বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যে
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি একটা বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যের মুহূর্ত।
গ্রীষ্মের শুরুতে প্রথম যে বৃষ্টিটা হয়, সেটা আমার মনে হয় সকলের কাছেই একটা সারপ্রাইজ হয়ে দাঁড়ায় ।গরমটা পড়তে শুরু করলে এতটা বেশি পরিমাণে পড়তে শুরু করে যে, আমরা হাফসে যাই। কারণ স্বাভাবিকভাবেই শীতকাল এবং বসন্তকালের সময়টা যেহেতু অতটা গরম থাকে না। আর আমরা শীতের সাথে অভ্যস্ত হয়ে থাকি ।তাই হঠাৎ করে গরম শুরু হওয়াতে ওয়েদারকে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়। আর তার মধ্যে যদি হঠাৎ করেই বৃষ্টির আভাস এবং বৃষ্টির জল পাওয়া যায় ,তাহলে গাছেদের সাথে সাথে এই প্রকৃতির সাথে সাথে আমরাও যেন একটু প্রাণ ফিরে পাই।
বিগত দু মাস হল বাড়িতে মিস্ত্রি কাজ করছে। ওপরের ঘরগুলোর সমস্ত কিছু কমপ্লিট হয়ে গেলেও দরজা-জানলা থেকে শুরু করে বাকি কাজগুলো চলছে। এর পাশাপাশি নিচের রুমগুলো পুনরায় রং করা হচ্ছে। বাড়ি একেবারে নতুন রং করে নতুন বাড়ির মতন হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে প্রত্যেকদিন একটা পরিশ্রম যাচ্ছে সবার উপর দিয়ে। বাড়িতে মিস্ত্রি কাজ করলে স্বাভাবিকভাবেই কেউ ঠিকভাবে থাকতে পারে না। তাদের কাজ দেখাশোনাও করতে হয়। মা আর বাবা তাই রেস্ট নেওয়ার সময় পায় না। কিছুদিন এমনও হচ্ছে বাবা নিজের কাজে বের হতে পারছে না।
যাই হোক এরকমই একদিন বিকেল বেলায় মিস্ত্রিরা কাজ করে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি উঠেছিলাম গাছগুলোতে জল দিতে। নিচে বাবা এত ডাকাডাকি করছিল যে ,দৌড়ে নিচে নেমে আসলাম। ছাদ বাগানের গাছগুলোতে জল দিতে আমার প্রত্যেক দিন ভালো লাগে।। তাই এটা আমার একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাই হোক বাবা ডাকার পরে নিচে নেমে আসার কিছুক্ষণ বাদেই দেখছি হালকা ঝোড়ো হাওয়া দিতে শুরু করল। উপরের দোতলা আর তিন তলার সমস্ত দরজা-জানলা খোলা। আবার ছুটতে ছুটতে উপরে গেলাম। দরজা-জানালাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পরে হঠাৎ মনে হল একটু ছাদে যাই। ছাদের গেট খুলতেই একটা দমকা হাওয়া। আর এই হাওয়াটা এতটাই ভালো যে ,আমি আর ভাই মিলে রীতিমতো লাফাতে শুরু করলাম। ছাদে গিয়ে হাওয়ার তালে নিজেকে মিলিয়ে দিতে ইচ্ছা করছিল।
সত্যিই অনুভূতিটা অনেক সুন্দর। এই বিদঘুটে গরমের মাঝে বৃষ্টি আসবে বলে এই যে মজা, এই মজাটা কিন্তু ছোটবেলাতেও হতো। আমি রাস্তাতে খেয়াল করে দেখি বৃষ্টি আসার আগে বাচ্চারা কেমন দৌড়ে বেড়ায়। আমাদের পাড়াতে এরকম করে। আসলে যারা মফস্বলে আর গ্রামে থাকে , তাদের এই অনুভূতিগুলো এখনো বর্তমান আছে। শহরের কংক্রিটের বিল্ডিংগুলির মধ্যে। মানুষ এই অনুভূতি খুব একটা পায় না।
বলতে বলতে বৃষ্টি ঝমঝম শুরু হল। আমরাও সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে নিচে নেমে আসলাম । নিচের ঘরে নেমে এসেই লাইটগুলো বন্ধ করে দিয়ে চুপ করে বসে রইলাম। জানলা খুলে জানালার দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। বৃষ্টির হালকা হালকা ছাট আমার গায়ে লাগছিল। আর গা শিরশির করে উঠছিল ।কতগুলো দিন ধরে এই বৃষ্টিটাকে মিস করেছি। গ্রীষ্মকালের এই ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি সত্যিই অদ্ভুত লাগে।
আসলে বিষয়টা হল যখন আমরা খুব দুঃখের মধ্যে থাকি, তখন যদি একটা আনন্দের আশ্বাস হয়। সেই আনন্দটাই আমাদের কাছে পাহাড় সম হয়ে দাঁড়ায়। সেটা যতই ছোট আনন্দ হোক না কেন। ঠিক তেমনি গ্রীষ্মের মাঝে বৃষ্টিগুলো আমাদের কাছে এক অদ্ভুত প্রশান্তি দেয়।
রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখি মা অনেকগুলো আম নিয়ে বসে পড়েছে ।মা এর কাছে যাওয়ার সাথে সাথে মা বলল একটু আগে যখন হাওয়া দিচ্ছিল মা এতগুলো আম কুড়িয়েছে ।আমাদের বাড়িতে একটা মাঝারি আম গাছ আছে। আমগাছটা থেকেই এতগুলো আম পড়েছে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
