে। পুজোর জোগাড় সবার পক্ষে সম্ভব না ,তাই সকাল বেলা থেকে দুজন দাদা এসে জোগাড় করতে থাকে আমার সাথে।।
বাকিরা চলে আসতে থাকে, কিন্তু ব্রাহ্মণ হাওয়া। সেই ব্রাহ্মণকে ডাকতে আবার ছুটে যায় আর একটা দাদা। তাকে আরেক পুজোর জায়গা থেকে ধরে বেঁধে আনতে হয়। এই ব্রাহ্মণকে নিয়ে হয়েছে একটা জ্বালা। বাবাকে বলেছি পরের বছর থেকে ব্রাহ্মণ যেন চেঞ্জ করে। কারণ সত্যি কথা বলতে ,এতক্ষণ না খেয়ে থাকা অসম্ভব।
সেদিনকে তো আমি গত রাতেও কিছু খাওয়া দাওয়া করিনি। তাই এগারোটা যখন বাজলো। তখন আমি ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম। আর তারপরেই বাবার সাথে বাড়ি চলে এসেছি। আমি আসার আধাঘন্টা পরে ব্রাহ্মণ পূজোতে বসেছে। তাহলে আপনারাই ভাবুন, আড়াই ঘণ্টা কোন ব্রাহ্মণ লেট করে !তাহলে কি এই ব্রাহ্মণের দায়িত্ব জ্ঞান আছে!?
আমি যখন বাড়ি আসবো তার আগেই আমাদের কারখানায় কাজ করে একটা দাদা, ওর ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে এসেছিল। ওকে দেখেই আমার রাগটা একটু ভেঙেছে। মেয়েটা এতটাই কিউট। আর এতটাই সুন্দর করে কথা বলতে পারে, ওর কথা শুনেই হাসি চলে আসবে। ফেরার সময় ওকে চকলেট কিনে দিয়ে এসেছিলাম। ও নাকি চকলেট খেতে খুব ভালোবাসে।
পুজোর সময় আমি থাকতে পারিনি বলে বাবার একটু মনটা খারাপ লাগছিল। তবে আমার কিছু করার ছিল না ।কারণ তার পরের দিনই আমার পরীক্ষা শুরু হচ্ছিল। বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসে গিয়েছিলাম।
আর প্রত্যেক বছরের মতন পুজোর শেষ হয়ে যাবার পর ,দুপুরবেলায় কারখানাতেই নিরামিষ রান্না হয়, সকলে মিলে খাওয়া দাওয়া করে। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া জন্য আমি আর কারখানাতে যাইনি ।ওরা আমার জন্য বাড়িতেই খাবার পাঠিয়ে দিয়েছিল। রান্না হয়েছিল ভাত, ভেজ ডাল ,পনিরের তরকারি, চাটনি, পাপড় ,দই।
বেশ ছোটখাটো করে হলেও সুন্দরভাবে বিশ্বকর্মা পুজোটা প্রত্যেক বছর হয়ে থাকে ।তবে এই ব্রাহ্মণের জন্য সকালের ওইটুকুনি টাইম সকলের মাথা খারাপ হয়ে যায়। আপনাদের সাথে বিশ্বকর্মা পুজোর সমস্ত মুহূর্ত শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগলো। আজকে এখানেই শেষ করছি ।সকলে ভালো থাকবেন।