প্রসাদ প্রাপ্তি
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। গতকাল আমি আপনাদের সাথে ঘোরাঘুরি নিয়ে একটা পোস্ট লিখেছিলাম। জানুয়ারি মাসের চার তারিখে পৌষ কালী পূজার দিনকে হঠাৎ করে প্ল্যান করে ঘুরতে বেরোনো হয়।। বেরোনো মানে একটু আশেপাশে ঘোরাঘুরি, দূরের কোথাও না এবং ঘোরাঘুরি করতে গিয়েই যখন আশেপাশে পুজো দেখছিলাম, বারবার মন চাইছিল যদি পুজোটা দেখে প্রসাদটা খেয়ে যেতে পারি ,তাহলে খুব ভালো হয়।।
একটা ক্যাফেতে দাঁড়ানোর পর সেখানে সমস্ত কাজ সেরে নেওয়ার পর আমরা যখন বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছি, তখনও আমাদের মনটা খারাপ করছিল যে , আমরা বোধহয় পাবোনা প্রসাদ খেতে। কিন্তু যখন আমরা সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ির ওই জায়গায় অর্থাৎ যেখানে পূজো হচ্ছিল সেখানে গিয়ে পৌঁছলাম। তখন দেখি এখন অনেকটা ফাঁকা হয়েছে জায়গাটা। যাওয়ার সময় যতটা ভিড় ছিল এখন ঠিক ততটাই ফাঁকা। মানুষজন আছে কিন্তু কতটা ভিড় নেই। এদিকে হোম হচ্ছে। আর খাওয়া-দাওয়া চলছে।
আমি যেহেতু ক্যাফের চাউমিন খেয়েছিলাম ,তাই প্রথমে ভাবছিলাম অল্প করে খাব।। ওখানে পৌঁছে যখন এরকম অবস্থা দেখলাম ,সাথে সাথে বাবাকে আর জেঠুকে ফোন করলাম যাতে ওরা চলে আসে এখানে খেতে।। সত্যি কথা বলতে ঠাকুরের প্রসাদ খাওয়াও তো একটা ভাগ্যের ব্যাপার।
যজ্ঞের সময় যেতে পেরেছি এবং এ্যাটেন্ড করতে পেরেছি এটাও ভাগ্যের। ওরা সবাই টেবিলে খেতে বসে গিয়েছিল। আর আমি আমার তালে ঠাকুরের কাছে চলে এসেছিলাম যজ্ঞ দেখতে। এই যজ্ঞের তাপ গায়ে লাগানো খুবই ভালো। ব্রাহ্মণকে দেখলাম সকলকে দিয়ে আহুতির দিয়ে দিতে বলছে।
আহুতি কিভাবে দিতে হয়, তা আমি জানতাম না ।ব্রাহ্মণ দেখলাম অনেক জনকে শিখিয়ে দিচ্ছে। একটা থালার মধ্যে লবঙ্গ এবং আরও কিছু জিনিস ছিল। সেটা ছেলেদের ক্ষেত্রে ডান হাতের এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল আর অনামিকা আঙুল দিয়ে ধরে যজ্ঞের মধ্যে ফেলে দিতে হচ্ছিল।
আমিও ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞেস করে হোমের মধ্যে আহুতি দিলাম। আমি যে চাওমিন খেয়েছিলাম সেটাও জানিয়েছিলাম। কিন্তু ব্রাহ্মণ বললো, মা এর পূজোতে এসব কিছু হয় না।। তুমি ভক্তিভরে দিলেই মা সন্তুষ্ট। আমারও খুব ভালো লাগলো যজ্ঞের সুন্দর মুহূর্ত উপস্থিত থাকতে পেরে। তারপর আবার খাবার জায়গায় চলে আসলাম।
কত সুন্দর রান্না হয়েছিল সেদিন কে। খিচুড়ি প্রসাদ ছিল খুবই অসাধারণ খেতে।। চাটনি টা এতটা ভালো খেতে ছিল যে আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না। খুব পরিষ্কারভাবে ওরা পরিবেশন করছিল। আসলে ওই জায়গার সকলে মিলে চাঁদা তুলেই পুজোটা করে এবং পথযাত্রী সকলকে প্রসাদ খেতে বসায় এবং পাড়ার লোকজনও খায়। সত্যি বলতে সেদিনকে প্রসাদ পাওয়ার ব্যাপারটা পুরো আমাদের কপালে ছিল। আমরা ভাবতে পারিনি। সেদিনকে এরকম ভাবে বেরোনো হবে অথবা আমরা এরকম প্রসাদ খাব পুজো দেখব।
সমস্ত কিছু হয়ে যাওয়ার পরে যজ্ঞ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যজ্ঞের কালো টিকাও আমরা সকলে নিলাম ব্রাহ্মণের থেকে। তারপর প্রণাম করে ওখান থেকে আবার রওনা হলাম। বাড়ি ফেরার সময় দেখি রাস্তায় খুব কুয়াশা। চারিদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।
কিন্তু সবকিছুর মধ্যে আমার সবথেকে ভালো লেগেছে আমি মায়ের পুজো দেখতে পেয়েছি আর অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু লাইটিং এর ফটোগ্রাফি করতে পেরেছি। সাথে হোমের ফটোগ্রাফিও করতে পেরেছি। তারপর খাওয়া দাওয়ার তোর কোন তুলনাই হয় না।।
আমাদের উচিত মাঝেমধ্যে আমাদের মায়েদেরকে নিয়ে বেরোনোর ।মায়েরা ঘর-সংসারের কাজ করতে করতে বেরোনোর তাল পায় না। আর সবসময় চেষ্টা করে আমরা যাতে আনন্দে থাকি। কিন্তু ওদেরকে আনন্দ দেওয়ার কর্তব্য আমাদের। তাই আমি চেষ্টা করি অন্তত এখন, মাকে সপ্তাহে দুবার হলেও বাড়ি থেকে আমার সাথে বার করার। সেদিনকে এতটা সুন্দর সময় কাটাতে পেরে জেঠি আর আমার মাও খুব আনন্দ পেয়েছিল।
আজকে পোস্ট এখানেই শেষ করছি ।সকলে ভালো থাকবেন।