আগে বাড়িতে আরো কত আমগাছ ছিল। কিন্তু সেগুলো কেটে দেয়া হয়েছে ।আমার আম এত ভালো লাগে বলে আমি আবার একটা আম গাছ লাগিয়েছি। বাড়িতে জায়গা হচ্ছে না, তাও ফাঁক দেখে মাটিতে লাগিয়ে দিয়েছি। সে গাছটাও বেশ বড় হয়ে উঠেছে।
এই সবকটা আম কেটে মা রেখে দিচ্ছে যাতে আচার তৈরি করতে পারে।
এসব হতে হতেই হঠাৎ করে জেঠুর বাড়ি থেকে ফোন আসলো। জেঠু বলতে সহেলি দির বাবা আমার সুবির জেঠু। জেঠি র শরীরটা দু-তিন ধরে ভালো নেই। তাই মায়ের কথা ছিল জেঠিন কে দেখতে যাবে ।ওদিকে যখন শোনে আরো অনেকে দেখতে গেছে, মা যেতে চাইল না। কারন অসুস্থ মানুষের ওখানে এত মানুষজনের ভিড় সত্যিই ঠিক নয়।। তারমধ্যেই বৃষ্টি পড়া শুরু হল, তাই মা একেবারেই ঠিক করেছিল আজ যাবে না পরের দিন যাবে।
কিন্তু জেঠু ফোন করে বলল তোমাকে আসতেই হবে। এমনকি শুধু তুমি আসলে হবে না, বাচ্চাগুলো কেও নিয়ে এসো। মা তো কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। এসবের মধ্যে এত জোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, মা আরই রাজি হতে চাইছিল না। ৫-১০ মিনিট পর জেঠু আবার ফোন করে, ততক্ষণে জেঠু আমাদের বাড়ির কাছাকাছি বড় গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। ফোন করেই বলতে লাগলো আমি গাড়ি নিয়ে চলে এসেছি, তোমরা শিগগিরই বেরিয়ে আসো বাড়ি থেকে।
জেঠুর বাড়ি আমার বাড়ি থেকে হাটা পথে পাঁচ মিনিট। আমার মা রাজি হচ্ছে না বলে, গাড়ি নিয়ে চলে এসেছিল। এইবার তো মাকে যেতেই হবে। মা তো রাগারাগি করতে শুরু করল যে এই অসুস্থতার মধ্যে এতজন মানুষ ভিড় করলে হয় নাকি! সাথে এটাও বুঝতে পারছিল ওরা সিওর খাওয়ার এর আয়োজন করেছে। এ কারণেই এত ডাকাডাকি।
আমরা বাড়িতে তালা মেরে চলে গেলাম জেঠুর বাড়িতে। গিয়ে দেখি দিদি চিকেন আর চিলি পনির রান্না করেছে। তারপর দেখি বিজয় কাকা আর বিজয় কাকার বউ রুটি করছে। ওখানে বলতে গেলে আমরা চারটে টিম। দুটো ফ্যামিলি অলরেডি দেখতে গেছে, আর আমাদেরকে আবার অ্যাড করলো জেঠু।
তবে জেঠিকে অনেক সুস্থ মনে হচ্ছিল ,আসলে জেঠিন আমার মতন। মানুষজন খুবই পছন্দ করে। সবাইকে দেখে সত্যিই খুব আনন্দ পেয়েছে। বাড়িতে সকাল থেকে সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকে, একটু গল্প গুজব করতে বেশি ভালোবাসে। তাই মানুষজন বাড়িতে আসলে জেঠি খুব আনন্দ পায়।
আসলে কভিড এর পর থেকে জেঠি র শরীর খুবই খারাপ। কোরোনার সময় এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল, জেঠি হয়তো বাঁচতোই না। বলা যেতে পারে জেঠিনের এই এক নতুন জন্ম।
আমরা গল্প করতে থাকলাম। আর মা ওদিকে তাড়াহুড়ো করে সবাইকে খেতে দিয়ে দিল। মা চাইছিল না, এই অসুস্থতার মাঝে অনেক রাত হোক। তাই সকলে তাড়াতাড়ি খেতেও বসে গিয়েছিলাম। বৃষ্টির দিনে সবার সাথে এরকম ভাবে দেখা, একটু বাইরে বেরোনো। আর বৃষ্টির জল গায়ে লাগানো। এ তো আমার খুব পছন্দের বিষয়। মানুষ বৃষ্টি পড়লে বাইরে বার হতে চায় না।। আমি আবার তার উল্টো।
রাতের বেলায় খাওয়া দাওয়া করে বেশি রাত না করে বাড়ি চলে এসেছিলাম তাড়াতাড়ি। বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যেটা সত্যিই অনেক সুন্দর ছিল। আপনাদের সাথে আমার প্রত্যেকটা অনুভূতি শেয়ার করতে পেরে আমারও ভালো লাগলো।
আসলে এত পরিমানে গরম শুরু হয়ে যায় পরিবেশটা একেবারে ভ্যাপসা হয়ে যায় যার কারণে আমরা আফসোস করতে থাকি যদি একটু বৃষ্টি হত তাহলে কতই না হতো আমাদের এখানে আজকে হালকা পরিমাণে বাতাস হয়েছে তবে বৃষ্টির কোন দেখা নেই আশা করি আমরা প্রথম দৃষ্টিটা উপভোগ করতে পারব অসংখ্য ধন্যবাদ বৃষ্টির দিনে আপনার মনের অনুভূতি আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।